২০১৯ সালে এই দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ৭-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দল। তখন কোচ ছিলেন স্থানীয় গোলাম রাব্বানী ছোটন। এবার সেই কোরিয়ার কাছে ১-৬ গোলে ধারশায়ী লাল সবুজ মেয়েরা। কোচ বৃটিশ পিটার জেমস বাটলার। তাহলে প্রশ্নটা আসছে, গত ছয় বছরে কতোটা উন্নতি হলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯/২০ নারী দলের।
উত্তর, এবার তারা প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত হয়েছে। আগে যেখানে ১২ ম্যাচে ২ জয়, এবার ৩ খেলায় ২টিতে বিজয়ের হাসি। তাহলে কেন কোরিয়ার কাছে ৬ গোল হজম।
জবাব, কোচ পিটার বাটলারের ভুল কৌশল প্রয়োগ। কোরিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে হাই লাইন ডিফেন্স খেলতে গিয়েই এই দশা। যা লাল-সবুজদের নারী ফুটবলকে যেন নিয়ে গেছে পুরানো হতাশার যুগে। অবশ্য এরপরও রক্ষা। কারণ, সেরা তিন রানার্সআপ হয়ে ফাইনাল রাউন্ডে ওঠার লড়াইয়ে থাকা অন্য দলগুলোর মধ্যে ইরান, ০-১১ গোলে জাপানের কাছে, লেবানন ০-৮ গোলে চীনের কাছে এবং নেপাল ০-১১ গোলে উত্তর কোরিয়ার কাছে হেরেছে। ফলে কোরিয়ার কাছে ৬ গোল খেলেও ৬ পয়েন্ট ও +৫ গোল পার্থক্য নিয়ে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে বাংলাদেশ। আগামী বছর ১-১৮ এপ্রিল থাইল্যান্ডে হবে এই চূড়ান্ত পর্ব।
বাংলাদেশ নারী ফুটবলে এখন বসন্তের সুবাতাস বইছে। জুন-জুলাইতে মিয়ানমারের মাটিতে এশিয়ান নারী ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে ওঠার ছাড়পত্র পাওয়া। এরপরই অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের সব ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। পুরুষ ফুটবলে হামজা চৌধুরীর আগমন দেশের ফুটবলের পালে নতুন হওয়া লাগিয়েছে। সেখানে এই সুসময়ে নিজেদের জালে হাফ ডজনবার বল কুড়াতে যাওয়াটা বেমানান। আর এটা হয়েছে কোচের হাই লাইন ডিফেন্স কৌশলের কারণে।
বাংলাদেশ দলের এই কৌশলের কারণেই এবারের অনূর্ধ্ব-২০ সাফে শ্রীলঙ্কা, ভুটান এবং নেপাল গোল করেছিল আফঈদা খন্দকার প্রান্তিদের বিপক্ষে। এবারের এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলে বাংলাদেশের বিপক্ষে লাওসের একটি গোলও এই হাই লাইন ডিফেন্সের দুর্বলতাকে পুঁজি করেই। তাই কোচ বাটলারের আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে।
এটা সত্য বাটলারের এই কৌশলে ১৫ মিনিটেই তৃষ্ণা রানীর গোলে এগিয়ে যাওয়া লাল-সবুজদের। এরপরেই যেন মৌচাকে ঠিল ছোঁড়ার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েন স্বর্না রানী মন্ডলরা। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে একের পর এক গোলের চান্স তৈরি করে কোরিয়ান মেয়েরা। অফ সাইডে তাদের কয়েকটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯ মিনিটে সমতা আনার পর প্রথমার্ধে স্কোর ১-১ ছিল।
দুইবারের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নরা বিরতির পর আরো সাঁড়াশি আক্রমণ করে। কারণ লাওসের বিপক্ষে মাত্র ১ গোলে জিতে তাদের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছিল। তাই তাদের জয়ের বিকল্প ছিল না। এজন্য ৪৮, ৬০, ৮৭, ৯০ ও ৯৬ মিনিটে আরো ৫ গোল আদায় করে নেয় কোরিয়ানরা। ৮৭ মিনিটের গোলটি অবশ্য পেনাল্টি থেকে। নবীরনের ফাউল থেকে পেনাল্টির সৃষ্টি। হ্যাটট্রিক করেছেন লি হা ইউন ( ১৯, ৮৭ ও ৯০ মি.)। বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগও ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় পড়ে যায়। শেষ ১০ মিনিটে তো দাঁড়াতেই পারছিল না।
তবে কোচের শিক্ষা নেয়া উচিত ছিল লাওসের কাছ থেকে। লাওস ১-৩ গোলে বাংলাদেশের কাছে হেরেও কোরিয়াকে রুখে দিয়েছিল। পুরোপুরি ডিফেন্সিভ খেলে ০-১ গোলে হার। লাল-সবুজ মেয়েরা এই কৌশলে খেললে এতো গোল হজম করতে হতো না। আগের ম্যাচে পূর্ব তিমুরের স্ট্রাইকাররাও হাই লাইন ডিফেন্স ভেদ করে চান্স তৈরি করেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। তাদের ফর্রোয়াডরা অতটা দক্ষ না হওয়ায় সেদিন রক্ষা। তবে রোববার আর ছাড় পায়নি নবীরন, আফঈদারা।
বাংলাদেশের গোলটি অবশ্য সম্মিলিত আক্রমণ থেকে। শান্তি মার্ডির ক্রস বিপক্ষ কিপার ঠিকমতো ঠেকাতে ব্যর্থ হলে তাতে পা লাগিয়ে গোল করেন তৃষ্ণা রানী। আগের ম্যাচে পূর্ব তিমুরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা তৃষ্ণা মোট চার গোল করলেন এই আসরে।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জি গ্রুপে জর্ডান ও উজবেকিস্তান এবং ‘সি’ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া ও চাইনিজ তাইপের খেলা বাকি ছিল। এই দুই গ্রুপে চারটি দলটি চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। ততক্ষণ পর্যন্ত সেরা তিন রানার্সআপ দলের তৃতীয় দল হিসেবে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে বাংলাদেশ।