বাংলাদেশের চেয়ে মাত্র ৩ ধাপ এগিয়ে নেপাল। ১৮০ এর বিপরীতে ১৮৩। আগে ব্যবধানটা আরো বেশি ছিল। অবশ্য এক সময় বাংলাদেশের পেছনেই ছিল নেপাল। অথচ এই নেপালকেই ২০২০ সালের পর আর হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।
সবশেষ ১৩ নভেম্বর জামাল ভূঁইয়া-হামজা চৌধুরীরা ২-১ গোলে লিড নিয়েও পারেনি জয়ের দেখা পেতে। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে কোয়ালিফাই করার বদলে এখনো জয় শূন্য। গ্রুপের তলানীতে থেকে ১৮ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে শেষ হোম ম্যাচ খেলবে তারা। হয়তো এই ম্যাচই কোচ হাভিয়ার কাবরেরার শেষ ম্যাচ বাংলাদেশের হয়ে। কারণ তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ দলকে কোয়ালিফাই করানোর জন্য, তাতে তিনি ব্যর্থ। দুই ফিফা প্রীতি ম্যাচে নেপালের বিপক্ষেও জেতাতে পারেননি দলকে।
বাফুফের একটি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পরই বাদ দেয়া হতে পারে এই স্প্যানিশ কোচকে। কেননা ব্যর্থতার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।
একটি দলের মূল একাদশই ঠিক করতে পারছেন না তিনি। তবে পোস্টের নিচে আস্থা রেখেই যাচ্ছেন মিতুল মারমার উপর। এই মিতুল মারমাকে দায় দেয়া হচ্ছে নেপালের বিপক্ষে ২ গোল হজমের জন্য।
এর আগে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের বিপক্ষেও তার পারফরম্যান্স ছিল না আশাপ্রদ। অথচ দলে আছেন আরো দুই গোলরক্ষক- মেহেদী হাসান শ্রাবণ ও সুজন হোসেন। সুজন মাত্র এক ম্যাচ খেলেছেন সিনিয়র জাতীয় দলে। নেপালের বিপক্ষে গত সেপ্টেম্বরের ম্যাচে পোস্টকে অক্ষত রেখেছিলেন তিনি। ফলে সেই ম্যাচ ড্র করে আসতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। আর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ম্যাচ খেলা শ্রাবণ এবারের এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে দূর্দান্ত খেলেছেন। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে প্লে-অফ ও গ্রুপ পর্ব মিলে তিন ম্যাচে মাঠে ছিলেন।
কিন্তু শ্রাবণ আর আসেন না কাবরেরার বিবেচনায়। অথচ শুরু দিকে শ্রাবণ যখন নড়বড়ে ছিলেন, মারাত্মক ভুল করতেন মাঠে, তখন শ্রাবণকে নিয়ে কোনো সমালোচনাই সহ্য করতে পারতেন না কোচ। রীতিমতো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতেন। অথচ এখন তিনি খেলাচ্ছেন না শ্রাবণকে। যে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে দূর্দান্ত খেলেই জায়ান আহমেদ জাতীয় দলে স্থান করে নিয়েছেন, সেখানে শ্রাবণকে পাত্তাই দেয়া হচ্ছে না। শ্রাবণও ভিয়েতনামের মাঠে খেলেছিলেন অসাধারণ।
আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বাফুফের সাথে চুক্তি কাবরেরার। মার্চে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। যা হবে সিঙ্গাপুরের মাঠে।
বাফুফে সূত্র মতে, ‘যেহেতু নভেম্বরের পর মার্চে খেলা তাই এই সময়ে আর কাবরেরাকে রেখে লাভ নেই। তাছাড়া সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে যেহেতু নিয়মরক্ষার ম্যাচ, তাই বিকল্প চিন্তা করতেই হবে।’
বাফুফের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সব সুযোগ-সুবিধাই দিয়েছি কাবরেরাকে। হামজা চৌধুরীর মতো ইংলিশ লিগে খেলা প্রবাসী ফুটবলার এনে দেয়া হয়েছে। কানাডা-প্রবাসী শমিত সোম এসেছেন। বিদেশে প্রশিক্ষণ, প্রস্তুতি ম্যাচের আয়োজন সবই করা হয়েছে। এরপরও কাবরেরা পারছেন না দলকে সাফল্য এনে দিতে।’
আরেক কর্মকর্তার মতে, ‘দুনিয়া-জোড়া নিয়মইতো তাই। ব্যর্থ হলে কোচকে বাদ দিতে হবে। এই দায়িত্বটাই থ্যাংকস লেস জব। তাই এখন কাবরেরাকেও বাদ দিতে হবে। বিষয়টি এখন বাফুফে সভাপতি এবং ন্যাশনাল টিমস কমিটির চেয়ার তাবিথ আওয়ালের উপরই নির্ভর করছে।’
যদিও বাফুফে সদস্য এবং ন্যাশনাল টিমস কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ জানান, আমরা ম্যানেজার আমের খানের রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে। কোচ বিষয়ে ম্যানেজার যে রিপোর্ট দেবেন সে মোতাবেকই সিদ্ধান্ত।
সেই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ থেকেই পোস্টের নিচে আস্থার প্রতিদান দিতে পারছেন না মিতুল। এরপরও আবাহনীর এই কিপারকে খেলিয়েই যাচ্ছেন কারবেরা। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর জাতীয় দলে ফেরাটা বন্ধ হয়ে গেছে এই কোচের জন্য। নেপালের বিপক্ষে আক্রমণভাগে গতি বাড়ানোর জন্য নামানো দরকার ছিল ক্ষিপ্রগতির স্ট্রাইকার আল আমিনকে। কোচ তার কথা মনেই করেননি। আক্রমণভাগে বলের যোগান দাতা শেখ মোরসালিনকেও খেলানো হয়নি নেপালের বিপক্ষে। খেলোয়াড়দের পজিশনও বদল করে সমস্যা তৈরি করেছেন কোচ।
নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে দলের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে ইনজুরির জন্য হামজা চৌধুরী মাঠ ছাড়ার পর। বিরতির পরপরই চোটের কথা বলে মাঠ ছাড়ার ইংগিত দিতে থাকেন হামজা। পরে তাকে তুলে নেয়া হয়।
সূত্র মতে, হামজা মাঠে থাকা মানে বাংলাদেশ দলের জন্য এটা যেমন প্রেরণা, তেমনি নেপালের জন্য আতঙ্ক। উচিত ছিল হামজাকে না তুলে তাকে ফরোয়ার্ড লাইনে পাঠিয়ে মাঠেই রাখা। এতে নেপাল সুবিধা করতে পারত না। কিন্তু হামজাকে তুলে কিউবা মিচেলের অভিষেক ঘটিয়ে সবর্নাশই হয়েছে। হামজার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়েই নেপাল চড়াও হয়ে গোল পরিশোধ করে। আর গোল লাইনে দাঁড়িয়েও সেই বল ঠেকাতে পারেননি মিতুল।
জাতীয় দলের সূত্র বলছে, কর্নারের সময় খুব কাছ থেকে ফ্লিক হয়ে আসা বলে গোল হয়েছে। সেই বল মিতুলের হাঁটুতে লেগে জালে গেছে। এই বল ঠেকানোই ছিল মিতুলের কাজ। গোলরক্ষকের দায়িত্ব তো তাই। আসলে মিতুল নার্ভাস ছিলেন। প্রথম গোলের সময়ও তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তাকে বদল করা অন্য গোলরক্ষককে খেলানোটা জরুরি। কিন্তু কোচ কাবরেরা সেই কাজ করছেন না।



