আগুনমুখা নদীর খপ্পরে চালিতাবুনিয়া : বিধ্বস্ত জনপদের আর্তনাদ

বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস করা এই ইউনিয়নটির প্রায় তিনভাগের একভাগ জমি ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

রবিন আহম্মেদ, পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী)

Location :

Patuakhali
আগুনমুখা নদীর খপ্পরে চালিতাবুনিয়া
আগুনমুখা নদীর খপ্পরে চালিতাবুনিয়া |নয়া দিগন্ত

‘কোথায় যাব, কী করব, এখন আল্লাহই ভালো জানেন। জায়গা-জমি তো সবই নদীতে। আর কিছু নাই আমাদের।’ অপলক দৃষ্টিতে আগুনমুখা নদীর দিকে তাকিয়ে এভাবেই বলছিলেন বয়োবৃদ্ধ রেনু বেগম।

গত ১০ বছরে তিনবার এই নদী কেড়ে নিয়েছে তার ভিটেমাটি। যেখানে একদিন ছিল হাসি-আনন্দ, স্বপ্নের বাস্তবতা, আজ সেখানে শুধুই স্মৃতির চিহ্ন। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবারো ভাঙনের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। সব হারিয়ে এখন বাঁধ ঘেঁষে কোনোরকমে আশ্রয় নিয়েছেন, যেখানেও নেই কোনো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।

রেনু বেগমের এই করুণ গল্প শুধু তার একার নয়, এটি উপকূলীয় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চালিতাবুনিয়ার শত শত পরিবারের কষ্টের গল্প। আগুনমুখা নদীর রাক্ষুসে গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের বসতভিটা, জমি-জমা, সম্পদ, এমনকি প্রিয়জনের কবরও। সব হারিয়ে কেউ হয়েছেন নিঃস্ব, কেউ চলে গেছেন অন্যত্র। কেউবা শেষ সম্বলটুকু নিয়ে নদীর তীরে, বেড়িবাঁধের গায়ে কোনোরকমে ঠাঁই নিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও নেই কোনো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। বছর পার হয়, ভাঙন বাড়ে, কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি শুধুই প্রতিশ্রুতি হয়ে থাকে।

চালিতাবুনিয়ার আরেক বাসিন্দা নেছার হাওলাদার বলেন, ‘আমার প্রায় দুই কানি জমি ছিল, সবই এই আগুনমুখার পেটে চলে গেছে। এখন যে একটা ঘর উঠাব, সেই জায়গাটুকুও নেই। একে একে তিনবার বাড়ি পাল্টেছি। পুকুর-ঘের করে মাছ চাষ করলে তাও লবণ পানি ঢুকে তছনছ করে ফেলে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস করা এই ইউনিয়নটির প্রায় তিনভাগের একভাগ জমি ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২০১৪ সাল থেকে এ জনপদে নদীভাঙন শুরু হয়।

একদিকে নদীর ভাঙন, অন্যদিকে দুর্বল বেড়িবাঁধ- এই দু’য়ের মধ্যে চলছে চালিতাবুনিয়ার মানুষের প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ভাঙন কবলিত চালিতাবুনিয়ায় অবিলম্বে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক। নদীর তীর রক্ষার জন্য ব্লক ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদী বা স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হোক।

ক্ষতিগ্রস্তরা চাইছেন, স্থায়ী টেকসই বাঁধ, নদীর তীর রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ এবং তাদের বসবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

চালিতাবুনিয়ার প্যানেল চেয়ারম্যান বিপ্লব হাওলাদার নয়া দিগন্তকে জানান, এই ইউনিয়নের ১,২,৭,৮,৯-এ পাঁচটি ওয়ার্ড ভাঙন কবলিত। তিনি লিখিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছেন। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এ ভাঙ্গন কবলিত চালিতাবুনিয়ার মানুষের সামনে ঢাল হয়ে না এলে এ জনপদ বিলীন হয়ে যাবে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইকবাল হাসান বলেন, ‘ভাঙন কবলিত চালিতাবুনিয়া রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে স্থায়ী ব্লক বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

1 / 3
image
2 / 3
image
3 / 3
image