কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার হুগাম গ্রামে ঝিলাম নদীতে বিপন্নপ্রায় প্রাণী ইউরেশিয়ান উদবিড়ালেরে দেখা মিলেছে।
প্রাণীটি ২০২৩ সাল থেকে ভারতের বন্যপ্রাণী কর্মকর্তারা দু’টি জায়গায় তিনবার দেখতে পান।
আকস্মিক এ ঘটনায় পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এটি হিমালয়ের জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুতন্ত্রের আশার বার্তা বলে মত দিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
মাধ্যমিক শিক্ষার্থী নাসির আমিন ভাট বলেন, গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় নদীর তীরে পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বন্ধু আদিল চিৎকার করে বলেন, ফিরে আসো। পানিতে কিছু একটা আছে। আমি কিছু বুঝতে পারিনি। এসময় স্মার্টফোন বের করে ভিডিও ধারণ করি।
নয় সেকেন্ডের ঝাপসা ভিডিওতে দেখা যায়, লোমে ঢাকা একটি প্রাণী নদী থেকে উঠে তীরবর্তী ঝোপের আড়ালে মিলিয়ে যাচ্ছে। প্রাণীটি আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)-এর প্রায় বিপন্ন প্রাণী হিসাবে ধরা হয়।
আবাসস্থলের উন্নতি
ভারতের বন্যপ্রাণী জীববিজ্ঞানী নিসর্গ প্রকাশ বলেন, এটি পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত। একসময় হিমালয়ের পাদদেশ, গঙ্গার সমতল ভূমি, উত্তর পূর্বাঞ্চলে এদের আবাসস্থল ছিল।

গত বছর নভেম্বরে আইইউসিএন-এর একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, কাশ্মীরি ভাষায় ‘ভদ্দুর’ নামে পরিচিত ইউরেশিয়ান উদবিড়াল লিদ্দার ও ঝিলম উপত্যকার বিভিন্ন অংশে দেখা গেছে।
শের-ই-কাশ্মীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (SKUAST-K) বন্যপ্রাণী বিজ্ঞানী খুরশীদ আহমেদ বলেন, আবাসস্থল ধ্বংস, মানুষের হস্তক্ষেপ ও পরিবেশ দূষণের কারণে এরা ঝুঁকিপূর্ণ ও নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
তিনি জানান, ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট কিশানগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নদী তীরে ৮ হাজার ৫০০ ফুট উঁচুতে দু‘টি উদবিড়ালের দেখা মিলে। তবে মাছ ধরা ও আধাসামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে আর দেখা যায়নি।
আতঙ্কের বিস্তার
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে হুগাম এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে কুমির থাকার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় বন্যপ্রাণী বিভাগ ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে নিশ্চিত করেন এটি একটি ইউরেশিয়ান উদবিড়াল। স্থানীয়দের আতঙ্ক দূর করতে তারা নদীতে গোসলও করেন।

স্থানীয় গৃহিণী মুনিরা বানু বলেন, উদবিড়াল গুহা থেকে বের হলে কাকেরা চিৎকার করে। এখন ভয়ে নদীতে কাপড় ধুতেও যাই না।
কাশ্মীরি কৃষক ওয়াসিম আহমদ বলেন, বাগ-ই-মেহতাব অঞ্চলের এক সময়কার শিকারিরা উদবিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে বর্তমানে ভারতের কঠোর পশু-সংরক্ষণ আইন কার্যকর হওয়ায় তারা সেই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রচলিত ছিল উদবিড়াল নাকি শিশুদের চামড়া তুলে খেয়ে ফেলে। বড় হয়ে বুঝেছি—এসবের মাধ্যমে শিশুদের নদী থেকে দূরে রাখা হতো। উদবিড়াল সাধারণত খুব ভোরে, সন্ধ্যায় এবং রাতে বের হয়। মাছ, ইল এবং জলচর পাখি এদের শিকার।

নাসির আমিন ভাট
বন্যপ্রাণী জীববিজ্ঞানী নিসর্গ প্রকাশ বলেন, ভয় নয়, কৌতূহল নিয়ে উদবিড়ালের দিকে তাকানো উচিত। ওদের মাছ ধরা, সাঁতার কাটা উপভোগ করা যায়।
বন্যপ্রাণী বিজ্ঞানী আহমদ বলেন, উদবিড়াল ফিরে আসা একটি ভালো সংকেত। এখন প্রয়োজন নতুন আবাসস্থলগুলোকে দূষণ, বর্জ্য, কার্বন নিঃসরণ এবং ভূমি দখল থেকে রক্ষা করা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলে উদবিড়াল সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যাবে।
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা