বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে উন্মাদনার কমতি ছিল না দেশজুড়ে। ফুটবলপ্রেমীরা জেগে উঠেছিলেন নতুন উদ্যমে। হামজা-সামিতদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তারা। তবে অন্তত এবার পূরন হলো না প্রত্যাশা।
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। তবে সফরকারীদের সাথে পেরে উঠেনি টাইগাররা। হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা হেরে গেছে ২-১ গোলে।
এই হারে বড় আক্ষেপের কারণ হতে পারে যোগ করা সময়ে প্রাপ্য পেনাল্টি না পাওয়া। মোহাম্মদ ফাহিম সিঙ্গাপুরের বক্সের ভেতর ফাউলের শিকার হলেও তা এড়িয়ে যায় রেফারির চোখ।
এদিন শুরুতে বল দখলে আধিপত্য দেখালেও সময়ের সাথে নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে বাংলাদেশ। ৯ মিনিটের মুখে বড় পরীক্ষায় পড়তে হয়, জর্ডানের হেডে বল পেয়ে যান সং উই ইয়াং। তবে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি।
১৬ মিনিটে গোলের সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। তবে শাকিল আহাদ তপুর ক্রস নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি রাকিব। তার দূর্বল শট রুখে দেন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক ইজওয়ান মাহবুদের।
এরপর প্রতিপক্ষের ডেরায় বেশ কয়েকবার হানা দিলেও সামিত-ফাহমিদুলরাও উল্লাসে মাতাতে পারেননি। উল্টো ৩১ মিনিটে সিঙ্গাপুরের ইখসান ফান্দি সুযোগ তৈরী করেন। কিন্তু তার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান মিতুল মারমা।
৩৬ মিনিটে একটা ফ্রি কিক পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে হামজা চৌধুরীর নেয়া শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়৷ আর ৩৯ মিনিটে সামিতের দারুণ পাসটাকে কাজে লাগাতে পারেননি ফাহমিদুল।
তবে বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের লং থ্রো প্রতিহত করতে পোস্ট ছেড়ে বাঁ প্রান্তের চলে যান মিতুল। সুযোগ পেয়ে গোল করেন সং উই ইয়াং। হামজা চেষ্টা করেও তা রুখতে পারেনমি।
যোগ করা সময়ে অবশ্য সমতায় ফেরার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। তবে কর্নার থেকে বল পেয়ে তপু বর্মণ হেড করলেও তা প্রতিপক্ষের একজনের গায়ে লেগে গোলবারের বাইরে যায়। ১-০তে পিছিয়ে গেলে বিরতিতে যায় স্বাগতিকেরা।
বিরতির পর ৫৮ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটাও পেয়ে যায় তারা। গোলটা করেন ইখসান ফান্দি। যদিও তাদের প্রথম চেষ্টা প্রতিহত করেন তপু বর্মন। দ্বিতীয় দফায় হামি শেয়াহিনকে প্রতিরোধ করেন মিতুল। কিন্তু এরর বল পেয়ে যান ফান্দি।
২-০ গোলে পিছিয়ে যাবার পর ম্যাচে ফেরার খুব চেষ্টা করে বাংলাদেশ। সুযোগও মেলে, ৬৫ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল পেয়ে যায় স্বাগতিকেরা। হামজা চৌধুরীর লম্বা থ্রো ধরে সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রাকিব হোসেন।
গোল পাবার পর বাংলাদেশ জেগে উঠে আরো। একটা সময় টানা ৪টি কর্ণারও আদায় করে নেয় স্বাগতিকেরা। কিন্তু সেই কর্ণারের কোনোটাই কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭৭ মিনিটে হামজার বাঁকানো ফ্রি কিকও ব্যর্থ হয়।
৭৯তম মিনিটে ইমনের শট সোজা যায় গোলরক্ষকের কাছে। সমতায় ফিরতে মরিয়া বাংলাদেশ ৮২তম মিনিটে সিঙ্গাপুরের রক্ষণে চাপ বাড়াতে থাকে। বাকি সময়েও একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে।
দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে হামজা-সামিতদের আক্রমণ ঠেকাতে রীতিমতো ঘাম ঝরে সফরকারীদের। তবে গোল আসেনি। শেষ মুহূর্তে মোরসালিনের ক্রসে তারিকের হেড গোলকিপারের হাত ছুঁয়ে পোস্টে লেগে ফিরলে শেষ হয় আশা।
এরপরই বাজে শেষের বাঁশি। সমর্থকে ঠাসা গ্যালারিতে শ্মশানের নীরবতা এনে জয়ের উৎসবে মাতে সিঙ্গাপুর। একবুক হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন ভক্ত-সমর্থকেরা।
এই হারের ফলে ২০২৭ এফসি এশিয়ান কাপে খেলা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য। কেননা ‘সি’ গ্রুপের অন্য ম্যাচে হংকংয়ের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে ভারত। তাতে এই গ্রুপে ৪ করে পয়েন্ট হংকং ও সিঙ্গাপুরের। ১ করে পয়েন্ট বাংলাদেশ ও ভারতের।