অলিম্পিকে যে রেকর্ড মহিউদ্দিনের

খেলোয়াড়রা তেমন কিছু করতে না পারলেও কর্মকর্তা হিসেবে অনন্য রেকর্ড করেছেন উইং কমান্ডার (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টানা ১১টি অলিম্পিক গেমসে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
উইং কমান্ডার (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ
উইং কমান্ডার (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ |ফাইল ছবি

১৮৯৬ সাল থেকে অলিম্পিক গেমসের যাত্রা শুরু। তবে বাংলাদেশের এই গেমসে প্রথম অংশগ্রহণ ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক গেমস দিয়ে। এখনো বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে পদক জিততে পারেনি। অপেক্ষার পর ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক গেমসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশী হিসেবে সরাসরি খেলার সুযোগ পান গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তা র‌্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থানে থাকার সুবাদে। সেই ধারায় ২০২০ টোকিও অলিম্পিক গেমস ও ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক গেমসে কোয়ালিফাই করে সরাসরি অংশ নেন আরচার রোমান সানা সুজন ও সাগর ইসলাম। বাকি সবাই ওয়াইল্ড কার্ডের বদৌলতে অংশ নিয়েছে।

অলিম্পিক গেমসে বালাদেশের এখন পর্যন্ত এক দুই ম্যাচ খেলেই বিদায় নেয়ার কাহিনী। খেলোয়াড়রা তেমন কিছু করতে না পারলেও কর্মকর্তা হিসেবে অনন্য রেকর্ড করেছেন উইং কমান্ডার (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টানা ১১টি অলিম্পিক গেমসে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তিনি একইসাথে ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমানে তিনি এই ফেডারেশনের সভাপতি।

১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিক গেমস দিয়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় গেমসে যাত্রা শুরু বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক এই অফিসারের। এরপর টানা সব অলিম্পিক গেমসে তার উপস্থিতি। কখনো সেফ দ্য মিশন, কখনো ম্যানেজার, কখনো টেকনিক্যাল অফিসিয়াল, কখনো গেস্ট হিসেবে অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন।

১৮৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমসে মহিউদ্দিন দায়িত্ব পালন করেন অতিথি হিসেবে। তখন অবশ্য তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। এরপর ১৯৯২ সালে ম্যানেজার হিসেবে যান স্পেনের বার্সেলোনা অলিম্পিক গেমসে। ১৯৯৬ সালে তার আটলান্টা অলিম্পিকে যাওয়া গেস্ট হিসেবে। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকেও তার পরিচয় ছিল অতিথি। ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকে টেকনিক্যাল অফিসিয়াল হিসেবে যান। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে ছিলেন গেস্ট। এরপর থেকে অর্থাৎ ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক, ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক, ২০২১ সালের (২০২০) টোকিও অলিম্পিক এবং ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে মহিউদ্দিনের উপস্থিতি ছিল টেকনিক্যাল অফিসিয়াল পরিচয়ে। মাঝে ২০১১ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ইয়ুথ অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশ দলের সেফ দ্য মিশনের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টানা যুব ও সিনিয়র অলিম্পিক গেমস মিলে ১১টি অলিম্পিকে মহিউদ্দিনের উপস্থিতির নেপথ্য, প্রথমত তিনি ১৯৯২ সালে গ্রীসের এথেন্স থেকে ভারোত্তোলনের টেকনিক্যাল অফিসিয়ালের কোর্স করে সেখানে পাস করেন। সেই সার্টিফিকেটই তাকে অলিম্পিক গেমসে জাজ বা জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করান রাস্তা তৈরি করে দেয়।

মহিউদ্দিন জানান, ‘আমি হাইকোয়ালিটির জুরি-জাজের পর্যায়ে। যাদের ভুল কম হয়। তাই আমি অলিম্পিক গেমসে টেকনিক্যাল অফিসিয়ালের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাচ্ছি। যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন এবং সব ঠিক থাকে তাহলে ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকেও যাবো।’

তার মতে, ‘দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে অলিম্পিক গেমসের সাথে সম্পৃক্ত থাকার জন্য, এক ফেডারেশন সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হয়েছে, দুই, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়েছে এবং সরকারের কৃপাও থাকতে হয়েছে।’

উল্লেখ্য, মহিউদ্দিনই অলিম্পিকে বাংলাদেশের একমাত্র পাস করা টেকনিক্যাল অফিসিয়াল।

অলিম্পিকে দীর্ঘ এই পদ যাত্রায় নানান মজার ঘটনার শিকার তিনি। সর্বশেষ প্যারিস অলিম্পিকে গেমসের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে ব্যাগ খোয়া গেছে তার। যেখানে ছিল কিছু দামী গিফট। মহিউদ্দিন জানান, ‘ওই ভিআইপি লাউঞ্জে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী ছাড়া কারোরই প্রবেশের অনুমতি নেই। আমার পাশে কয়েক দেশের ফেডারেশন কর্মকর্তারা বসা ছিলেন। এরপর হঠাৎ দেখি আমার ব্যাগ নেই। ব্যাগে আমার দুই ছেলের জন্য গেঞ্জী কিনেছিলাম। দুঃখজনক বিষয় হলো ব্যাগ হারানোর পর আমি আবার দোকানে যাই সেই গেঞ্জী কিনতে। তবে দোকানে গিয়ে দেখি সেই গেঞ্জীও শেষ।’

তিনি যোগ করেন, ‘১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিক গেমসে যাওয়ার জন্য আমি তখন সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার জন্য হাফ প্যান্ট পরে নৌকায় করে উনার অফিসে গিয়েছিলাম। অফিসে প্রবেশের আগে ব্যাগে থাকা ইউনিফর্ম পরে নিয়েছিলাম। কারণ তখন দেশে ভয়াবহ বন্যা। বিমানবন্দরও বন্ধ। টিকিট আগেই কেটে রেখেছিলাম। এরপর বিমানবন্দর খোলার সাথে সাথেই বিমানে উঠি। যদিও আমাকে সিউল পৌঁছাতে হয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরের দিন।’

জানান, ‘এরশাদ সাহেবের অনুমতি আনার আগ পর্যন্ত অন্য আরো যে কয়েক ধাপে বিভিন্ন দফতর থেকে অনুমতি নিতে হয়েছে তা ছিল স্মরণীয়। আসলে ইচ্ছে থাকলে এবং আল্লাহ তায়ালার রহমত থাকলে যে যাওয়া যায় সেটাই প্রমাণিত হয়েছে সেবার।’

অলিম্পিক গেমস ছাড়াই এশিয়ান গেমস, সাফ গেমস বা এসএ গেমস, কমনওয়েলথ গেমস ও ইসলামী সলিডারিটি গেমসেও বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।