সিঙ্গাপুরের কাছে হতাশার হারে ‘এক পেনাল্টির আক্ষেপ’ বাংলাদেশের

তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমরা ২ গোলে পিছিয়ে থেকে যেভাবে লড়াই দেখলাম এটা ভালো লেগেছে। আমি ইম্প্রেসড।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মাঠে বল পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর
মাঠে বল পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর |বিবিসি

দেশের ফুটবলে নতুন জোয়ারের দিনে সমর্থকদের হতাশায় ডুবিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল সিঙ্গাপুর জাতীয় ফুটবল দল। ১৮ হাজারেরও বেশি দর্শকের উপস্থিত ছিল গ্যালারিতে।

এদিন বাংলাদেশের হয়ে মাঠে ছিলেন কানাডা থেকে আসা সামিত সোম, ইংল্যান্ড থেকে এসেই বাংলাদেশ ফুটবলের বড় তারকা হামজা চৌধুরী ও ইতালি থেকে আসা ফাহমিদুল।

বাংলাদেশের এই দলটাকে নিয়ে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর থেকে একটা বাড়তি প্রত্যাশা, আকাঙ্ক্ষা ও আসার সঞ্চার দেখা যাচ্ছিল ফুটবল অঙ্গনে।

বাংলাদেশের ক্রীড়া সমর্থক নাজিফা তাসনিম বিবিসিকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম অন্য দেশ থেকে আসা বাংলাদেশী ফুটবলার আসার পর ভিন্ন কিছু দেখব, কিন্তু তেমন উন্নতি চোখে পড়েনি।’

মাঠে বসেই হামজা চৌধুরী, সামিত সোম ও ফাহমিদুলের পায়ে বল যাওয়ার পর গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস দেখেছেন। নাজিফা বলেন, ‘হামজার খেলাই চোখে পড়ার মতো ছিল, তাকে ঘিরেই দল ছিল।’

তবে সামগ্রিকভাবে তিনি বাংলাদেশের খেলা দেখে হতাশ, ‘একটা আশা নিয়ে এসেছিলাম, এটা পূরণ হয়নি। এমনিতে তো আমরা যারা ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখি আমাদের কাছে বাংলাদেশের ফুটবল আসলে তেমন দর্শনীয় না। তার ওপর এই হার।’

তবে এই ম্যাচেও বাংলাদেশের জয়ের সুযোগ ছিল, বিশেষত ৯০ মিনিট পার হওয়ার পর বাংলাদেশের একটি পেনাল্টির কথা বারবার বলছিলেন ধারাভাষ্যকাররা।

এই পেনাল্টির পর আবার হামজা চৌধুরী সুযোগ পেয়েও সেটা নিশানায় রাখতে পারেননি ৯৬তম মিনিটে।বাংলাদেশের এই না পাওয়া পেনাল্টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে রাকিবকে ফাউল করা হয়েছে বলে মনে করেন অনেক দর্শক।

রেফারি সাড়া দেননি, সিদ্ধান্তে ছিল না পেনাল্টির ইঙ্গিত। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া জানান বাংলাদেশি সমর্থকেরা।

ফেসবুকে একজন লেখেন, ‘এটা ক্লিয়ার পেনাল্টি ছিল। রেফারির সিদ্ধান্ত পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিল।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এভাবে কী করে হয়? ভিএআর- (ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট রেফারি) থাকলে নিশ্চয়ই পেনাল্টি দেয়া হতো।’

ফেসবুকের এক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘পুরো খেলা জুড়ে আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি না পাওয়াটা হতাশাজনক। আন্তর্জাতিক মানের ম্যাচে এমন সিদ্ধান্ত প্রশ্ন তো তুলবেই।’

বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে তবুও সিঙ্গাপুরের রক্ষণ একবারের বেশি ভেদ করতে পারেনি।

খেলার প্রথম ২০ মিনিট বেশ আশাব্যঞ্জক ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। রাকিব হোসেনকে অন্তত ২ বার বল বানিয়ে দিয়েছিলেন শাকিল আহাদ ও ফাহমিদুল ইসলাম। কিন্তু তিনি তখন গোলের সুযোগ নিতে পারেননি।

ম্যাচের ৪৫ তম মিনিটে সিঙ্গাপুরের সং উই ইয়াং গোল করে জাতীয় স্টেডিয়ামে নীরবতা এনে দেন। গোটা স্টেডিয়াম যেহেতু বাংলাদেশের সমর্থনেই ছিল তাই উত্তেজনার পারদ নিচে নামতে শুরু করে প্রথম গোল হজমের পরেই।

বাংলাদেশের গোলকিপার মিতুল মারমা বল ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন সেখান থেকে বল ফাঁকা থাকা ইয়াং এর পা থেকে জালে জড়ায়। হামজা চৌধুরী চেষ্টা করলেও বল ঠেকাতে পারেননি।

সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় গোল এসেছে বেশ চমকের মতো, এক দূর পাল্লার শট থেকে মিতুল মারমা বল ঠেকালেও বল সোজা যায় ইখসান ফান্দির পায়ে, তিনি বল জালে জড়াতে ভুল করেননি। ৬০ মিনিটের আগেই ২ গোল দিয়ে বাংলাদেশের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত করে সিঙ্গাপুর। এরপর হামজার বানানো বল থেকে ৬৭ মিনিটে রাকিব হসেইন ব্যবধান কমান।

সেখান থেকে বাংলাদেশ নতুন স্পৃহা নিয়ে বাংলাদেশ সমতায় ফেরার চেষ্টা করে কিন্তু সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগ ও গোলকিপারের কৃতিত্ব বাংলাদেশ তেমন সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।

বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থক উদয় সিনা বিবিসিকে বলেন, ‘এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয় তিনিও আশা করেননি তবে ডিফেন্স ও আক্রমণের সমন্বয়হীনতা দেখে তিনি আশাহত হয়েছেন। তিনি আলাদা সামিত সোমের প্রশংসা করে বলেন, ‘মাঠে সামিতের উপস্থিতি ভালো লেগেছে।’

মাঝমাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে আক্রমণের ধার তৈরি করতে পেরেছিলেন শমিত সোম। ম্যাচজুড়ে অন্তত পাঁচটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন এই মিডফিল্ডার, যার প্রতিটিই প্রতিপক্ষ রক্ষণের জন্য হুমকির ছিল।

তবে তাঁর বাড়ানো নিখুঁত পাসগুলো কাজে লাগাতে পারেননি ফরোয়ার্ড রাকিব ও ফাহামিদুল। একাধিকবার প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে কাটিয়ে গোলমুখে পৌঁছে গিয়েছিলেন তারা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শটগুলোর মধ্যে ছিল না ধার কিংবা লক্ষ্যভেদ করার মত কোনো নিখুত কারিশমা।

ফলে দলের সমর্থকরা তাই হতাশ। কারণ সুযোগ তৈরি হলেও তা জালের দেখা পায়নি। তবে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন প্রধান তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমরা ২ গোলে পিছিয়ে থেকে যেভাবে লড়াই দেখলাম এটা ভালো লেগেছে। আমি ইম্প্রেসড।’