আবারো পাকিস্তানের হার, রেকর্ড নবম এশিয়া কাপ ভারতের

অথচ গল্পটা লেখা হতে পারতো ভিন্নভাবেও, ভারতই পুড়তে পারতো স্বপ্নভঙ্গের নীল বেদনায়। ১২.৪ ওভারে ১ উইকেটে ১১৩ রান তুলে নিয়ে তারই আভাস দিয়েছিল পাকিস্তান। তবে এরপর যা হলো, তা ভুলে যাবার মতো।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
তিলক ভার্মা একাই হারিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানকে
তিলক ভার্মা একাই হারিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানকে |ক্রিকইনফো

আক্ষেপ ফুরালো না পাকিস্তানের, বাড়লো এশিয়ার সেরা হবার অপেক্ষা। সালমান আগাদের সঙ্গী হলো স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। অপরদিকে উচ্ছ্বসিত ভারত, সিংহাসন ধরে রাখলো ম্যান ইন ব্লুরা। শোকেসে উঠলো ৯ম এশিয়া কাপ শিরোপা।

ইতিহাসে প্রথমবার এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। রোববার দুবাইয়ে খেলতে নামে দুই দল। পাকিস্তানি বোলাররা লড়াই জমিয়ে তুলে বটে, তবে শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে জিতে যায় ভারত।

ইতিহাস গড়া ফাইনালে আগে ব্যাট করে পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারেনি পাকিস্তান, ১৯.১ ওভারে ১৪৬ রানে শেষ হয় পাকিস্তানের ইনিংস।

অথচ গল্পটা লেখা হতে পারতো ভিন্নভাবেও, ভারতই পুড়তে পারতো স্বপ্নভঙ্গের নীল বেদনায়। ১২.৪ ওভারে ১ উইকেটে ১১৩ রান তুলে নিয়ে তারই আভাস দিয়েছিল পাকিস্তান। তবে এরপর যা হলো, তা ভুলে যাবার মতো।

পরের ৩৯ বলে মাত্র ৩৩ রানেই ৯ উইকেট হারায় পাকিস্তান। যেন ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ নামের স্বার্থকতা প্রমাণ করে তারা। অবিশ্বাস্য ধসে গুটিয়ে যায় দেড় শ’র আগেই। শিরোপা জিততে ভারত পায় সহজ লক্ষ্য।

১৪৭ রানের লক্ষ্য। দেখেশুনে শুরু করা প্রয়োজন ছিল ভারতের। তবে তা হতে দেননি ফাহিম আশরাফ-শাহিন আফ্রিদিরা। পাওয়ার প্লেতেই তুলে নেন ৩ উইকেট। যদিও তাতে শেষ রক্ষা হয়নি।

১.১ ওভারে ফাহিম আশরাফের বলে আকাশে বল উড়িয়ে শেষ হয় অভিষেক শর্মার ইনিংস। আসর জুড়ে দারুণ খেলা এই ওপেনার ফেরেন ৬ বলে মাত্র ৫ রানে। ৭ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।

রান ১০ হতেই ফেরেন তিনে নামা সূর্যকুমার যাদব। ৫ বলে মাত্র ১ রান করতেই শিকার হন শাহিন আফ্রিদির। এরপর শুভমান গিল ও তিলক ভার্মা মিলে হাল ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

৪ ওভার শেষে দলীয় ২০ রানে ফেরেন শুভমান গিল। ফাহিমের শিকার হয়ে তার ইনিংস থামে ১০ বলে ১২ রানে। দারুণ ক্যাচ নেন হারিস রউফ। পাওয়ার প্লেতে আসে মাত্র ৩৬ রান।

ভারতের চতুর্থ উইকেটের পতন হয় ১২.৩ ওভারে ৭৭ রানে। স্যাঞ্জু স্যামসন ও তিলক ভার্মার ৫৭ রানের জুটি ভাঙেন আবরার। স্যামসন আউট হন ২১ বলে ২৪ করে। তবে দারুণ ব্যাট করতে থাকেন তিলক ভার্মা।

তিলক ৪১ বলে তুলে নেন ফিফটি। ফিফটির পরও তিনি তাড়াহুড়ো করেননি, খেলতে থাকেন দেখেশুনেই। তবে রান বাড়াতে থাকেন শিভাম দুবে। শেষ দুই ওভারে ভারতের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৭ রান।

তবে দুবেকে ১৯তম ওভারের শেষ বলে থামান ফাহিম, দুবে আউট হন ২২ বলে ৩৩ করে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ১০ রান। তবে হারিস রউফের প্রথম ৪ বলেই সেই সমীকরণ মেলায় ভারত৷

২ বল বাকি থাকতে হয় চ্যাম্পিয়ন। তিলক ভার্মা ৫৩ বলে ৬৯ ও রিংকু সিং ১ বলে ৪ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন। তবে শিরোপা জয়ের পরও পাকিস্তানের সাথে হাত মেলায়নি ভারত, ফিরে যায় সাজঘরে।

ফাহিম আশরাফ ৩ উইকেট নিয়ে খেলা জমিয়ে তুললেও হেরে যায় হারিস রউফের কাছে। ৩.৪ ওভারে ৫০ রান দিয়েছেন এই পেসার। ফলে ব্যর্থ হয় বাকিদের প্রচেষ্টা।

এর আগে ব্যাট হাতে শুরুটা দারুণ হয় পাকিস্তানের। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতেই তুলে ৪৫ রান। দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামান জ্বলে উঠেন ব্যাট হাতে।

ভারতীয় বোলারদের তুলোধোনা করে মাত্র ৩৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ফারহান। হাফ সেঞ্চুরির পথে দুটি ছক্কা ও ৫টি চার মারেন পাকিস্তানের এই ওপেনার। তবে এরপর আর ইনিংস বড় করতে পারেননি।

৩৮ বলে ৫৭ রান করে বরুণ চক্রবর্তীর শিকার হয়ে ফেরেন ফারহান। তার বিদায়ে ৯.৪ ওভারে দলীয় ৮৪ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। এরপর ফখর জামানকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি সাইম আইয়ুব।

গোটা টুর্নামেন্টের মতো ফাইনালেও ব্যর্থ তিনি। কুলদীপ যাদবের বলে ১১ বলে ১৪ রান করে ফিরেছেন সাইম। চারে নামা মোহাম্মদ হারিসও ব্যর্থ হয়েছেন। ২ বলে কোনো রান না করেই আউট হন তিনি।

থিতু হয়ে যাওয়া ফখরকে আউট করেন বরুণ। তাতেই শেষ পাকিস্তানের বড় ইনিংসের স্বপ্ন। ফখরের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। এরপর দ্রুত আউট হন হুসাইন তালাতও (১)।

১৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে পাকিস্তান। সেখান থেকে আর মাত্র ১৫ রান যোগ করতে পারে তারা। অধিনায়ক সালমান আগাকে (৮) টিকতে দেননি কুলদীপ। একই ওভারে আরো দুই উইকেট নেন কুলদীপ।

চতুর্থ বলে আফ্রিদিকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান এই ভারতীয় স্পিনার। এরপর শেষ বলে ফাহিম আশরাফ ক্যাচ দেন তিলক ভার্মাকে। ১৩৫ রানে পাকিস্তান হারিয়ে ফেলে ৮ উইকেট। শাহিন আফ্রিদি ও ফাহিম আশরাফের কেউ রানের খাতা খুলতে পারেননি।

এরপর হারিস রউফ ও মোহাম্মদ নাওয়াজ ফেরেন সমান ৬ রান করে। দুজনকেই ফেরান বুমরাহ। ১৯.১ ওভারে শেষ হয় পাকিস্তানের ইনিংস। ৪ উইকেট নেন বুমরাহ, জোড়া উইকেট করে নেন বুমরাহ, বরুণ ও অক্ষর প্যাটেল।