কল্পনা করুন আপনি বিষাক্ত সাপ খাচ্ছেন। সাথে আছে আছে পোড়ানো বিচ্ছু, পোকার লার্ভা, কাকের ডিম, উইপোকা এমনকি ছাগলের অণ্ডকোষও। আপনার মুখ বাঁকা হয়ে গেছে? বিয়ার গ্রিলসের কিন্তু হবে না। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে বেড়ানো এই মানুষটির কাছে এসব খাবার যেন রোজকার জীবনেরই অংশ।
মানুষ যখন আরামদায়ক বিছানায় ঘুমায় বা গরম চায়ের কাপে চুমুক দেয়, তখন বিয়ার গ্রিলসকে দেখা যায় কখনো বরফশীতল নদীতে ঝাঁপ দিতে, কখনো মরুভূমির উত্তাপে ঘুরে বেড়াতে। তার উদ্দেশ্য শুধু বেঁচে থাকার কৌশল শেখানো। কীভাবে সাপ, ব্যাঙ, পোকা-মাকড় খেয়ে ভয়ংকর বিপৎসংকুল পরিবেশে টিকে থাকতে হয়। গ্রিলস শেখান কীভাবে মরুভূমির চোরাবালিতে আটকে গেলে করতে হবে প্রাণোদ্ধার, কীভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ফিরতে হবে আপন বাসস্থানে।
ব্রিটিশ অভিযাত্রী, লেখক ও টেলিভিশন উপস্থাপক বিয়ার গ্রিলসের পুরো নাম এডওয়ার্ড মাইকেল গ্রিলস। বিশ্ব তাকে চেনে ডিসকভারি চ্যানেলের জনপ্রিয় শো ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড –এর জন্য।
এই শোতে তিনি জঙ্গলের গভীর থেকে তুষারাবৃত পাহাড়, অন্ধকার গুহা থেকে উষর মরুভূমি—সবখানেই জীবন বাজি রেখে দেখিয়েছেন, কীভাবে সীমাহীন বিপদের মধ্যেও বেঁচে থাকা যায়। এসব তার কাছে শুধু কাজ নয়, জীবনেরই অংশ।
ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড সিরিজটি টেলিভিশন জগতে এক অনন্য মাইলফলক। ২০০৬ সালে ডিসকভারি চ্যানেলে প্রথম প্রচারিত হওয়ার পর থেকে এটি বিশ্বজুড়ে দর্শকদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই শোতে বেয়ার গ্রিলসকে বিভিন্ন অজানা ও বিপজ্জনক পরিবেশে বেঁচে থাকার কৌশল প্রদর্শন করতে দেখা যায়। তিনি সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, এমনকি নিজের মূত্র পর্যন্ত খেয়ে বেঁচে থাকার কৌশল দেখিয়েছেন। এছাড়া মরুভূমি, চোরাবালি, জঙ্গল, পাহাড়, সমুদ্র—সবখানেই তার বেঁচে থাকার কৌশল ছিল চমকপ্রদ। শোটি দর্শকদেরকে বেঁচে থাকার নতুন দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করেছে, যা টেলিভিশন শো-এর ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কিন্তু ক্যামেরা বন্ধ হলে কেমন কাটে তাঁর সময়? কী শেখায় প্রকৃতির নির্মম পরীক্ষা? গা-হিম করা অভিজ্ঞতার পর যখন তিনি বাড়ি ফেরেন তখন কী ভাবেন? ভারতীয় ম্যাগাজিন ম্যান’স ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সেইসব গল্প।
প্রশ্ন : বনে সবচেয়ে অদ্ভুত কিন্তু স্বাদ ভালো লেগেছে এমন খাবার কোনটি?
বিয়ার গ্রিলস : আমি বনে অনেক অদ্ভুত খাবার খেয়েছি। ঘাসফড়িং, গ্রিল করা বিচ্ছু, নদীর কাঁচা চিংড়ি, ছাগলের অণ্ডকোষ, কাকের ডিম, লার্ভা, উইপোকা—নামগুলো শুনলে অনেকেই শিউরে ওঠে। এইসব খাবার স্বাদের জন্য নয় বেঁচে থাকার জন্য খেতে হয়।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, সমুদ্রের সি আর্চিন ছিলো একমাত্র খাবার যা সত্যিই সুস্বাদু মনে হয়েছে। এটা একপ্রকার প্রাকৃতিক সুশির মতো যা তাজা আর লবণাক্ত। অবশ্য আমি কাউকে আমার খাবারের মেন্যু অনুসরণ করার পরামর্শ দেব না।
প্রশ্ন : আপনার সেলিব্রিটি অতিথিদের মধ্যে কে জঙ্গলে একা টিকে থাকতে পারতেন? আর কে পারতেন না?
বিয়ার গ্রিলস : সারভাইভাল এমন এক পরীক্ষা যা সবার জন্য সমান। এটি খ্যাতি, ফিটনেস বা শক্তি দেখে কাউকে বিচার করে না। মূল কথা হলো ধৈর্য, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আর চাপের মধ্যে শান্ত থাকার মনোভাব থাকা।
আমি সৌভাগ্যবান যে অসাধারণ অনেক মানুষকে আমি বনে-জঙ্গলে অভিযানে নিয়ে যেতে পেরেছি। যেমন বারাক ওবামা, রজার ফেদেরার, চ্যানিং টাটাম আর জুলিয়া রবার্টসের মতো বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা। প্রত্যেকে সাহস, কৌতূহল, আর নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করার মানসিকতার মতো কিছু না কিছু বিশেষ গুণ নিয়ে এসেছেন।
কিন্তু সত্যিটা হলো, দিনের শেষে তারা সবাই মানুষই। প্রকৃতি এক অদ্ভুত উপায়ে মানুষের বেঁচে থাকার প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে। আর অনেক সময়, শান্ত-শিষ্ট আর চোখে না পড়া মানুষরাই সবচেয়ে চমকপ্রদভাবে টিকে যায়।
প্রশ্ন : শুটিংয়ের সময় কখনো মনে হয়েছে হয়তো সীমা পার করে ফেলেছেন?
বিয়ার গ্রিলস : একটা মুহূর্ত এখনো মনে আছে। আফ্রিকায় ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সে থাকাকালীন প্যারাশুট দুর্ঘটনায় আমর মেরুদণ্ডের তিনটি হাড় চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিনের জন্য মনে হয়েছিল হয়তো আর ঠিকভাবে হাঁটতেই পারব না। সেটা ছিল মৃত্যুর মুখ থেকে থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা।
কিন্তু ওই আঘাত আমার পথ থামিয়ে দেয়নি, বরং একটা নতুন যাত্রার সূচনা করেছিলো।
আঠারো মাস পর আমি দাঁড়িয়েছিলাম এভারেস্টের চূড়ায়। সেই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে বেঁচে থাকা শুধু বন্য পরিবেশে টিকে থাকার ব্যাপার নয়, এটা মানসিকতার ব্যাপার। কষ্টকে কীভাবে উদ্দেশ্যে পরিনত করা যায়, সেই দৃঢ়তা আর সহনশীলতাই মানুষকে টিকিয়ে রাখে।
তারপর থেকে আরও অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। বরফঠাণ্ডা স্রোতে প্রায় ডুবে যাওয়া, হিংস্র জন্তু থেকে পালানো, ভয়ংকর ভূখণ্ড পার হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আমার বিশ্বাসকে আরও শক্ত করেছে যে বেঁচে থাকার মূল চাবিকাঠি হলো প্রস্তুতি, হিসাব কষা ঝুঁকি আর মানসিক দৃঢ়তা। ডিসকভারি অনেক মুহূর্তে আমার সঙ্গে ছিল। এটা সত্যিই আনন্দের যে আমরা এই অ্যাডভেঞ্চারের সত্যিকারের অনুভূতি সারা বিশ্বের সাথে ভাগ করে নিতে পেরেছি।

প্রশ্ন : শহরে থাকলেও সবার জানা উচিত এমন একটি মৌলিক বেঁচে থাকার কৌশল কী?
বিয়ার গ্রিলস : পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ থাকা। আপনি বনেই থাকুন বা ব্যস্ত কোনো রাস্তায়, চারপাশে কী ঘটছে তা অনুধাবন করার ক্ষমতা অনেক বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেয়। এর মানে হলো শান্ত থাকা, চাপের মধ্যে স্পষ্টভাবে ভাবা, আর পরিস্থিতি খারাপ হলে আতঙ্কিত না হওয়া।
বেঁচে থাকার মানে শুধু কাঠ ঘষে আগুন জ্বালানো নয়, এটা আসলে এক ধরনের মানসিকতা। আর সেই মানসিকতা আপনাকে বাঁচাতে পারে আপনি জঙ্গলে পথই হারান বা শহরে জরুরি পরিস্থিতিতে পড়েন সব ক্ষেত্রেই। সজাগ থাকুন, বুদ্ধি খাটান আর নিজের অনুভূতিকে বিশ্বাস করুন।
প্রশ্ন : ধরুন আপনি আটকা পড়েছেন এবং সঙ্গে কোনো সরঞ্জাম নেই। ছুরি, স্মার্টফোন বা ডাক্ট টেপের মধ্যে কেবল একটা জিনিসই নিতে পারবেন। কোনটা নেবেন?
বিয়ার গ্রিলস : সহজ উত্তর—ছুরি। বনে ছুরি একাই শত কাজের কাজি। আশ্রয় বানানো, আগুন ধরানোর উপকরণ তৈরি, খাবার প্রস্তুত করা এটা দিয়ে সবই করা সম্ভব। প্রয়োজনে আত্মরক্ষাতেও কাজে লাগতে পারে। এটা সোজা-সাপ্টা, নির্ভরযোগ্য, আর ব্যাটারি শেষ হওয়ার ভয়ও নেই।
অবশ্য ভুল বুঝবেন না, স্মার্টফোনও জীবন বাঁচাতে পারে যদি সিগন্যাল আর চার্জ থাকে। বিশেষ করে সভ্যতার কাছাকাছি হলে। আর ডাক্ট টেপ? সেটা তো অনেক সময় গেম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করে। সরঞ্জাম মেরামত, জুতা ঠিক করা, এমনকি প্রয়োজনে ক্ষতও বেঁধে রাখা যায় এটা দিয়ে। তবে যদি একটাই সরঞ্জামের ওপর নির্ভর করতে হয় আমি সবসময় ছুরিকেই বেছে নেব।
প্রশ্ন : পোকামাকড় আর কাঁচা মাংস খাওয়ার পর বাড়ি ফিরে আপনার স্বপ্নের খাবার কী?

বিয়ার গ্রিলস : জঙ্গলে দিন কাটানোর পর, যেখানে কখনো পোকা কখনো কাঁচা মাছ—যা পাওয়া যায় তাই খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়, তখন মন শুধু চায় এক বাটি গরম ও ঘরে রান্না করা খাবার। খুব বিলাসী কিছু নয় কিন্তু যেন উষ্ণ আর পেট ভরার মতো খাবার হলে হয়। হয়তো একটা রোস্ট মুরগি বা বড় এক বাটি স্যুপ।
তবে খাবারের চেয়েও বেশি টানে বাড়িতে থাকা, পরিবারের সঙ্গে বসা, স্বাভাবিক জীবনের ছোঁয়া পাওয়ার অনুভূতিটা। প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার লড়াই শেষে এই সাধারণ মুহূর্তগুলোই আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান।
প্রশ্ন : আপনার বেশি ভয় কোন জায়গায়— জঙ্গলে, মরুভূমিতে নাকি পাহাড়ে?
বিয়ার গ্রিলস : আসলে ভয় নয় আমি বরং তিনটিকেই সমান শ্রদ্ধা করতে শিখেছি। প্রতিটি ভূখণ্ডের নিজস্ব পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি আছে। জঙ্গল ঘন আর অনিশ্চিত, মরুভূমি আপনার শরীর থেকে শেষ ফোঁটা শক্তি আর পানি শুষে নেয়, আর পাহাড়ে সামান্য ভুল, উচ্চতার প্রভাব বা হঠাৎ আবহাওয়া বদল মুহূর্তে বিপদ ডেকে আনে।
সবচেয়ে জরুরি হলো কতটা প্রস্তুত আপনি, কত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন আর পরিস্থিতি কঠিন হলে কত শান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ভয় থাকাটা আসলে ভালো। এটা আপনাকে সতর্ক রাখে। কিন্তু প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাই শেষ পর্যন্ত আপনাকে বাঁচিয়ে রাখে।
প্রশ্ন : যতই প্রশিক্ষণ থাকুক না কেন আপনি কোনো প্রাণীর মুখোমুখি হতে চান না?
বিয়ার গ্রিলস : সম্ভবত লবণাক্ত পানির কুমির। ওদের সাথে ঝামেলায় যাওয়া উচিত না। বিশেষ করে যখন আপনি একা আর পানি ঘোলা থাকে। জিততে পারবেন না।
প্রশ্ন : আপনি কি কখনো একদম সাধারণ ছুটি কাটান? কোনো অ্যাডভেঞ্চার নয় শুধু আরাম করার জন্য?

বিয়ার গ্রিলস : হ্যাঁ, কাটাই। যতই দুঃসাহসিক অভিযানে ভালোবাসি না কেন, আমি শান্ত মুহূর্তগুলোকেও খুব গুরুত্ব দিই। বিশেষ করে ছুটির দিনে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো আমার খুব পছন্দের। আমার প্রিয় ছুটিগুলোর মধ্যে কিছু একদম সাধারণ। যেমন সমুদ্রের ধারে সময় কাটানো, ঢেউয়ের সাথে খেলাধুলা করা। যেখানে কোনো ক্যামেরা নেই, বেঁচে থাকার পরীক্ষাও নেই। আছে শুধু শান্তি আর প্রকৃতির সান্নিধ্য।
নিজেকে মাঝে মাঝে বিরতি দেওয়া, নতুন শক্তি সঞ্চয় করা আর জীবনকে উপভোগ করা খুব জরুরি। সবসময় শুধু বেঁচে থাকার মোডে থাকা নয় বরং আমাদের সবারই সময় নিয়ে আবার শক্তি সঞ্চয় করা দরকার।
প্রশ্ন : যদি আপনাকে শুধু রান্নাঘরের জিনিস দিয়ে বাঁচতে হবে বলা হয়, প্রথমে কী নিতেন?
বিয়ার গ্রিলস : রান্নাঘরের ছুরি। বাড়ির সবচেয়ে বহুমুখী জিনিস এটি। কাটাকাটি, কিছু তৈরি, খাবার প্রস্তুত ও প্রয়োজনে আত্মরক্ষাও এটা দিয়ে করা যায়।
বেঁচে থাকার মূল চাবিকাঠি হলো যা আছে তা দিয়ে কাজ চালানো। রান্নাঘরে অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। ফয়েল, দেশলাই, প্লাস্টিক র্যাপ ইত্যাদি। সৃজনশীল হলে সবই কাজে লাগানো যায়। মূলত মানিয়ে নেওয়াই হলো আসল দক্ষতা।

প্রশ্ন : অপ্রত্যাশিত বা মজার কিছু ঘটায় শুট্যিং বন্ধ করতে হয়েছে কি কখনও?
বিয়ার গ্রিলস : হ্যাঁ, কয়েকবার চোট পেয়ে বন্ধ করতে হয়েছে। কানাডিয়ান রকি পর্বতে একবার পাহাড় থেকে ধাক্কা খেয়ে পড়া ধাতব ক্যামেরা কেস আমার পায়ে আঘাত করেছিলো। কয়েক ইঞ্চি এদিক-ওদিক হলে মারাও যেতে পারতাম। ওই চোটে এক মাসের জন্য কাজের বাইরে ছিলাম।
দক্ষিণ মেরুতেও একবার কাঁধ ভেঙেছিলো। তবু বেশিরভাগ সময়ই আমরা ভাগ্যবান ছিলাম। ভালো টিম,দক্ষতা আর ভাগ্যই আমাদেরকে রক্ষা করেছে।
প্রশ্ন : এমন কোন সারভাইবাল মিথ আছে যা আপনি সব সময় শুনে থাকেন কিন্তু আসলে একদমই সত্য নয়?
বিয়ার গ্রিলস : সাপের কামড়ে বিষ চুষে বের করার পুরনো গল্পটাই সবচেয়ে বেশি শোনা যায়। এই ভুল ধারণাটা যেন মরতেই চায় না! এটা শুধু যে কাজে আসে না তা নয়, বরং উল্টো ক্ষতি করতে পারে। বিষ দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারে বা সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
সাপে কামড়ালে আসলে উচিত শান্ত থাকা, যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করা, আর দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া। বনে-জঙ্গলে ভুল তথ্য সাপে কামড়ের মতোই বিপজ্জনক। কী করা উচিত নয় এটা জানা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনই কী করা উচিত সেটা জানাও জরুরি।
প্রশ্ন : আপনি ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড থেকে শুরু করে এত বছর ধরে ডিসকভারি চ্যানেলের সঙ্গে কাজ করছেন। এই দীর্ঘ সম্পর্কের রহস্য কী? আর তাদের সমর্থন আপনার বিকাশে কীভাবে সাহায্য করেছে?
বিয়ার গ্রিলস : এক কথায় বললে এই সম্পর্কের ভিত্তি বিশ্বাস আর অভিন্ন মূল্যবোধ। ডিসকভারি আর আমি উভয়ই অ্যাডভেঞ্চার, প্রকৃতি আর অর্থবহ গল্প বলাতে ভীষণ ভালোবাসি। এই মিলটাই বছরের পর বছর সম্পর্কটাকে মজবুত রেখেছে। যদিও পৃথিবী এগিয়ে গেছে আর মানুষের কনটেন্ট দেখার ধরনও অনেক বদলে গেছে।

ডিসকভারি তখনও আমার পাশে ছিল, যখন সারভাইভাল স্টোরিটেলিং খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। তারা সাহসী ধারণায় ভরসা রেখেছে। আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে নতুন কিছু চেষ্টা করার, সীমা ভাঙার। রজনীকান্ত ও অক্ষয় কুমারের মতো তারকাদের নিয়ে বনে যাওয়া থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অবিস্মরণীয় যাত্রাসহ আমরা এমন সব শো বানিয়েছি যা শুধু বিনোদনই দেয়নি, বরং দর্শকদের অনুপ্রাণিতও করেছে।
প্রশ্ন : ডিসকভারি শুরু থেকেই আপনার যাত্রার অংশ। তাদের সমর্থন কিভাবে আপনাকে বেড়ে উঠতে ও নতুন কিছু চেষ্টা করতে সাহায্য করেছে?
বিয়ার গ্রিলস : আমার ডিসিকভারির সাথে যাত্রা একেবারে প্রথম দিন থেকেই ছিলো একটি সত্যিকারের পার্টনারশিপমূলক। ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড-এর শুরুর দিনগুলো থেকেই তারা দর্শকদের প্রকৃতির গভীরে নিয়ে যাওয়া, বেঁচে থাকার আসল চেহারা দেখানো, আর সেটা কাঁচা ও নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করার আইডিয়ায় বিশ্বাস রেখেছিলো। আমাদের পরষ্পরের প্রতি আস্থা আর সমর্থনই ছিলো পরিবর্তন আনার আসল শক্তি।
আমরা একসঙ্গে মিলে অ্যাডভেঞ্চার গল্প বলার এক নতুন ধারা তৈরি করেছি যা কাঁচা, বাস্তব, আর মানুষের সাথে প্রকৃতিকে সবচেয়ে শক্তিশালীভাবে যুক্ত করে। ডিসকভারি সবসময় আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্বাধীনতা দিয়েছে। হোক তা নতুন ফরম্যাট, অপ্রত্যাশিত লোকেশন কিংবা আরও গভীর গল্প বলার চেষ্টায়। সময়ের সাথে সাথে এই সমর্থন শুধু আমাকে একজন প্রেজেন্টার হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবেও বড় হতে সাহায্য করেছে। আমাকে শিখিয়েছে আরও ভঙ্গুর হতে। আর নিজের হৃদয়ের প্রতি সত্য থাকতে।
সত্যি বলতে, এখনো যেটা আমাকে চালিয়ে নিয়ে যায়, সেটা হলো—যখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ বলে, “ওই এপিসোড আমাকে একটা কঠিন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছে” বা “তুমি আমাকে প্রকৃতির কাছে যেতে অনুপ্রাণিত করেছো।” এটা ভীষণ বিনয়ী করে দেয় আমাকে। আমার এখনো কাজ করার পেছনে প্রভাবটাই আসল কারণ।
ডিসকভারি এ বছর বিশ্বজুড়ে ৪০ বছর এবং ভারতে ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং এখনো করছে এমন এক যাত্রার অংশ হতে পেরে আমি সত্যিই অভিভুত।