উড়ছেন নারী ফুটবলাররা। সময়টা বেশ ভালো যাচ্ছে তাদের। দেশকে অসামান্য সব গৌরব এনে দিচ্ছেন, সময়ের সাথে ভারী করছেন অর্জনের পাল্লা। তবে আলোর নিচেও আছে অন্ধকার, হাসি মুখের আড়ালে আছে ভিন্ন গল্প।
যে নারী ফুটবলাররা নিয়ে আসছেন একের পর এক সাফল্য, যাদের বদৌলতে আসছে উৎসবের উপলক্ষ; তারাই নাকি আবার সবচেয়ে অবহেলিত। কোনো পুরস্কার বা বোনাস তো দূর, মিলছে না বেতনও।
টানা দুবার সাফের শিরোপা জিতেছেন, ইতিহাস গড়ে প্রথমবার এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছেন। একইভাবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলও এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার টিকিট নিশ্চিত করেছে।
সোনালি সাফল্যের আড়ালেই কিনা লুকিয়ে আছে তিক্ত বাস্তবতা! মাঠে জয়, ট্রফি, করতালি মিললেও মাঠের বাইরে ভিন্ন আফিদা-সাগরিকাদের জীবনটা। রক্ষকই যেন পরিণত হয়েছে ভক্ষকে!
এত এত সাফল্যের পরও নারী ফুটবলারদের ভাগ্য ফেরেনি। বেতন, বোনাস বা ঘোষিত পুরস্কার তো দূর, ১১টি ম্যাচের ম্যাচ ফি এখনো পাননি খেলোয়াড়েরা! পাননি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পুরস্কারও।
সম্প্রতি দেশের জাতীয় এক দৈনিকে প্রকাশিত খবরে এমন সব ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে আক্ষেপের সুরে নারী ফুটবলাররা বলেই বসেছেন, ‘টাকা যখন দেবেন না, তখন ঘোষণার কী প্রয়োজন ছিল!’
গত বছর চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে ঢাকায় দু’টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ, জুলাইয়ে ভুটানের থিম্পুতে দু’টি প্রীতি ম্যাচ। এ বছর মার্চে আরব আমিরাতে দু’টি, জুনে জর্ডানে দু’টি ও জুলাইয়ে মিয়ানমারে বিপক্ষে খেলে তিনটি ম্যাচ।
সব মিলিয়ে ১১টি ম্যাচের ম্যাচ ফি এখনো পাননি অনেক ফুটবলার। যদিও ম্যাচ ফি আহামরি তেমন কিছু নয়, কেউ মাঠে নামলে পান ১০ হাজার টাকা। ম্যাচ না খেলা খেলোয়াড়দের জন্য বরাদ্দ পাঁচ হাজার টাকা।
শুধু তাই নয় যেই নারী ফুটবলাররা দেশকে টানা দু’বার দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শ্রেষ্ঠ মুকুট সাফ এনে দিয়েছে। যেই ফুটবলাররা দেশকে আনন্দে ভাসিয়েছে। সেই তারাই এবার বঞ্চিত হন গত ঈদুল ফিতরের খুশি থেকে।
চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারদের ঈদ বোনাস তো দূর, আগের মাসের বেতনও দেয়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ফুটবলাররা বেতন না পেলেও বাফুফের স্টাফরা বেতন-বোনাস পেয়েছেন। ফলে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এদিকে সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী দলকে বাফুফে দেড় কোটি টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা করেছিল। সেই পুরস্কারের অর্থ ফেডারেশন কর্তাদেরই দেয়ার কথা। কিন্তু নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এক পয়সাও পাননি কেউ।
শিরোপা জয়ের পর গত ৯ নভেম্বর বাফুফের নতুন কমিটির প্রথম সভায় এ পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি। ফলে খেলোয়াড়দের প্রশ্ন, ‘টাকাই যখন দেবেন না, তখন ঘোষণার কী প্রয়োজন ছিল?’
ফেব্রুয়ারিতে একুশে পদক পেয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সরকারের পক্ষ থেকে তখন দলকে আর্থিক পুরস্কারও দেয়া হয়েছিল। সেই টাকাও এখনো পায়নি।
যা নিয়ে এক খেলোয়াড়ের দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুনেছি, সরকার নারী দলকে চার লাখ টাকা দিয়েছে। হিসাব করে দেখেছি জনপ্রতি ১২ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু এত মাস পরও সেই টাকা মেলেনি। টাকার পরিমাণ বড় বিষয় নয়, না দেয়ার মানসিকতাটাই কষ্টের।’
এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠা দলকে দেশে ফিরতেই রাত ৩টায় হাতিরঝিলে দেয়া হয় সংবর্ধনা। তবে ছিল না কোনো আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ এক খেলোয়াড়ের মন্তব্য, ‘এসব না করে বরং টাকাটা দিতে পারতো।’
নারী ফুটবলে এমন বিপ্লবের সময়েও বড় আক্ষেপের নাম নারীদের ফুটবল লিগ। এখনো এই লিগটা নিয়মিত আয়োজন করে সারতে পারেনি বাফুফে। ফলে টাইগ্রেসদের বড় একটা দল যায় ভুটানের লিগে খেলতে। তবে এখম এই অপেক্ষার অবসান চায় সবাই।