ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে করা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি মো: আমিনুল ইসলাম রাজু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তিনি মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদকে (৩৭) হত্যাকাণ্ডের পর পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করার কথা স্বীকার করেছেন।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি স্বেচ্ছায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী জবানবন্দী দিতে সম্মত হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল হক তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন। জবানবন্দী শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে বলা হয়, সন্দিগ্ধ আসামি আমিনুল ইসলাম রাজুকে গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুর-১১ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে, হত্যাকাণ্ডের পর এজাহারনামীয় আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর হোসেনকে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যেতে সহযোগিতা করেন। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং প্রযুক্তিগত তথ্যেও বিষয়টি উঠে এসেছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে ২৪ ডিসেম্বর রাতে তাকে গ্রেফতারের পর ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা : এ দিকে হাদি হত্যামামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১২ ডিসেম্বর ফয়সাল করিম মাসুদ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় আসামির মা হাসি বেগম আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানান, ঘটনার দিন ফয়সাল একটি কালো কাঁধের ব্যাগ নিয়ে পশ্চিম আগারগাঁওয়ের একটি বাসায় আসেন। পুলিশ সন্দেহে বাসায় লোকজন উপস্থিত হলে তিনি ব্যাগটি রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেন। পরে তার মায়ের মাধ্যমে ব্যাগটি উদ্ধার করা হয়।
পরে র্যাব-২ গত ১৫ ডিসেম্বর ওই বাসা থেকে একটি কালো রঙের ম্যাগাজিনসহ ছয়টি এবং একটি সিলভার রঙের ম্যাগাজিনসহ পাঁচটি তাজা গুলি উদ্ধার করে।
হত্যাকাণ্ডের পটভূমি : মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর বেলা আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে মতিঝিল মসজিদে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা কার্যক্রম শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে পল্টন থানাধীন বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে থাকা ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীরা শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়।
আহত অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদি হয়ে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পরে ২০ ডিসেম্বর আদালতের আদেশে মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা সংযোজন করা হয়।



