বাংলাদেশের ফুটবলে সাফল্য-ব্যর্থতার ক্ষেত্র নেপালের মাঠে। এই নেপালের মাঠেই সাফ গেমস (বর্তমান এস এ গেমস) ফুটবলে বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণ জয়। তা ১৯৯৯ সালে দশরথ স্টেডিয়ামেই। আবার ১৯৮৪ সালে এই কাঠমান্ডুতেই সাফ গেমসের ফাইনালে বাংলাদেশের অপ্রত্যাশিত ২-৪ গোলে হার নেপালের কাছে। যেখানে লিগ পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৫-০ গোলে।
২০১৩ সালে সাফ ফুটবলে ব্যর্থ বাংলাদেশ দলের শুরুটা হয়েছিল দশরথে এই নেপালের কাছে হার দিয়েই। দুই দলের সর্বশেষ লড়াইয়েও লাল-সবুজদের ৩-১ এ ধরাশায়ী করা। সেটাও কাঠমান্ডুর দশরথে। বিপরীতে নারী ফুটবলে প্রথম যে শিরোপা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল ফুটবলে তা এই নেপালের মাঠে তাদের হারিয়েই।
নারী সাফে বাংলাদেশের দুই শিরোপা এই নেপালের মাঠে তাদের পরাজিত করেই। এর বাইরে ২০১৮ সাল এবং ২০২১ সালে সাফে বাংলাদেশের নক আউটে যেতে না পারার বাধা হিমালয়ের দেশটি। প্রথমে ঢাকায় তাদের কাছে হেরে। পরেরটি মালদ্বীপের মালেতে ১-১ গোলে ড্র করে। নেপালের মাঠে দুই দলের সর্বশেষ চার ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
এই রেকর্ড নিয়েই শনিবার আবারো নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। দুই ফিফা প্রীতিম্যাচের প্রথম এই ম্যাচ দশরথ স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়।
এই ম্যাচ অক্টোবরে হংকংয়ের বিপক্ষে দুই এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের প্রস্তুতি হিসেবেই। তাই ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া হামজা চৌধুরী বাংলাদেশ দলে খেলার পর থেকে দেশের ফুটবল যে অনন্য উচ্চতায় চলে গেছে তা ধরে রাখতে জয়ের বিকল্প নেই জামাল ভূঁইয়াদের সামনে।
দেশ ছাড়ার আগে যা বলেছিলেন কোচ হাভিয়ার কাবরেরা এবং ও জামাল ভূঁইয়া, শুক্রবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও এই সুর। জিততে চায় দুই ম্যাচেই। তবে বাস্তবে তা কতটা সম্ভব হবে- সেটিই প্রশ্ন। পূর্ণশত্তির দল নিয়েই যেখানে পারা যায় না নেপালিদের সাথে, সেখানে খর্ব শক্তির দল নিয়ে কতটা ভালো করা যাবে।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সর্বশেষ এশিয়ান কাপের ম্যাচে বাংলাদেশ দলে খেলা হামজা এবং শমিত শোম নেই। সেই ম্যাচে খেলা শাকিল আহাদ তপু, শেখ মোরসালিন, আল আমিনরা অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সাথে ভিয়েতনামে। ফলে জাতীয় দলের রিজার্ভ বেঞ্চ এবং আগে বাদ পড়াদের নিয়েই এবারের দল। ফলে এবারের সিনিয়র জাতীয় দলে থাকাদের যেমন এই দুই ম্যাচ জিতে আসাটা একটা চ্যালেঞ্জ, তেমনি কোচ কাবরেরারও চ্যালেঞ্জ এই দল নিয়ে নেপাল জয় করে আসা। পুরো দলকে তিনি পেয়েছেন তিন দিনের জন্য। নেপাল যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দল চারটি ম্যাচ খেলেছিল পুলিশ ও ফর্টিস এফসির বিপক্ষে।
নেপাল জয় এই বিষয়টি মোটেই সহজ নয়। নেপালের মাঠের পাগলাটে দর্শকদের উপস্থিতিতে জিতে আসা বেশ কঠিন। যদিও ২০১৩ সালের এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে লাল-সবুজরা ২-০ গোলে হারিয়েছিল তাদের।
ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়েও এগিয়ে নেপাল। তারা আছে ১৭৬-এ। আর বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৪তে। তাই দুই ম্যাচে জিততে পারলে জামাল ভূঁইয়া-তপু বর্মনদের র্যাংকিং বাড়বে।
কোচ জানান, এই ম্যাচে প্রমাণিত হবে আমাদের অবস্থানটা কোথায়। যোগ করেন, ‘আমরা সর্বশেষ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে যে দল নিয়ে খেলেছিলাম তখন বেশী শক্তিশালী ছিল।’ এখন হামজা-শমিত নেই। বেশ কয়েকজন আছেন অনূর্ধ্ব-২৩ দলে। নেপালের মাঠে খেলাটা বেশ কঠিন। এর পরও অন্য যারা আছেন দলে তাদের নিয়েই জিততে চাই। কোচের আশা, বৃষ্টি যেন না হয় ম্যাচের সময়। তাহলে দারুণ ম্যাচ উপহার দেয়া যাবে।
নিশ্চিত নয় জামাল ভূঁইয়ার খেলা হবে কি না এই ম্যাচে। তবে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক হিসেবেই উপস্থিতি তার।
জামাল জানান, আমি খেলব কি না তা কোচের ব্যাপার। তবে খেলতে না পারলেতো অবশ্যই খারাপ লাগবে। আসলে দলে এখন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এরপর যোগ করেন, আমরা প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছি তিন পয়েন্টের জন্য। আমার মতো অন্য সব ফুটবলারকে জিজ্ঞাসা করুন সবাই জয়ের কথাই বলবে। কারণ এই ম্যাচ দু’টি আমাদের হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের প্রস্তুতি হিসেবেই।
নেপালের অস্ট্রেলিয়ান কোচ ম্যাট রস জানান, বাংলাদেশ শক্তিশালী দল। সেখানে হামজা চৌধুরী থাকুক বা না থাকুক। আমরাও আমাদের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে পাচ্ছি না। এর পরও যারা আছে, তাদের নিয়েই ম্যাচ জয়ে ফোকাস।