চেষ্টার কমতি রাখেনি বাংলাদেশ, সমর্থকদের হাসিমুখে ঘরে ফেরাতে নিজেদের সবটাই সঁপে দিয়েছিল জাতীয় স্টেডিয়ামে। লড়াই করেছিল একদম শেষ পর্যন্ত। তবে পেরেনি উঠেনি জামাল ভূঁইয়ারা। খুব কাছে গিয়েও হয়েছে স্বপ্নভঙ্গ।
ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে হংকংয়ের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মাঠে নামে বাংলাদেশ। মুহূর্তে মুহূর্তে রঙ বদলানো, তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ এই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৪-৩ গোলে হেরে গেছে স্বাগতিকেরা।
হয়তো হেরে গেছে বাংলাদেশ, তবে মহাকাব্যিক একটা ম্যাচের সাক্ষী হলো জাতীয় স্টেডিয়াম। কি ছিল না নাটকীয়তায় ভরা এই ম্যাচে! পরতে পরতে রোমাঞ্চ, ছিল দাঁতে দাঁত চাপা উত্তেজনা। জামাল-হামজারা জিতে গেলে পূর্ণ হতো ষোলকলা।
শুরুটা ছিল অবশ্য আশাজাগানিয়া। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল স্টেডিয়ামকে উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছিলেন হামজা। উপহার দেন দারুণ একটা মুহূর্ত। ম্যাচের মাত্র ১৩ মিনিটেই করে বসেন গোল, তাতে খেলার শুরুতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
অবশ্য বাংলাদেশ প্রথম আক্রমণটা করেছে নবম মিনিটে। পরপরই রাকিবের ক্রস কর্নারের বিনিময়ে বল বাইরে পাঠান হংকংয়ের একজন। এরপরই হামজা শো, ফ্রি কিক থেকে তার নেয়া শট হংকংয়ের একজনের গায়ে লেগে জড়ায় জালে।
যেন আগের দিন হংকং কোচের করা মন্তব্যের কড়া জবাব দিলেন তিনি। মাঠে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে হামজাকে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল হামজা আপনার দলে থাকলে কোথায় খেলাতেন? উত্তরে অ্যাশলে ওয়েস্টউড বলেছিলেন, ‘তাকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখতেন।’
এদিকে হংকং ৪২তম মিনিটে জালে বল জড়ালেও অফসাইডের কারণে পায়নি গোল। কিন্তু যোগ করা সময়ে জাল আর অক্ষত থাকেনি স্বাগতিকদের।
১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই যখন বাংলাদেশ বিরতিতে যাবার স্বপ্ন বুনছে, তখন হঠাৎ ঘটে যায় অঘটন। যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। হংকং ম্যাচে সমতা এনেছে কর্নার থেকে, গোল করেন এভারটন কামারগো।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা ভালো ছিল না। মাঠে নেমেই গোল হজম করে বসে জামালরা। ব্রাজিলিয়ান রাফেয়েল মেরকিস গোলে লিড নেয় হংকং। গোল খেয়ে একাদশে পরিবর্তন আনেন কাবরেরা। মাঠে নামান সামিত সোম, জামাল ভূঁইয়া ও ফাহমিদুলকে।
তবে আক্রমণভাগ শক্ত করতে গিয়ে ৭৪ মিনিটে আবারো পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেই রাফায়েক মেরকিস পেয়ে যান দ্বিতীয় গোলের দেখা। ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে কাবরেরার শিষ্যরা।
তবে হাল ছাড়েনি হামজা-সামিতরা। লড়াই চালিয়ে যায়।
অবশেষে ম্যাচে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায়, ৮৪তম মিনিটে গোল করেন শেখ মোরছালিন। জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে প্রথমে শট নেন ফাহমিদুল। তবে তা আটকে দেন হংকং গোলরক্ষক।
তবে বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। হাত ফসকালে সুযোগ পেয়ে তা জালে জড়ান শেখ মুরসালিন। স্কোর তখন ৩-২। এরপর ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হলে আরো ৯ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেন রেফারি।
সেই সুযোগ কাজে লাগান সামিত সোম। বাংলাদেশের জার্সিতে প্রথম গোলটা পান তিনি ম্যাচের ৯৮ মিনিটে। মোরছালিনের কর্ণার শট থেকে হেডে গোলটা করেন তিনি। ম্যাচে ফেরে ৩-৩ গোলে সমতা।
সমতাতে থেকেই যখন ম্যাচ শেষের অপেক্ষা, তখন একদম শেষ মুহূর্তে কিক অফ থেকে বল পেয়ে দলের চতুর্থ গোলটা করে ফেলেন রাফায়েল। সেই সাথে পূর্ণ করেন নিজের হ্যাটট্রিক। স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। মাঠেই হতাশায় লুটিয়ে পড়েন হামজা-জামালরা।
এই হারে চলতি বাছাইয়ে এখন পর্যন্ত জয়হীন বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ড্র দিয়ে শুরুর পর সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরেছিল দল। এ নিয়ে তারা বাছাইয়ে পেল টানা দ্বিতীয় হারের তেতো স্বাদ।
তিন ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তলানিতে বাংলাদেশ। বাকি আছে আর তিনটি ম্যাচ। গ্রুপ সেরা হয়ে মূল পর্বে যাওয়ার আশা আপাতত টিকে আছে শুধুই কাগজে-কলমে। বাস্তবতা অনেক কঠিন এখন জামালদের।