বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি সামিট ২০২৫

পরিবেশ রক্ষায় নয়া মাইলফলক তৈরি হলো বান্দরবানে

নয়া দিগন্ত ডিজিটাল

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জীববৈচিত্র্য রক্ষাকে কেন্দ্র করে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বান্দরবানে-বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি সামিট ২০২৫। পাহাড় বেষ্টিত বান্দরবান হিল ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল কনফারেন্স হল, দুধপুকুরিয়া রিজার্ভ ফরেস্ট ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হলো দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন, যেখানে ৮টি দেশ এবং দেশের ২০টিরও বেশি জেলা থেকে ২০০+ নীতিনির্ধারক, পরিবেশ সংরক্ষণবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষক, গবেষক, উন্নয়নকর্মী ও তরুণ পরিবেশ কর্মীরা একত্রিত হন বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে।

মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, গ্রিন লিড এবং গ্লোবাল ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের যৌথ আয়োজনে ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই সামিটে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আরা রিনি, দেশের শীর্ষস্থানীয় বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান, বন বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান, বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হাসান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. এনায়েত করিম, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স প্রোগ্রামের পরিচালক পলরাজ মোশে সেলভাকুমারসহ নানা শ্রেণি-পেশার অংশগ্রহণকারীরা।

Biodiversity Summit-02

সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরএমএসটিইউ-এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আত্বিয়ার রহমান এবং বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহ সিদ্দিকী।

তাদের উপস্থিতি সামিটের একাডেমিক গুরুত্ব ও জাতীয় পরিসরের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে। সকল বক্তাই ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং এই আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “বান্দরবান শুধু সুন্দর নয়, এটি পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। পাহাড়, নদী, বন, বন্যপ্রাণী ও এখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জ্ঞান-সবকিছুই আমাদের জাতীয় সম্পদ। এগুলো রক্ষায় সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বহুপক্ষীয় অংশীদারিত্বই হতে পারে সবচেয়ে বড় শক্তি।”

Biodiversity Summit-03

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে দেশের অন্যতম পথিকৃৎ ড. রেজা খান তার বক্তব্যে সতর্ক করে বলেন, “জীববৈচিত্র্যের ওপর চাপ ভয়াবহভাবে বাড়ছে। এখনই বিজ্ঞানভিত্তিক, নৈতিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আমরা আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ হারাবো। নীতিনির্ধারক থেকে শিক্ষার্থী-সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”

বিশেষ সেশনে বন বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম দুধপুকুরিয়ায় এক বিশেষ সেশনে বলেন, “সরকারি প্রচেষ্টার সাথে তরুণ সমাজ ও নাগরিক উদ্যোগ যুক্ত হলে বন সংরক্ষণ আরও কার্যকর হবে। প্রকৃতি সংরক্ষণ কাগজে-কলমে নয়, মাঠেই সফল হয়।”

সম্মেলনের অংশ হিসেবে প্রদান করা হয় বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে দীর্ঘ অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন ড. রেজা খান ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মোল্লা রেজাউল করিম। কমিউনিটি উদ্যোগে সংরক্ষণে ভূমিকার জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ‘গ্রিন বাংলা’ দলকে পুরস্কৃত করা হয়। জলাভূমি ও নদী সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া এবং বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন।

Biodiversity Summit-04

সামিটে জলজ বাস্তুতন্ত্র, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, নগর জীববৈচিত্র্য, নীতিগত পরিবর্তন ও তরুণ নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে ছিলো প্লেনারি সেশন, কর্মশালা, প্রদর্শনী এবং নেটওয়ার্কিং আয়োজন। ২য় দিনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বায়োডাইভারসিটি ফিল্ড এক্সপ্লোরেশন ডে’, যেখানে সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি মাঠপর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান দুধপুকুরিয়া রিজার্ভ ফরেস্ট ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এই আয়োজন থেকে 'বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি স্টেটমেন্ট তৈরি করা হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞ ও তরুণদের বায়োডাইভারসিটি রক্ষায় দাবিগুলো সেখানে তুলে আনা হয়েছে।

আয়োজকরা জানান, এই স্টেটমেন্টটি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন অ্যাম্বেসী, দেশী-বিদেশী এনজিওসহ বিভিন্ন প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে এবং দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সাথে আলোচনা ও কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

Biodiversity Summit-05

আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি সামিট ২০২৫ শুধু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম নয়-এটি ভবিষ্যৎ নীতি, গবেষণা, তরুণ নেতৃত্ব এবং আন্তঃসংস্থাগত সহযোগিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। প্রকৃতি রক্ষা আর কোনো বিকল্প না-এটাই টিকে থাকার পূর্বশর্ত।

বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি সামিট ২০২৫ সফলভাবে আয়োজনে সহায়তা করেছে ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ, আরএমএসটিইউ, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, আইডব্লিউএম, সিইজিআইএস, দ্য আর্থ, প্রেপ স্টোর, গর্জন, প্রত্যাশী, ইয়ুথ নেক্সাস, সিজিডি, উই ক্যান কক্স এবং ওএবি ফাউন্ডেশন।