মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে করা নয়টি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। গত ১১ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা এসব অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এই নয়টি মামলা শুনানির দিন বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ধার্য রয়েছে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) মতিঝিল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার সহকারী কর্মকর্তা পুলিশের এএসআই মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৯ নভেম্বর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের বিরুদ্ধে ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পেয়েছি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং অন্য সহযোগীরা মোট ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে এই অর্থ পাচারের সাথে যুক্ত ছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক পিএলসি, মতিঝিল শাখা, ঢাকা থেকে এলসি বা বিক্রয় চুক্তির ব্যবস্থা করেছিল, তবে রফতানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত নিয়ে আসেনি। এভাবে রফতানির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুবাইয়ের আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং-এর মাধ্যমে চলে যেতো সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউকে, ইউএসএ, আয়ারল্যান্ড ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং-এর মালিকানা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এ এস এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে নিবন্ধিত।
এই প্রক্রিয়ায় ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৯৬, ৯৬, ৬৮০ মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা) রফতানি দেখানো হয়েছে, কিন্তু রফতানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি, অর্থাৎ রফতানিমূল্য প্রত্যাবাসন না করে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সিআইডি গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে মতিঝিল থানায় ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করে। ইতোমধ্যে এসব মামলা সংক্রান্তে আদালতের আদেশে আসামিদের বিভিন্ন সম্পদ ক্রোক করেছে সিআইডি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা জেলার দোহার থানার দু’ হাজার শতাংশ জমি ও তদস্থিত স্থাপনাগুলো, গুলশানের ‘দ্য এনভয়’ বিল্ডিংয়ের ছয় হাজার ১৮৯.৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশান আবাসিক এলাকার ৬৮/এ রাস্তার, ৩১ নম্বর প্লটে অবস্থিত দু’ হাজার ৭১৩ বর্গফুটের আরো একটি ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট। এছাড়া সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পাশাপাশি তাদের বিদেশ গমনও রোধ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্রোককৃত সম্পত্তির বর্তমান আনুমানিক মূল্য ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা। উল্লিখিত ১৭টি মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তি ও জড়িত মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত শেষে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ মোতাবেক আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের নিমিত্তে সিআইডি প্রধান কর্তৃক অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ওই আসামিদের মধ্যে জেলহাজতে থাকা সালমান এফ রহমানকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার ওয়াসিউর রহমানকে জুলাই ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেফতার করে সিআইডি। ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশে পাচারের ঘটনা উদ্ঘাটনসহ তদন্ত সংক্রান্ত অন্যান্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক দ্রুততম সময়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে দায়েরকৃত ১৭টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের কার্যক্রম শেষ করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। বাসস



