‘ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচ’- মুহূর্তটা এমনিতেই বিশেষ স্মরণীয়। নান্দনিক জোড়া গোলে মুহূর্তটা আরো রঙিন করে তুললেন লিওনেল মেসি। এস্তাদিও মনুমেন্তাল মাতালেন তিনি, বিদায় বেলায় আর্জেন্টিনাকে দিয়েছেন বড় জয় উপহার।
ঘরের মাটিতে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে হয়তো শেষ ম্যাচটাই খেলে ফেললেন লিওনেল মেসি। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে মাঠে নামেন তিনি।
সম্ভাব্য শেষ ম্যাচটায় নিজের রঙে রাঙিয়েছেন মেসি। মাঠে উপস্থিত ৮৫ হাজার সমর্থককে নিরাশ করেননি, তুলে নেন জোড়া গোল। আর্জেন্টিনার জয় ৩-০ গোলে। অন্য গোলটা লাউতারো মার্টিনেজের।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে দেশের মাটিতে মেসির প্রথম ম্যাচটা ছিল ২০ বছর আগে এই স্টেডিয়ামেই, ২০০৫ সালের ৯ অক্টোবর। দু’দশক পর সেই একই স্টেডিয়ামে খেললেন মেসি।
যদিও একই ‘মঞ্চ’, তবে অনুভূতিটা আলাদা। সেবার প্রথম ম্যাচ খেলা মেসি এবার আর্জেন্টিনার জার্সিতে দেশের মাটিতে খেললেন তার শেষ ম্যাচটা। চেনা এই মানুষদের সামনে আর কখনো খেলবেন না তিনি।
মঞ্চটাও প্রস্তুত ছিল, মেসি নিজেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন আগেই। তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরাও এসেছেন মাঠে। চেনা মানুষদের সামনে বিদায় বেলা রাঙাতে চেষ্টার কমতি রাখেননি মেসি।
অথচ বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এই ম্যাচের তেমন গুরুত্ব ছিল না আর্জেন্টিনার কাছে। তবে মেসি যখন জানান, এটাই তার ঘরের মাঠে শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ; তখন ম্যাচটা হয়ে উঠে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ উপলক্ষ।
ম্যাচের শুরু থেকেই অব্যাহত ছিল মেসির চেষ্টা। তবে উদযাপনের উপলক্ষ আসে ৩৯ মিনিটে। হুলিয়ান আলভারেজের বানিয়ে দেয়া পাস থেকে দারুণ এক চিপে জালে বল জড়ান মেসি।
সব মিলিয়ে ৩২৪ দিন পর আর্জেন্টিনার জার্সিতে গোলের দেখা পান। একই সাথে ৭ গোল করে এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে থাকা লুইস দিয়াজের পাশেও বসে যান তিনি।
প্রথমার্ধ্ব আরো কিছু সুযোগ পেলেও গোল করতে পারেনি আলবিসেলেস্তারা। বিরতিতে যায় ১-০ গোলের লিড নিয়েই।
৬৫তম মিনিটে নিকো গনসালেসের উদ্দেশে দারুণ এক থ্রু পাস বাড়ান মেসি। বল ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণেও নেন নিকো গনসালেস; কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি তিনি।
ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে আলভারেজের বদলি হিসেবে নামেন লাউতারো মার্টিনেজ। আর মাঠে নামার ৪ মিনিটের মাথায় গোল করেন ইন্টার মিলানের এই স্ট্রাইকার। নিকোলাস গঞ্জালেজের পাস থেকে গোল করেন তিনি।
৮০ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন মেসি। আলমাদার পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় পেয়ে প্রথম ছোঁয়াতেই বল জালে পাঠান ইন্টার মায়ামি তারকা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে যা মেসির ১১৪তম গোল।
এর মধ্যে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তার গোল হলো ৩৬টি। সেই সাথে ৬১টি অ্যাসিস্টও করেছেন রেকর্ড আটবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। আর এবারের বাছাইপর্বে পেয়ে যান ৮ম গোলের দেখা, তার চেয়ে বেশি গোল নেই আর কারো।
এই ম্যাচে মেসি হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন। ৮৯ মিনিটে রদ্রিগো দি পলের দারুণ পাস থেকে গোল করে মেসি উদযাপনের প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন। তবে অফসাইডের ফাঁদে পড়ে সেই গোল বাতিল হয়ে যায়।
হ্যাটট্রিক না হলেও মেসি মুগ্ধ করেন সবাইকে। বিদায়ী ম্যাচে সমর্থকদের দেন দারুণ উপহার। সমর্থকরাও কম যাননি, সারাক্ষণই এস্তাদিও মনুমেন্তাল মাতিয়ে রেখেছেন মেসি মেসি স্লোগানে।