বসুন্ধরার বিপক্ষে পাওনা না দেয়ার অভিযোগে চুক্তি বাতিল তারিক কাজির

একজন ফুটবলারের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন নীরবতা বহন করা প্রচণ্ড বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি অনিয়মিত ও বিলম্বিত বেতন পরিশোধের মধ্য দিয়ে গিয়েছি।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
তারেক কাজি
তারেক কাজি |ইন্টারনেট

পাওনা আদায়ে টালবাহানার অভিযোগ নতুন কিছু নয় বসুন্ধরা কিংসের নামে। এবার একই অভিযোগ তুলে এই শীর্ষ ক্লাবের সাথে দীর্ঘ ছয় বছরের যাত্রা থামালেন জাতীয় দলের ডিফেন্ডার তারিক কাজী।

গতকাল শুক্রবার নিজের ফেসবুক পেজে তারিক কাজী বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে পাওনা আদায়ে গড়িমসির অভিযোগ তুলেন। একই সাথে ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেন।

ফিনল্যান্ডে বেড়ে ওঠা এই ফুটবলার তার দীর্ঘ পোস্টে বসুন্ধরা কিংস কর্তৃক নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের চিত্র তুলে ধরেন। জানিয়েছেন, অর্থকষ্ট, মানসিক চাপের মাঝে অনেক ধৈর্য্য ধরেও কোনো সুরাহা পাননি তিনি।

তারিক লেখেন, আজ বকেয়া বেতন পরিশোধ না হওয়ার কারণে আইনগতভাবে আমার চুক্তি বাতিল করেছি বসুন্ধরা কিংসের সাথে। একজন ফুটবলারের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন নীরবতা বহন করা প্রচণ্ড বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি অনিয়মিত ও বিলম্বিত বেতন পরিশোধের মধ্য দিয়ে গিয়েছি।

‘যা আমাকে শুধু একজন পেশাদার হিসেবেই নয়, একজন মানুষ হিসেবেও পরীক্ষা করেছে। এটি শুধু আর্থিক কষ্ট ছিল না, এটি ছিল এক মানসিকচাপ, যা প্রকৃত পেশাদাররা নিঃশব্দে বহন করে। তবুও প্রতিদিন আমি একই ভালোবাসা নিয়ে জেগেছি– মাঠে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি, আর অন্তরে লড়েছি এক নীরব যুদ্ধ: ভালোবাসা ও অবিচারের মাঝে।’

এ ডিফেন্ডার বলেন, ‘এই পুরো সময় আমি বেছে নিয়েছি ধৈর্য, পেশাদারিত্ব ও শ্রদ্ধা; এমনকি, যখন পরিস্থিতি আমার সহ্যের সীমা ছুঁয়ে গিয়েছিল। আমি বিশ্বস্ত থেকেছি ক্লাবের প্রতি, সতীর্থদের প্রতি এবং সেই সমর্থকদের প্রতি যারা সবসময় পাশে থেকেছেন। আমার এ সবকিছুই ছিল ভালোবাসার কারণে- ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, দেশের প্রতি ভালোবাসা, আর সেই মানুষগুলোর প্রতি ভালোবাসা যারা স্টেডিয়াম পূর্ণ করেছে এক বুক আশায় ও হৃদয় দিয়ে।’

‘আমার গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই আমার সতীর্থদের, অস্কার ব্রুজন, টিটা ভ্যালেরিউ এবং মারিও গোমেজসহ পুরো টেকনিক্যাল স্টাফকে, যারা নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং সেই সমর্থকদের, যাদের কণ্ঠ আমাকে শক্তি দিয়েছে যখন সবকিছু অনিশ্চিত মনে হয়েছে।’

তারিক তার বিবৃতিতে আরো জানান, এই সমস্যার মধ্যে দিয়ে শুধু তিনিই নন, বাংলাদেশের অনেক পেশাদার ফুটবলারই যাচ্ছেন। ক্লাবগুলো নিয়মিত ফুটবলারদের বেতন পরিশোধ করছে না।

‘আমি খুব ভালো করেই জানি, দেশে এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা আরো কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। পেশাদার খেলোয়াড় যারা এখনো নীরবে কষ্ট পাচ্ছেন। কারণ কিছু ক্লাব নিয়মিতভাবে খেলোয়াড়দের প্রাপ্য বেতন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। তাদের সংগ্রামগুলো হয়তো শোনা যায় না, কিন্তু তাদের অবদানই এই খেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখে।’

‘আমি বাংলাদেশ জাতীয় দলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যখনই আমি লাল-সবুজ জার্সি পরে মাঠে নেমেছি, সেটি আমার কাছে ছিল পবিত্র এক অনুভূতি। সেই মুহূর্তগুলোতে আমি সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি। কারণ বাংলাদেশের হয়ে খেলা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে, ফুটবল তার আসল রূপে এখনো পবিত্র। বাংলাদেশের ফুটবল একটি নতুন অধ্যায়ের প্রাপ্য এমন এক অধ্যায় যেখানে থাকবে স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায্যতা, প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য, যারা এই খেলাটির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে।’

কিংস ছেড়ে নতুন অধ্যায় শুরুর বার্তা দিয়ে তারিক লেখেন, ‘এই বিদায় কোনো রাগ থেকে নয় বরং সত্য, মর্যাদা এবং কৃতজ্ঞতা থেকে। আমি গর্বিত প্রতিটি ঘামের ফোঁটার জন্য, প্রতিটি লড়াইয়ের জন্য, প্রতিটি ট্যাকলের জন্য ও প্রতিটি মুহূর্তের জন্য যখন আমি বসুন্ধরা কিংসের জার্সি পরে মাঠে নেমেছি গত ছয় বছরে।’

‘আমি বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে যাচ্ছি গর্ব নিয়ে, কোনো কষ্ট নিয়ে নয়। পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমার হৃদয় ভরপুর থাকবে সেই বিশেষ মুহূর্তগুলোতে, যা আমি সারাজীবন মনে রাখব! আমার গল্প এখানেই শেষ নয়। এটি কেবল নতুন অধ্যায়ের শুরু।’

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ফিনল্যান্ড থেকে এসে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে নাম লেখান তারিক কাজি। তবে তার আরো আগে থেকে ২০১৯ সাল থেকে খেলে আসছিলেন বসুন্ধরা কিংসের হয়ে। টানা ছয় বছর ছিলেন এই ক্লাবে।