২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আজ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের অবশিষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ চললেও অসমাপ্ত থাকায় তা আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
আজকের শুনানিতে সাক্ষ্যগ্রহণের শুরুতেই নাহিদ ইসলাম তার অবশিষ্ট বক্তব্য প্রদান করবেন। এরপর তাকে জেরা করবেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো: আমির হোসেন।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৮তম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে, যেখানে ৪৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। গত ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়। গতকালও তাকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, নাহিদ ইসলামের জবানবন্দির পরই সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হবে।
এর আগে, ২ সেপ্টেম্বর মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সাক্ষ্য দেন। তিনি শেখ হাসিনা ও কামালের নির্দেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে স্বীকার করে ক্ষমা চান এবং ট্রাইব্যুনালের সামনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন।
১ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে ছয়জন চিকিৎসক, সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দেন, যাদের জবানবন্দিতে গত বছরের আন্দোলনে দেশজুড়ে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা উঠে আসে। শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা রয়েছে, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মামলায় সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছেন ৮১ জন। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।