যখন বোর্ডে ছিলেন না, তখন ছিলেন বোর্ডের কড়া সমালোচক। আর এখন বোর্ডে এসে নিজেই হয়ে গেছেন সমালোচিত। একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
এবার তাকে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সম্প্রতি এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফাহিমকে নিয়ে কড়া মন্তব্য করেন তিনি। দাবি করেন অসচ্ছতার।
দেশের ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত নাম নাজমুল আবেদিন ফাহিম। যোগ্য সংগঠক আর কোচ হিসেবে বেশ আলোচিত তিনি, ক্রিকেট নিয়ে কাজ করছেন দু’যুগের বেশি সময়।
বিকেএসপিতে কাজ করেছেন টানা ১৭ বছর। ২০০৫ সালে যোগ দেন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগে। এরপর নারী ক্রিকেটের দায়িত্ব নিয়ে করেন এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন।
তবে প্রাপ্য সম্মান না পাওয়ার অভিযোগ এনে চাকরি ছাড়েন বিসিবির। তবে সরকার পতনের পর ফের যুক্ত হন বিসিবিতে। প্রথমে পরিচালক আর পরে পান ক্রিকেট অপারেশন্সের দায়িত্ব।
তবে দায়িত্ব পাবার পর থেকে নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছেন ফাহিম। উঠে এসেছেন আলোচনায়। কখনো বোর্ড সভাপতির সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে, কখনো দলের পারফরম্যান্সের কারণে সমালোচিত হন তিনি।
তবে বড় বিতর্কের জন্ম দেন নাজমুল হোসেন শান্তকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে। কোনো আলোচনা ছাড়া হঠাৎ ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় শান্তকে। শ্রীলঙ্কা সফরের মাত্র একদিন আগে নেয়া হয় এই সিদ্ধান্ত।
যা নিয়ে এবার ফাহিমের দিকে আঙুল তুললেন তামিম। তিনি বলেন, ‘আপনি এতো বছর অভিযোগ করলেন বিসিবিতে পর্যাপ্ত সম্মান পাননি, অথচ আপনি দায়িত্বে এসে দেশের ক্যাপ্টেনকেই সম্মান দিতে পারলেন না!’
তামিম আরো বলেন, ‘আপনি এতদিন কষ্ট করলেন, ভুগলেন। আর আপনি যদি সেখান থেকে শিক্ষা না নিয়ে অন্যদের সাথে ব্যতিক্রম আচরণ না করেন; তাহলে আপনাকে যে ভুগিয়েছে তার সাথে তো আপনার কোনো পরিবর্তন নাই।’
এদিকে অকারণে জাতীয় দলের সাথে তার একের পর এক বিদেশ সফর সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিগত ১১ মাসে পুরুষ এবং নারী দলের সাথে ডজনখানেকের বেশি বিদেশ সফর করেছেন ফাহিম। মোটা অঙ্কের দৈনিক ভাতা নিয়েছেন।
কিন্তু নিজের দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। তামিম মনে করেন, বারবার বিদেশ সফরে গিয়ে ফাহিম যদি দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু আনতে পারতেন, তাহলে কোনো আপত্তি থাকত না।
বলেন, ‘শুধু খেলা দেখা আর জিতেছি কিংবা হেরেছি এসব নিয়ে আলোচনা না করে ওই দেশ থেকে নতুন কিছু নিয়ে আস কিংবা ওই দেশের সাথে যোগাযোগ করে কোনো একটা সিরিজ নির্ধারণ করা কিংবা তাদের ক্রিকেটের ফ্যাসিলিটিজ দেখে সেগুলো দেশে এসে বাস্তবায়ন করা, এসব যদি যুক্ত করা যায়, তাহলে আমার কাছে মনে হয় ভালো হবে।’
সাবেক এই অধিনায়ক আরো বলেন, ‘এই কাজগুলো যদি করেন, তাহলে প্রতি ট্যুরে যান সমস্যা কী? যদি আপনি প্রতি ট্যুরে গিয়ে কোনোকিছু ভালো নিয়ে আসতে পারেন, কেন নয়? কিন্তু আপনি প্রতি ট্যুরে গিয়ে যদি ভালো কিছু না নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে তো কোনো লাভ নেই।’
‘আপনি টিএ ডিএ নেন, ১০ দিন না, ২০ দিনের নেন। কিন্তু ওই টিএডিএ নিয়ে যদি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ২ পারসেন্ট উপকার হয়, আপনি নেন ভাই কোনো সমস্যা নাই। আমার কথা হচ্ছে এটা।’
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের পর নতুন বোর্ড গঠন হলেও ক্রিকেটে এখনো দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই। ক্রিকেট অপারেশন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও ফাহিম বলতে গেলে কিছুই করতে পারেননি। এসব নিয়েও মুখ খুলেন তামিম।
বলেন, ‘কেন নিচ্ছেন, না নিচ্ছেন সেসব আলোচনা না করে যদি আমরা সবাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভালো চাই, তাহলে আপনি টিএ ডিএ নেন। একশ ডলার নিয়েন না, পাঁচশ ডলার নেন। ওই পাঁচশ ডলারের বদলে যদি ক্রিকেটের পাঁচ শতাংশ লাভ হয়ে থাকে, তাহলে প্লিজ এগিয়ে যান।’