সমালোচনার মুখে বিশ্বকাপ টিকিটের দাম কমালো ফিফা

‘ফিফার আংশিকভাবে টিকিট নীতিতে পিছু হটা প্রমাণ করে আগামী বছরের টুর্নামেন্টের টিকিটের দাম নির্ধারণে গুরুতর ত্রুটি ছিল।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিটের দাম নিয়ে সমর্থকদের তীব্র সমালোচনার পর নতুন একটি কমদামি টিকিট ক্যাটাগরি ঘোষণা করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা।

এক বিবৃতিতে ফিফা জানায়, তারা ‘সাপোর্টার এন্ট্রি টায়ার’ নামে সীমিত সংখ্যক একটি টিকিট ক্যাটাগরি চালু করেছে, যার দাম ফাইনালসহ ১০৪টি ম্যাচের জন্য নির্ধারিত হয়েছে ৬০ ডলার।

ফিফা বলেছে, এই উদ্যোগটি পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে নিজ নিজ জাতীয় দলকে অনুসরণ করা ভ্রমণকারী সমর্থকদের আরো সহায়তা করার উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে।

ফিফার মতে, ৬০ ডলার (৫১ ইউরো) মূল্যের এই টিকিটগুলো কেবল চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জনকারী দলগুলোর সমর্থকদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং প্রতিটি জাতীয় ফুটবল ফেডারেশন ১০ শতাংশ করে টিকিট পাবে।

ফ্যান গ্রুপ ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ (এফএসই), যারা গত সপ্তাহে টিকিটের দামকে ‘চাঁদাবাজিমূলক’ ও ‘আকাশচুম্বী’ বলে আখ্যা দিয়েছিল, তারা অবশ্য প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে- ফিফার এই প্রস্তাব যথেষ্ট নয়।

এক বিবৃতিতে এফএসই জানায়, ‘ফিফা তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনার ক্ষতিকর প্রভাব স্বীকার করছে। তাদের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এই সংশোধন যথেষ্ট নয়।’

গত সপ্তাহে এফএসই বলেছিল, কাতার ২০২২ বিশ্বকাপের তুলনায় এবার টিকিটের দাম প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।

তারা ২০২৬ সালের টিকিট মূল্য নির্ধারণকে বিশ্বকাপের ঐতিহ্যের প্রতি ‘এক ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে বর্ণনা করে।

তাদের হিসাবে কোনো সমর্থক যদি প্রথম ম্যাচ থেকে ফাইনাল পর্যন্ত নিজের দলকে অনুসরণ করতে চান, তাহলে ন্যূনতম খরচ পড়বে ৬,৯০০ ডলার। একইসাথে তারা স্মরণ করিয়ে দেয়, ২০১৮ সালে প্রকাশিত বিড ডকুমেন্টে বিশ্বকাপ আয়োজকেরা ২১ ডলার থেকে টিকিট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

মঙ্গলবার এফএসই আরো জানায়, ফিফার আংশিকভাবে টিকিট নীতিতে পিছু হটা প্রমাণ করে আগামী বছরের টুর্নামেন্টের টিকিটের দাম নির্ধারণে গুরুতর ত্রুটি ছিল।

‘এই মুহূর্তে আমরা ফিফার ঘোষণাকে বৈশ্বিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখে নেয়া একটি তুষ্ট করার কৌশল ছাড়া আর কিছুই মনে করছি না। এটি প্রমাণ করে যে ফিফার টিকিট নীতি চূড়ান্ত ছিল না, তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এমনকি ফিফার নিজস্ব সদস্য সংস্থাগুলোর সাথেও যথাযথ পরামর্শ করা হয়নি,’ বলেছে এফএসই।

সংস্থাটি আরো জানায়, প্রকাশিত কোটা অনুযায়ী প্রতি ম্যাচে ও প্রতি দলে সর্বোচ্চ কয়েক শ’ সমর্থকই কেবল ৬০ ডলারের টিকিট পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবেন। অধিকাংশ সমর্থককে এখনো আগের যে কোনো টুর্নামেন্টের তুলনায় অনেক বেশি, চাঁদাবাজিমূলক দামে টিকিট কিনতে হবে।

প্রতিবন্ধী সমর্থক বা তাদের সাথে আসা সহযোগিদের জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা না রাখার বিষয়টিও সমালোচনা করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার ৬০ ডলারের টিকিট ঘোষণা করতে গিয়ে ফিফা জানায়, জাতীয় ফেডারেশনগুলোকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, যাতে এই টিকিটগুলো বিশেষভাবে তাদের বিশ্বস্ত সমর্থকদের দেয়া হয়, যারা নিজেদের জাতীয় দলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

ফিফা আরো জানায়, নকআউট পর্বের ম্যাচের টিকিট কিনে কোনো সমর্থক যদি পরে দেখেন তার দল আগেই বিদায় নিয়েছে, তাহলে রিফান্ড প্রক্রিয়ায় তাদের প্রশাসনিক ফি মওকুফ করা হবে। টিকিটের জন্য বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব চাহিদার মধ্যেই এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যে ২ কোটি টিকিটের আবেদন জমা পড়েছে।

সব দামের টিকিটের প্রথম দফার লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৩ জানুয়ারি।