ফুটবল জ্বরে কাঁপছে দেশ, আবেগের মূল্য দিতে পারবেন তো হামজা-জামালরা?

৩৬ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের চারদিকে যেন রীতিমতো জনসমুদ্র। জানা গেছে, সকাল থেকেই ভিড় করতে থাকেন ফুটবল ভক্তরা।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মাঠের অনুশীলনে হামজা-জামালরা
মাঠের অনুশীলনে হামজা-জামালরা |ইন্টারনেট

ফুটবল জ্বরে কাঁপছে দেশ। ফুটবল জোয়ারে ভাসছে দেশ। ফুটবল উন্মাদনায় হাসছে দেশ। মেতে উঠেছে উচ্ছ্বাসে। যেন ফিরে পেয়েছে হারানো যৌবন, জেগে উঠেছে গত দুই যুগের গ্লানি ভুলে।

ফুটবলের একটি ম্যাচকে ঘিরে এতোটা উন্মাদনা, উত্তেজনা, উৎসব আগে কখনো হয়েছিল? টিকিট না পেয়ে ফুটবল ফেডারেশনের ভবনে তালা কী ঝুলেছিল? না খেয়ে, না ঘুমিয়ে টিকিটের জন্য প্রতিবাদ আগে কী হয়েছিল?

হয়ত হয়েছিল, তবে এই প্রজন্ম তা দেখেনি। দেখেনি একটা ফুটবল ম্যাচ কেন্দ্র করে গোটা দেশ থমকে যেতে। দেখেনি চায়ের কাঁপে কাঁপে, টং দোকানের বেঞ্চিতে, পাড়া মহল্লার গলিতে, গ্রামে-গঞ্জে, হাঁট বাজারে ফুটবল উচ্ছ্বাস।

গোটা দেশ যেন আটকে গেছে ফুটবল মোহে, ফুটবলের আবেগে; হয়ে উঠেছে উৎসবের নগরী। গুলিস্তান যেন তার রাজধানী। জাতীয় স্টেডিয়াম পাড়ায় জন-জোয়ার বইছে। ম্যাচ শুরুর সাত থেকে আট ঘণ্টা আগেই কিনা এলাকা লোকারণ্য হয়ে উঠেছে।

কিছুদিন আগেও যা ছিল অবিশ্বাস্য, স্বপ্নসম; তাই সত্যি হয়েছে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে। সত্যি করে তুলেছেন হামজা চৌধুরী, সামিত সোম, ফাহমিদুলরা। দেশের ফুটবলে তাদের অন্তর্ভুক্তি নতুন করে জেগে উঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

সেই স্বপ্ন জয়ের সাক্ষী হতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে গুলিস্তানে। ৩৬ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের চারদিকে যেন রীতিমতো জনসমুদ্র। জানা গেছে, সকাল থেকেই ভিড় করতে থাকেন ফুটবল ভক্তরা।

স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণের অস্থায়ী দোকানগুলোতে জার্সি বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। দর্শকের মাঝে হিড়িক পড়েছে জার্সি কেনার, হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। আর খানিক পরপর উঠছে স্লোগান।

কারো মুখে-মুখে, কারো প্ল্যাকার্ডে লেখা- হামজা- সামিত-ফাহমিদুলের ঠিকানা; পদ্মা মেঘনা যমুনা’। কেউ বলছেন ‘কোটি মানুষের প্রাণের সুর; বাংলার ফুটবল ফিরে আসুক’।

এদিকে দর্শকদের এমন উন্মাদনায় ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ম্যাচ সম্প্রচারকারী টেলিভিশন টি স্পোর্টস। দেশের বিভিন্ন শহরে একাধিক বড় পর্দার ব্যবস্থা করেছে তারা। আবার ব্যক্তি বা সংগঠন কেন্দ্রিক বড় পর্দার ব্যবস্থা হয়েছ অনেক এলাকায়।

জানা গেছে রূপনগর-পল্লবীসহ রাজধানীর ১২টি স্থানে বড় পর্দায় খেলা দেখার উদ্যোগ নিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক।

সৌদি আরবে ২০২৭ সালে বসবে এশিয়ান কাপের ১৯তম আসর। ২৪ দলের সেই প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিতে আজকের ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জয় দিয়ে বাছাইপর্ব শুরু করার স্বপ্ন দেখছে পুরো দেশ।

সেই লক্ষ্যে আজ কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে লড়াই তো আর সহজ হবে না। শঙ্কা থাকলেও আছে সম্ভাবনাও। দেখার বিষয় জামাল-হামজারা কতটা পারেন শঙ্কা দূর করে স্বস্তি ফেরাতে।

যদি পারেন তবেই জিতে যাবে কোটি প্রাণের এই আবেগ। ফুটবল তার হারানো গৌরব, জৌলুস ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে কয়েকধাপ এগিয়ে যাবে। আর যদি না হয়… তাহলে ফের বাড়বে অপেক্ষা।

উল্লেখ্য, ম্যাচ সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর মধ্যকার এই ম্যাচ। তবে স্টেডিয়ামে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাফুফের নির্দেশ বিকেল ৫টার পর স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা যাবে না। তাই আগেভাগেই মাঠে প্রবেশ করছেন দর্শকরা।