সাবেক মন্ত্রী মোশারফের এপিএস ফুয়াদের সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তের ভিত্তিতে ফরিদপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত সম্পত্তি ক্রোক করার এ আদেশ দেন।

হারুন আনসারী, ফরিদপুর

Location :

Faridpur
সাবেক মন্ত্রী মোশারফের এপিএস ফুয়াদ
সাবেক মন্ত্রী মোশারফের এপিএস ফুয়াদ |ফাইল ছবি

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেনের এপিএস এ এইচ এম ফুয়াদের পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮৬ টাকার সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তের ভিত্তিতে ফরিদপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত সম্পত্তি ক্রোক করার এ আদেশ দেন।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে আদালত কবে এ আদেশ দিয়েছেন তা উল্লেখ নেই এতে।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বিলনালিয়া গ্রামের বাসিন্দা এ এইচ এম ফুয়াদ (৫৫) জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। ফরিদপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালে তার এপিএস ছিলেন তিনি।

জানা যায়, ২০২০ সালের ২৬ জুন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, তার ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল ও সাবেক এপিএস এ এইচ এম ফুয়াদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় দু’ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিংয়ের মামলা দায়ের করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ।

পরে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক বিচিত্রা রানী বিশ্বাস ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ধারা ৪(২)-এ একটি মামলা রুজু করেন। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করছে।

সিআইডি জানায়, ফরিদপুর শহরে আধিপত্য বিস্তারের জন্য ‘হেলমেট বাহিনী’ তৈরি করে ওই বাহিনীর সাহায্যে বিভিন্ন সরকারি দফতর যেমন- এলজিইডি, স্বাস্থ্য প্রকৌশলী, শিক্ষা অধিদফতর, গণপূর্ত বিভাগ, বিএডিসি, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, রোডস অ্যান্ড হাইওয়েসহ অন্য দফতরগুলোর টেন্ডারগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন আসামিরা। এসব টেন্ডার হতে বিভিন্ন হারে কমিশন গ্রহণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পত্তি অর্জন করেন তারা। টেন্ডারবাজি ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তিদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেও অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে ফুয়াদসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে।

সিআইডি থেকে জানানো হয়, মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান চলাকালীন ফুয়াদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের গুরুতর তথ্য পাওয়া যায়। তার ক্রোক করা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে একটি ফ্ল্যাট ও ৩৯ শতাংশ জমি।

তদন্তে জানা গেছে, ফুয়াদ নিজের নামে ছাড়াও প্রথম স্ত্রী ফারজানা ফোয়াদ, দ্বিতীয় স্ত্রী তাছলিমা আক্তার বাবলী ও দ্বিতীয় পক্ষের শাশুড়ি নাদিরা বেগমসহ বিভিন্ন আত্মীয়ের নামে-বেনামে জমি ক্রয় করেন। এসব সম্পত্তির দখল রয়েছে তার ভাই ও ভাগিনাদের হাতে। পাশাপাশি বেনামে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে পরিবহন খাতেও বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে, ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর দু’ হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে ফুয়াদকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম। পরদিন তাকে ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকায় বাসশ্রমিক ছোটন বিশ্বাস হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়।

ওই সময় পুলিশ জানায়, মানিলন্ডারিং মামলাসহ ফুয়াদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।

২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ ফুয়াদকে জামিন দেন। সেই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।

এ বিষয়ে জানতে খোঁজ নিলে বর্তমানে ফুয়াদ জামিনে রয়েছেন বলে তার একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।