জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী পাঁচ অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সোমবার (১২ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী পাঁচটি অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগগুলোর মধ্যে দু’টি অভিযোগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাকিগুলো আপাতত সবার জন্য প্রকাশ করা হচ্ছে না।
তিনি জানান, প্রথম অভিযোগটি হচ্ছে, শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে উসকানি ও প্ররোচনা দিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে রাজাকারের নাতিপুতি বলে উল্লেখ করেছিলেন। এটা বলার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর তারা মানবতাবিরোধী এসব অপরাধগুলো করে। এই উসকানির দায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ উঠে এসেছে। আর দ্বিতীয় যে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে সেটা হচ্ছে সরাসরি নির্দেশ।
তিনি উল্লেখ করেন, তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার অনেকগুলো টেলিফোন কনভারসেশন জব্দ করেছে। সেখানে তিনি বারবার সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত করেছেন, রাষ্ট্রীয় সকল বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসিসহ মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র নিরীহ আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সরাসরি সেই নির্দেশের প্রমাণপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা হাতে পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে এই দ্বিতীয় অভিযোগটি দাখিল করেছে।
গত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ওই ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এ মামলায় পরে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও (গণ-অভ্যুত্থানের সময় আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন) আসামি করা হয়।
এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় এ পর্যন্ত তিনবার বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দু’মাস বাড়িয়ে আগামী ২৪ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। অবশ্য এর আগেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলা ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের আরো দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম ও খুনের ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অপর মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।