কিংবদন্তিদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন ইয়ামাল

পেশাদার ক্লাব ক্যারিয়ারে বার্সেলোনার হয়ে ইতোমধ্যেই ম্যাচ খেলার সেঞ্চুরি করেছেন ইয়ামাল। ২২ গোল করার পাশাপাশি তার অ্যাসিস্ট ৩৩টি।

ক্রীড়া ডেস্ক
লামিন ইয়ামাল
লামিন ইয়ামাল |সংগৃহীত

সময়টা যখন ছিল কিংবদন্তি পেলে-দিয়াগো ম্যারাডোনার তখন ফুটবল সমর্থকরা হয়তো ভাবতো, না, এরচেয়ে চমৎকার কোনো ফুটবলারের তো আর দেখা মিলবে না। এরপর একবিংশ শতাব্দিতে যখন লিওলেন মেসি-ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ক্রীড়া জগতের এই বিভাগের কিংবদন্তিদের জায়গা দখল করে নিলেন, লোকে বলা শুরু করল আমরা সৌভাগ্যবান ভবিষ্যত প্রজন্ম এর থেকে ভালো ফুটবলার দেখবে কিনা সন্দেহ। এবার তাদেরও ভুল প্রমাণ করতে নতুন কোনো মহাতারকার আর্বিভাব কি ঘটবে? পেলে-ম্যারাডোনা আর মেসি-রোনালদো যুগের পর এবার ফুটবল কি নতুন কাউকে যুগের সেরা হিসেবে বরণ করে নেবে? তাই যদি হয় তবে কে হতে পারে সে?

লামিনে ইয়ামাল। হ্যাঁ, অনেক ফুটবল বোদ্ধাদের মতে আমরা হয়তো পা রাখতে যাচ্ছি বার্সেলোনার স্প্যানিশ এই ফুটবলারের সময়ে। ১৭ বছর বয়সী এই বিস্ময় বালক বল পায়ে মাঠে যেভাবে নিয়মিত ভেলকি দেখিয়ে যাচ্ছেন তাতে এমন ধারণার সাথে দ্বিমত পোষণ করা কঠিনই বটে। মাঠে তার আত্মবিশ্বাস, বল নিয়ন্ত্রণ আর ম্যাচ পড়ার ক্ষমতা দেখে মনে হয়, সে যেন ফুটবল খেলার জন্যই জন্মেছে। ঠিক এই বয়সে কেমন ছিল ফুটবলের কিংবদন্তিরা। ইয়ামালকে নিয়ে যে এতো আলোচনা তা কি অতিরঞ্জিত নাকি আদতেই একজন কিংবদন্তি হওয়ার সব ধরনের প্রতিভাই বিদ্যমান বার্সা উইঙ্গারের মধ্যে।

পরিসংখ্যানের আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে বার্সেলোনা ৩-৩ গোলে ড্র করার পর ইয়ামালকে নিয়ে ইন্টাররের কোচ সিমিওনে ইনজাঘির একটি মন্তব্যই দেখে নেয়া যাক। ‘লামিনে এমন এক প্রতিভা যা ৫০ বছরে একবারই দেখা যায় এবং তাকে কাছ থেকে দেখতে পেরে আমি আসলেই আনন্দিত, মুগ্ধ।’ ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালের প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর চোখ ধাঁধানো এক গোল করেন ইয়ামাল। এছাড়া পুরো ম্যাচেই দারুণ ড্রিবলিং আর পায়ের কারুকাজে ইন্টারের ডিফেন্ডারদের নাজেহাল করে ছাড়েন তিনি। বার্সার হয়ে এই ম্যাচে দ্বিতীয় গোলটি আসে ফেরান তরেসের পা থেকে। আর শেষ গোলটি আসে রাফিনহার দূরপাল্লার দুর্দান্ত এক শটে।

ইয়ামালকে নিয়ে ইন্টারের কোচ ইনজাঘির এমন প্রতিক্রিয়া যে মোটেও অমূলক নয়। পেশাদার ক্লাব ক্যারিয়ারে বার্সেলোনার হয়ে ইতোমধ্যেই ম্যাচ খেলার সেঞ্চুরি করেছেন ইয়ামাল। ২২ গোল করার পাশাপাশি তার অ্যাসিস্ট ৩৩টি। বার্সেলোনার ১২৫ বছরের ইতিহাসেই সেরা খেলোয়াড় মেসি ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত ৯ ম্যাচ খেলে ১ গোল করেছেন। একই বয়সে রোনালদো ১৯ ম্যাচে ৫ গোল করার পাশাপাশি ৪ গোলে সহায়তা করেছেন।

এবার কিংবদন্তিদের কিংবদন্তি পেলে-ম্যারাডোনার দিকে নজর দেয়া যাক। আলবিসেলেস্তা কিংবদন্তি ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে ইয়ামলের বয়সে ৬০ ম্যাচ খেলে ২১ গোল করার পাশাপাশি ১৫ গোলে সহায়তা করেছিলেন। এদিক থেকে বার্সা তারকার সাথে তুলনাযোগ্য কেবল ব্রাজিলের হয়ে তিনবার বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তি পেলে সান্তোসের হয়ে ১৬ বছর বয়সেই ৩৮ ম্যাচে ৪১ গোল করেছিলেন। তবে শিরোপার বিচারে এই ‘গ্রেটদের’ থেকে ঢের এগিয়ে ইয়ামাল। শৈশবের গন্ডি পেরোনোর আগেই তার ট্রফির তালিকায় আছে স্পেনের হয়ে ইউরো এবং বার্সার হয়ে লিগ, কোপা দেল রে ও সুপার কাপ।

যার সাথে ফুটবলে বড় বড় মহাতারকার তুলনা, সে কিন্তু এসব কথায় একেবারেই গা দিচ্ছেন না। সবকিছুর পরেও এই তুলনার কোনো যৌক্তিকতায় না দেখা ইয়ামাল বলেন, ‘আমার মনে হয় না, এই তুলনার কোনো অর্থ আছে, মেসির সাথে তো প্রশ্নই ওঠে না-আমি নিজেকে উপভোগ করব এবং নিজের মতোই খেলে যাব।’

আগামীর ফুটবলবিশ্ব কি ইয়ামালই শাসন করেন কিনা সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে অন্তত বর্তমানের দিকে চোখ রাখলে নির্দ্বিধায় বলা যায় ইয়ামাল হয়ে উঠছে ফুটবলের একজন বড় ‘ট্রেডমার্ক’। ইয়ামালের বাবার একটি চমকপ্রদ কথা দিয়েই শেষটা হোক। মাঠে আমরা ইয়ামাল জাদু দেখছি তা নাকি বার্সা ফুটবলারের মাত্র ১০ ভাগও নয় ! এই ফুটবল ‘ম্যাজিশিয়ানের’ বাবা মনির নাসরাউই বলেন, ‘আমি তোমাদের কথা দিচ্ছি, লামিন যা করছে তার মাত্র ১০ ভাগই আপনারা দেখছেন।’