চার দিনের অভিযানে ফেনীর ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত

জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও পৌরসভার সম্মিলিত এই উদ্যেগে শহরে পথচারীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে।

শাহাদাত হোসাইন, ফেনী অফিস

Location :

Feni
উদ্ধার অভিযানে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা
উদ্ধার অভিযানে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা |নয়া দিগন্ত

ফেনী শহরে টানা চার দিন ধরে অব্যাহত উচ্ছেদ অভিযানে ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত হয়েছে। অভিযানে শহরের প্রধান সড়ক ট্রাংক রোড, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক, মহিপাল, কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড, কলেজ রোড, মিজান রোডসহ অলিগলিতে সড়কের উপর অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা দোকানপাট ও ভাসমান হকারদের উচ্ছেদ করা হয়।

জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও পৌরসভার সম্মিলিত এই উদ্যেগে শহরে পথচারীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে শহরের ফুটপাতে অবৈধভাবে দখল করে দোকানপাট গড়ে তোলা হয়। এতে করে পথচারী চলাচলে ভোগান্তির শিকার হন। গত সোমবার থেকে পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান শুরু হয়। ফুটপাত ও ফুটপাতের পার্শ্ব সড়কে বসানো অস্থায়ী দোকান, সাইনবোর্ড ও অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার থেকে অভিযানে যুক্ত হয় জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুনরায় না বসতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

শহর ব্যবসায়ী সমিতির এডহক কমিটির সদস্য ও ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আব্দুর রহীম বলেন, ‘শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজট সমস্যায় পৌরবাসী নাকাল। বছরের পর বছর এ সমস্যা নিয়ে আছে। সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে অভিযান হচ্ছে। উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কাজে আসছে না। কারণ হলো দোকানের সামনে যেসব ফেরিওয়ালারা বসে তাদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয়। এ কারণে প্রশাসন চলে যাওয়ার পর আবার বসে।’ দোকানদারকে জরিমানা করা এর একমাত্র সমাধান বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাইয়ুম সোহাগ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ফেনী শহরের সৃষ্ট যে বিশৃঙ্খলা অর্থাৎ ফুটপাত দখল করে মানুষের যাতায়াতে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। আমরা এখন পুলিশের অভিযান দেখতি পাচ্ছি। এ অভিযানের ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। এজন্য আমরা পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভাকে ধন্যবাদ জানাই।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ওসমান গণি রাসেল বলেন, ‘ফেনীর পুলিশ প্রশাসন, পৌর প্রশাসনের সমন্বয়ে যানজট নিরসনে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বিশেষ করে গত তিন দিন ফেনীর পুলিশ সুপার, পৌর প্রশাসক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শহরে যত্রতত্র পার্কিং, অবৈধ উচ্ছেদ এসব বিষয় যে উদ্যোগ নিয়েছেন ফেনীবাসী সে উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। গত তিন দিন ফেনীর মানুষ দেখতে পাচ্ছে এতে অনেক বেশি স্বস্তি ফিরেছে।’ পাশাপাশি এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে। সকালে অভিযান হওয়ার পর বিকেলে বসে এটা যেন আর না হয় সেদিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

একাধিক পথচারী জানান, শহর জঞ্ঝাটমুক্ত ও পথচারীদের নির্বিঘ্ন চলাচলে এ অভিযান চলমান রাখতে হবে। পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় অতীতের মতো যেন এ পরিবেশ বিঘ্নিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

পথচারী মোহাম্মদ সুরাইম বলেন, ‘যে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তা যেন অব্যাহত থাকে। সবসময় এটা হয়তো করা যাবে না। আমাদের অনুরোধ প্রয়োজনে এটার জন্য যেন আলাদা উইং করা হয়।’

পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সোমবার থেকে আমরা শুরু করেছি। রাস্তা অবৈধ দখল মুক্ত করার জন্য আমরা এখানে জেলা প্রশাসক থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আছেন, বিপুল সংখ্যক পুলিশ ছাড়াও পৌরসভার প্রশাসকসহ লোকজন আছে, আমরা এখানে চেষ্টা করে যাচ্ছি যে যাতে আমাদের রাস্তাঘাট হকারমুক্ত করা যায়। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা লক্ষ্য করছেন যে রাস্তার উপর গ্যাসের অনেক লাইন আছে, অনেকগুলো হোটেল রাস্তার উপর রান্নাবান্না করতেছে। আমরা যেসমস্ত অবৈধ জায়গাগুলো দখল করে আছে সে জায়গাগুলো দখলমুক্ত করতেও আমরা একযোগে কাজ করে যাচ্ছি।’

পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, ‘উচ্ছেদ কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে নাগরিকদেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে। এ প্রত্যয়টা যদি সবার থাকে এবং সবাই যদি আন্তরিক হই তাহলে সম্ভব হবে।’