মামনি চাকমা যেন আরেক ঋতুপর্ণা

দশম শ্রেণীতে পড়েন মামনি চাকমা। বাবা কৃষক। দুই বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে মামনি ছোট। বাফুফের কোচরা এবারের তারুণ্যের উৎসব অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল আসর থেকে বাছাই করেন তাকে।

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
মামনি চাকমা
মামনি চাকমা |নয়া দিগন্ত

গত পরশু ভুটানের সাথে অপ্রত্যাশিত ড্রতে বাংলাদেশ দলের সব আশাই শেষ। এবারো বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের পক্ষে ট্রফি জেতা হলো না ভুটানের মাঠে। এবার যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল দলের পক্ষে সাফ শিরোপা জেতা হচ্ছে না সেই ইঙ্গিত মিলেছিল ভারতের কাছে ২২ আগস্টের কাছে ০-২ গোলে হারে। শেষ যে আশা ছিল সেটাও ইতি ভুটানের সাফে নারী ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম ড্র করে। তবে এই ব্যর্থ মিশনে সন্ধান মিলেছে এক আগামীর তারকা। সাফ টুর্নামেন্টের নিয়মিত ধারাভাষ্যকারতো কয়েকবারই তাকে আগামীর ঋতুপর্ণা বলে উল্লেখ করবেন। তিনি মামনি চাকমা।

বাংলাদেশ সিনিয়র জাতীয় দলের ঋতুপর্ণা চাকমার মতোই তার বাড়ি রাঙ্গামাটি। জেলার কাউখালী উপজেলা থেকে ফুটবলে উঠে এসেছেন মামনি। এবারের সাফই তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ঋতুপর্ণার মতো তিনিও বাম পায়ের শটে গোল করে বিখ্যাত হয়ে যেতে পারতেন। তবে এ ক্ষেত্রে ভাগ্য তার সহায় হয়নি। পরশু তার শট ক্রসবারে লেগে প্রতি হয় হয়েছিল। আগে একটি ম্যাচেও এভাবে হতাশ হয়ে হয় মামনি চাকমাকে।

মামনি চাকমা আসলেই আরেক ঋতুপর্ণা। সিনিয়র সদস্যটির মতোই বাম পায়ের ফুটবলার। প্রচণ্ড জোরে শট নিতে পারেন। কর্নার নেয়ার ক্ষেত্রেও ঋতুর মতোই তার মুনশিয়ানা। নেপালের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে এই মামনি চাকমার কর্নার থেকেই গোল করেছিলেন সৌরভী আকন্দ প্রীতি। আবার নেপালের বিপক্ষে প্রথম পর্বের ম্যাচে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের লিড নেয়া গোলের উৎসও এই রাঙ্গামাটির মেয়ে। তার বাম পায়ের নিখুঁত ক্রসে বক্সে সৃষ্ট জটলা থেকে বল জালে পাঠান থুইনুয়ে মারমা।

গত নারী সাফের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে ঋতুপর্ণা চাকমার দূরপাল্লার শটে দর্শনীয় গোলে বাংলাদেশের শিরোপা জয়। এবার ভুটানের চাংলিমিথান স্টেডিয়ামেও দশরথ স্টেডিয়ামে ঋতুর করা গোলের অনুরূপ গোল পেতে যাচ্ছিলেন মামনি চাকমা। ২০ আগস্ট ভুটানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৬৭ মিনিটে মামনি চাকমার বাম পায়ে দূর থেকে নেয়া শট গোল লাইন অতিক্রম করতে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই তা গোল লাইনের উপর থেকে ক্লিয়ার করেন ভুটানি ডিফেন্ডার। এবারের সাফে মামনি চাকমার তিনটি অ্যাসিস্ট গোলে। আর পোস্ট ও ক্রসবারে লেগে নিজে গোলবঞ্চিত হওয়ার ঘটনা দু’টি।

শুধু দারুণ দারুণ ক্রস বা তীব্র শট নেয়ার জন্যই পরিচিত নন এই মামনি চাকমা। দারুণ স্কিলও তার। বিপক্ষ ডিফেন্স লাইন ভেঙে কয়েকজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকতেও কুশলী তিনি। পরশু এভাবেই দ্বিতীয়ার্ধে ভুটানের বক্সে ঢুকে পড়েন। তবে তার শট ভুটানের গোলরক্ষক রুখে দেয়ায় বিফলে যায় তার এই চেষ্টা।

দশম শ্রেণীতে পড়েন মামনি চাকমা। বাবা কৃষক। দুই বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে মামনি ছোট। বাফুফের কোচরা এবারের তারুণ্যের উৎসব অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল আসর থেকে বাছাই করেন তাকে। ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজ মাঠে তার খেলা দেখেই নোট বুকে ঠাঁই দেয়া। এরপর অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ক্যাম্পে ভালো করেন নিয়মিত হয়ে যান একাদশে। তারুণ্যের উৎসবের আগে ঢাকায় আসা হয়নি। সাফে তিনি যেভাবে থিম্পুর টার্ফের মাঠ মাতিয়েছেন তাতে তার দিকে চোখ পড়েছে আসন্ন লিগে খেলতে যাওয়া ক্লাবগুলোর। একটি পুরনো প্রতিষ্ঠিত ক্লাব এবং একটি নতুন আসতে যাওয়া ক্লাব তাকে দলে নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।