বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচনে নানা রকম ঘটনা ঘটছে অতীতে। নির্বাচন স্থগিত হয়। কোনো এলাকায় নির্বাচন স্থগিত হলে গণভোটের রায়ও তো স্থগিত হয়ে যাবে। এজন্য দুইটাকে একাকার করলে একটার বাক্যের সাথে আরেকটার বাক্য মিলে যাবে। সুতরাং ইলেকশন যদি প্রশ্নবোধক হয়, তাহলে গণভোটের চার্টারও প্রশ্নবোধক হয়ে যাবে।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরতিকালে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তাহের আরো বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কিছুটা মতভিন্নতা থাকলেও পরে গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়নে এখন আমরা সবাই একমত হয়েছি। গণভোটের মাধ্যমেই জুলাই চার্টারকে এক্সেপ্টেড (বাস্তবায়ন) করা হবে।
তিনি বলেন, গণভোটটি কখন হবে এই নিয়েই কিছুটা দ্বিমত আছে। অনেকেই বলেছেন, ‘গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একসাথে হবে। একসাথে হলে ভালো হয়।’ আমরা বলেছি, ‘না’, গণভোট একটি আলাদা বিষয়। জাতীয় নির্বাচন একটি আলাদা বিষয় এবং দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গণভোটটা হবে আমাদের যে সমস্ত রিফর্মস (সংস্কার), যেটাকে জুলাই সনদ হিসেবে একটা প্যাকেজ হ্যান্ডেল করছি, সেটাকে নিয়ে গণভোট হবে। সুতরাং গণভোটটা আগেই হয়ে যাওয়া দরকার। জনগণ যদি এক্সেপ্ট করে, সেই গণভোটের ভিত্তিতেই পরবর্তী সংস্কার হবে, ইলেকশন হবে। আর জনগণ যদি রিজেক্ট করে দেয়, তাহলে তো সেটা এখানে শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং বিষয়টা খুব স্পষ্ট হবে, বিফোর ইলেকশন এবং ইলেকশন তার ভিত্তিতে হবে।
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন- ‘দুইটা ইলেকশন না করে একসাথে যদি আমরা দুটি করে ফেলতে পারি, তাহলে একটা ইলেকশনকে এভয়েড (এড়িয়ে) করা যায়। এটা একটা ভালো দিক আছে, কিন্তু মন্দ দিক আছে অনেক বেশি। প্রথম মন্দ দিকটা হচ্ছে জুলাই চার্টারে এমন কিছু ইস্যু আছে, যেটি আগামী নির্বাচনের একটা সাবজেক্ট হবে। উদাহরণ- আপার হাউজের (উচ্চকক্ষ) একটা সাবজেক্ট আছে, গণভোট হলে আপার হাউস তো আগামী নির্বাচনের সময় এটা নির্বাচনের একটি অংশ হবে। যদি আপনি একই দিন করেন, তাহলে আপার হাউস কী হবে, কী হবে না, টিকবে কি টিকবে না, দরকার আছে কি নাই, জনগণ গ্রহণ করবে কি করবে না, এটা তো আনডিসাইডেড রয়ে গেল।
আরেকটি উদাহরণ টেনে ডা: তাহের বলেন, একদিন দুটি নির্বাচন হলে গণভোটকে আনসার্টে ভেতরে ফেলে দিলেন। দুইটা নির্বাচন এবং গণভোটের বিষয়টা একই ভাগ্যের সাথে হয়ে যায়, ধরেন একটা কেন্দ্রে ভোট হলো না, আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচনে তো এরকম ঘটনা ঘটছে অতীতে, সে এলাকায় গণভোটের যে রায়, সে রায়ও তো স্থগিত হয়ে গেল। এজন্য দুইটাকে একাকার করলে একটার বাক্যের সাথে আরেকটার বাক্য মিলে যাবে। সুতরাং ইলেকশন যদি প্রশ্নবোধক হয়, তাইলে আপনার গণভোটের চার্টারও প্রশ্নবোধক হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ এবং জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের এই নেতা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে এখনো মনমানসিকতায় আমরাও ওয়েলফেয়ার হতে পারিনি। এখন কোনো কারণে যদি জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু না হয়, একই দিনে যদি জুলাই সনদের ওপরে গণভোট করি, তাহলে সেটাও তো সুষ্ঠু হবে না। তো সুস্থ যদি না হয়, তাইলে জুলাই চার্টারের রিফর্মসের যে ডিসিশনটা আমরা ঐকমত্য হয়েছি, সেটাও এখানে কার্যকর হবে না।
তিনি বলেন, সেজন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীরসহ আরো ইসলামী দল, আরো কিছু কিছু দল আমরা বলেছি স্পষ্টভাবে, গণভোটের সকলে ঐকমত্য হয়েছে এবং নভেম্বরের ভেতরেই গণভোটটা আলাদাভাবে হয়ে যাওয়া দরকার। এটা সহজ ভোট। শুধু হা, না। গণভোটটি নভেম্বরের শেষের দিকে হওয়া সম্ভব। কারণ আমাদের কাছে রেকর্ড আছে বাংলাদেশেই ১৯ দিনের ব্যবধানেও গণভোট হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানেও গণভোট হয়েছে। গণভোটের পরে নভেম্বরের শেষের দিকে ডিসেম্বরের ফার্স্ট উইকে যদি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন তাহলে ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের জন্য এটা যথেষ্ট টাইম আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর স্ট্যান্ডিং হচ্ছে পরিষ্কার, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে এবং নভেম্বরের ভেতরেই জুলাই চার্টের ওপরে আমাদের গণভোট হবে এবং দেশ অন্তত একটা স্থিরতা, দৃঢ়তা, স্থীতিশীলতা, নিশ্চয়তার মধ্যে দিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে জাতি সবচেয়ে বেশি জনঅংশগ্রহণমূলক, আনন্দ উৎসবের সাথে নির্বাচনে করবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, জাতীয় নির্বাচন করার জন্য ব্যালট বাক্স লাগবে, লোকদের এমপ্লয়মেন্ট লাগবে, ট্রেনিং লাগবে। সেই নির্বাচনেরই যা প্রস্তুতি সেটি গণভোটের মাধ্যমেই হয়ে যাবে। শুধুমাত্র ব্যালট ছাপানো এবং কিছু ট্রান্সপোর্ট সে সময়ের জন্য একটু খরচ যেতে পারে। একটি জাতিকে স্থীতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই যে ইনভেস্টমেন্ট এটা আমি মনে করি মোটেই খুব বড় নয়, বরং আল্টিমেটলি বেশি লাভবান করবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিশির মনির বলেন, আমাদের প্যাকেজটা হলো, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একটা আদেশ জারি হবে। ওই আদেশের মধ্যে একটা রেফারেন্ডামের কথা বলা থাকবে এবং জুলাই সনদটা ওই আদেশের মধ্যে শিডিউল ইনক্লুড থাকবে। এরই ভিত্তিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটের পরে এবং সাধারণ নির্বাচনের পরে যে পার্লামেন্ট হবে, ওই পার্লামেন্টের দুইটা ক্ষমতা থাকবে। একটা ক্ষমতা থাকবে কনস্টিটিউট পাওয়ার। গাঠনিক ক্ষমতা। আরেকটা ক্ষমতা থাকবে সাধারণ পার্লামেন্ট হিসেবে ক্ষমতা। প্রথম অধিবেশনে গাঠনিক পাওয়ারটা এপ্লাই করে জুলাই সনদটাকে যোগ করে নেবে। যোগ করার পর গাঠনিক পাওয়ারটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর এরপর থেকে যে সংসদ কার্যকর হবে সেটা হবে নিয়মিত সংসদ। এরই ভিত্তিতে জুলাই সনদ এপ্রুভ হবে। সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে। নতুন বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করবে।