ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে : ছোট পদক্ষেপ, বড় পরিবর্তন

পৃথিবীকে একটা নিখুঁত গ্রহে কীভাবে পরিণত করা যায় তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন এমন দু’জন বিশেষজ্ঞের সাথে বিবিসির পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে। তারা হলেন, সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী আশা দে ভোস এবং জীবজিজ্ঞানী নিয়াল ম্যাকক্যান।

মিজানুর রহমান

যেসব কাজ আমাদের গ্রহের উপর প্রভাব কমায়, সেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। গাড়ি চালানোর বদলে যতটা সম্ভব হাঁটা বা সাইকেল চালানো, মাংস কম তবে ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খাওয়া অথবা টাটকা, টেকসই এবং স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা পণ্য কিনতে হবে। যা একইসাথে আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য উপযোগী।

পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলার সময় জীববিজ্ঞানী নিয়াল ম্যাককান এসব কথা বলেন।

পৃথিবীকে একটা নিখুঁত গ্রহে কীভাবে পরিণত করা যায় তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন এমন দু’জন বিশেষজ্ঞের সাথে বিবিসির পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে। তারা হলেন, সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী আশা দে ভোস এবং জীবজিজ্ঞানী নিয়াল ম্যাকক্যান।

মানুষ কীভাবে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করছে এ বিষয়ে তারা তাদের অভিজ্ঞতা, প্রত্যাশা ও পরামর্শ জানিয়েছেন।

আশা বিশ্ববিখ্যাত সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী। তিনি নীল তিমি এবং মহাসাগরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে গবেষণা করেছেন।

নিয়াল একজন জীববিজ্ঞানী, অনুসন্ধানকারী এবং পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণে সমর্থনকারী। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রত্যন্ত অঞ্চলে জীববৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তিনি বিপন্ন প্রজাতি নিয়ে গবেষণার একজন বিশেষজ্ঞ।

জীববিজ্ঞানী নিয়াল বলেন, “আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই আশাবাদী। কারণ আমি তরুণদের সঙ্গে অনেক সময় কাটাই।যারা আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা। ‘গ্রেটা প্রজন্ম’ (Greta Generation) পরিবেশ নিয়ে গভীরভাবে ভাবে এবং গ্রহের দুর্বল তত্ত্বাবধানের জন্য তারা ক্ষমতাবানদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করছে।”

সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী আশা দে ভোস বলেন, “আমি মনে করি আমরা এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি এবং এটা সম্পূর্ণ আমাদের উপর নির্ভর করছে যে আমরা আমাদের সম্মিলিত বুদ্ধিমত্তাকে ভালোর জন্য ব্যবহার করব, পৃথিবীর এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের নিজেদের স্বার্থে।”

ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে : ছোট পদক্ষেপ, বড় পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দর্শকরা কী কী বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারে, সে বিষয়ে এই দুই বিশেষজ্ঞ কিছু ধারণা দেন।

আশা বলেন, “আমাদের সবারই গ্রহটিকে রক্ষা করতে হবে। আমার প্রিয় উপায়টি একটু ব্যতিক্রমী। আমি মানুষকে বলি আমাদের গ্রহের গল্পগুলো শেয়ার করতে, বিশেষ করে আমাদের মহাসাগরের গল্প। প্রায়ই নিষ্ক্রিয়তা বা নেতিবাচক কাজ আসে অজ্ঞতা থেকে। তাই মানুষকে মহাসাগর সম্পর্কে জানালে তারা গ্রহের পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে। শেষ পর্যন্ত, যদি আমাদের গ্রহের ৭০ শতাংশ মহাসাগর হয়, তবে অন্তত ৫০ শতাংশ মানুষকে তো তার জন্য কাজ করা উচিত, তাই না?”

তিনি আরো বলেন, “আমি সমুদ্রে জালে আটকে পড়া কচ্ছপ উদ্ধার করেছি, মহাসাগরের দৈত্য নীল তিমিকে জাহাজের ধাক্কা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেতে দেখেছি, নৌকার পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া প্লাস্টিক, তেল ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি।”

নিয়ালের মতে, তিনি যেসব জায়গায় আগে গিয়েছেন সেখানে ফিরে গেলে তার মনে পড়ে মানুষ পৃথিবীর কী পরিবর্তন এনেছে।

তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত সবাই মনে করতে পারে তাদের শৈশবে তুষারপূর্ণ শীতকালের কথা, কিংবা কয়েক বছর আগেও প্রজাপতি কত বেশি ছিল। কিন্তু এসব পরিবর্তন বছরের পর বছর ধরে ঘটে এবং আমরা সহজেই ভুলে যাই এবং কেবল হারিয়ে গেলে তা টের পাই। হঠাৎ, নাটকীয় পরিবর্তনগুলোই স্মৃতিতে থেকে যায় এবং সত্যিই জোর দিয়ে বোঝায় যে আমরা গ্রহের সঙ্গে কী করেছি এবং এর ফলে আমরা কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি।”

তিনি আরো বলেন, “আমি দুর্ভাগ্যক্রমে দেশে-বিদেশে অনেক নাটকীয় ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু আমার জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল হন্ডুরাসের সেই জঙ্গলে ফিরে যাওয়া। যেখানে আমি পিএইচডি করার সময় টানা চারটি গ্রীষ্ম কাটিয়েছিলাম। আর ফিরে গিয়ে দেখলাম বিশাল অংশ বেআইনি বসতি স্থাপনকারীদের কারণে উজাড় হয়ে গেছে। সেই জঙ্গলই ছিল বেয়ার্ড’স টেপির (আমেরিকান প্রাণী) যেটি নিয়ে আমি গবেষণা করছিলাম। ছয়টি ব্যাঙ প্রজাতির আবাসস্থল, যেগুলো কেবল ওই জঙ্গলে পাওয়া যায়। অথচ প্রায় রাতারাতি, এক ব্যক্তির লোভের কারণে এই অক্ষত জঙ্গলের বিশাল এলাকা হারিয়ে গেল।”

দর্শকরা এখান থেকে কী বার্তা নিয়ে যাবে, সে বিষয়ে নিয়াল বলেন, “ভবিষ্যৎ আমাদের হাতেই। আমাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা আছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্য হারানোর প্রবাহকে বদলে দেওয়ার, আমাদের জীবনযাপনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এবং যেভাবে আমরা পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখি তার মাধ্যমে।

দালাই লামা বলেছেন, ‘আপনি যদি মনে করেন আপনি খুব ছোট, কোনো পার্থক্য আনতে পারবেন না, তবে একবার মশার সঙ্গে ঘুমিয়ে দেখুন।’”

শেষে আশা দে ভোস বলেন, দর্শকদের মনে করিয়ে দিতে চাই “যতক্ষণ পর্যন্ত আশা করার কারণ আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।”