আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলিনি : নিয়াজ মোরশেদ

৫৯ বছর বয়সে সপ্তমবারের মতো জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়ন হলেন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ। কথা বলেছেন তরুণদের সম্ভাবনা নিয়ে।

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
নয়া দিগন্ত

নিজের শেষ ম্যাচে ফাহাদ রহমানের অপ্রত্যাশিত হার। কক্সবাজারের শাকের উল্লাহর কাছে এ হারে আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমানের জাতীয় দাবায় শিরোপা জেতার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বিপরীতে ফিদে মাস্টার সুব্রত বিশ্বাসের বিপক্ষে জয় নিয়াজ মোর্শেদের। এতেই ছয় বছর পর ফের জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশের প্রথম এ গ্র্যান্ডমাস্টারের। সপ্তমবারের মতো এ জাতীয় দাবায় শ্রেষ্ঠত্ব গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজের। যা নিশ্চিতভাবেই আগামী দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলে ঠাঁই করে দিচ্ছে এ মুহূর্তে দেশের দাবায় সক্রিয় নিয়াজকে।

১৯৭৯ সালে ১২ বছর ১১ মাসে জাতীয় দাবায় প্রথম চ্যাম্পিয়ন। এবার সেই শিরোপা ফিরে পেলেন ৫৯ বয়সে। আবার দেশ সেরা হওয়ার পর নিয়াজ বলেন, ‘আমি কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলিনি। চার-পাঁচ এ থাকাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু সপ্তম রাউন্ডের পর যখন আমার পয়েন্ট ছয় হলো তখন মনে হলো আমার পক্ষে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব। এরপর আমি সিরিয়াস হই। তাতেই সাফল্য।’

বাংলাদেশের দাবা থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। দুনিয়া থেকে চলে গেছেন গত বছর। মায়ের মৃত্যুর পর আর দাবা খেলেন না গ্র্যান্ডমাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিব। চাকরি নিয়ে মহাব্যস্ত গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, বড্ড অনিয়মিত দাবায়। স্ত্রীকে সময় দিয়ে ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব। ফলে দেশে সক্রিয় গ্র্যান্ডমাস্টার বলতে নিয়াজই। অবশ্য তিনিও সিরিয়াসলি খেলেন না দাবায়।

নিয়াজ বলেন, ‘আমার কি এখন সেভাবে দাবা খেলার বয়স আছে। ঠিক মতো তো খেলিই না। কয়েক বছর ধরে জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে আমার লক্ষ্যই থাকে সেরা পাঁচ এ থাকা। যাতে দাবা অলিম্পিয়াডে কোয়ালিফাই করতে পারি। কোয়ালিফাইও করি। এবারো আমি চার-পাঁচ এ থাকার জন্যই খেলা শুরু করি।’

চার গ্র্যান্ডমাস্টারের অনুপস্থিতি কি এবার শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন সহজ করে দিয়েছে? প্রশ্নে নিয়াজের জবাব, ‘আমি যাদের সাথে এবার লড়াই করেছি এরা কিন্তু ভালো প্রতিপক্ষ। ফাহাদ রহমান ও মনন রেজা নীড় বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।’

২০১২ সালের বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল, হয়েছিল ৩৩ তম। সেবার বাংলাদেশ দলে পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের উপস্থিতি ছিল। এবার বাংলাদেশ দলে শুধুমাত্র একজন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ নিজেই।

নিয়াজ বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চটা দেয়ারই চেষ্টা করব। লক্ষ্য থাকবে সেরা ৪০-এ থাকা।’

এরপর তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘আমরা ২০১২ সালের দাবা অলিম্পিয়াডে ৩৩ তম হয়েছি। পজিশন ভালো ছিল দলের। তবে পারফরম্যান্স কিন্তু ভালো ছিল না।’

চ্যাম্পিয়ন হলেও এখন নিয়াজের রেটিং ভালো নয়। ২২১৬। অথচ ১৯৯১ সালে তার সেরা রেটিং ছিল ২৫৩০। তবে এবারের জাতীয় দাবার শিরোপা নিয়াজকে আরো ভালো করতে উৎসাহিত করবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেখুন আমার বয়স এবং শরীর এখন সেভাবে দাবা খেলতে সায় দেয় না। এরপরও এ ট্রফি আমাকে দাবায় আরো মনোযোগী হতে প্রেরণা যোগাবে।’

অলিম্পিয়াডের জন্য বিদেশী কোচ আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন। তবে এ স্বল্প সময়ের জন্য বিদেশী কোচ আনাকে তেমন ইতিবাচক মনে করছেন না নিয়াজ। তার মতে, ‘এ অল্প সময়ের জন্য বিদেশী কোচ এনে তেমন কোনো লাভই হয় না। আনতে হবে দীর্ঘ সময়ের জন্য। বিদেশী কোচ আনলে উন্নতির হার হলো ২০ শতাংশ। বাকিটা নির্ভর করে কিন্তু টুর্নামেন্টের মান এবং খেলোয়াড়ের কোয়ালিটির উপর।’

অনেক দিন ধরেই নতুন কোনো গ্র্যান্ডমাস্টার পাচ্ছে না বাংলাদেশ। একটি নর্ম নিয়ে বসে আছেন ফাহাদ রহমান। তার পেছনে আছেন আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড়, তাহসিন তাজওয়ার জিয়া ও সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ। নিয়াজের মতে, ‘এ দাবাড়ুদের মধ্যে ফাহাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে পরবর্তী গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার। তার একটি নর্ম আছে। এর পরেই নীড়। এখন দেখি কেমন করে সাজিদ। তবে এদের তুলনায় বয়সটা একটু বেশিই হয়ে গেছে জিয়ার ছেলে তাহসিন তাজোয়ার জিয়ার।’

উল্লেখ্য নিয়াজ এর আগে ১৯৭৯, ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮২, ২০১২, ২০১৯ সালে জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন।