নাটকীয়তার কমতি ছিল না আজ মিরপুরে। শুরুটা ম্যাড়মেড়ে হলেও শেষ দিকে প্রতি মুহূর্তেই রোমাঞ্চ ছড়াতে থাকে। শেষ বলের সমীকরণ, সুপার ওভার গোলকধাঁধা— কী ছিল না! যদিও শেষটা সুখকর হয়নি, ১ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ফলে সিরিজের শেষ ম্যাচটা রূপ নিলো অলিখিত ফাইনালে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) মিরপুরে টসে জিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২১৩ রান করেছিল, বিপরীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ উইকেটে পৌঁছে যায় সমান রানে। ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। যেখানে পেরে উঠেনি স্বাগতিকেরা।
সুপার ওভারে বল হাতে প্রথম ৫ বলে মাত্র ৬ রান দিলেও শেষ বলে বাউন্ডারি হজম করে বসেন মোস্তাফিজ। ১১ রান তাড়ায় ওয়াইড আর নো বল মিলে ১ বলেই আসে ৫ রান। তবে পরের ৫ বলে ৬ রানের সমীকরণ মেলেনি।
মেলাতে পারেননি সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান মিলে। সৌম্য ৩ বলে ৩ করে আউট হন, সাইফ ৩ বলে ২ রান ও তিনে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত ১ বল খেললেও রান আসেনি। দুই ওয়াইড, এক নো বল ও ১ রান আসে লেগবাই থেকে।
এই সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিততে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হটিয়ে র্যাঙ্কিংয়ের নয়ে উঠতে পারতো বাংলাদেশ। তবে আজ হেরে যাওয়ায় বাড়ছে অপেক্ষা, অন্তত চলতি সিরিজে পূরণ হচ্ছে না ইচ্ছেটা।
বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল অবশ্য এই লক্ষ্য মাথায় রেখেই। যদিও ব্যাট হাতে পারেননি তার যথার্থতা প্রমাণ করতে। শুরুর দিকে সৌম্য সরকার ৪৫ ও মাঝে মেহেদী মিরাজ ৩২* রান করলেও ছিল দুই শ’ রানে পৌঁছা নিয়ে শঙ্কা।
শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহান ২৪ বলে ২৩ ও রিশাদ হোসেন বিধ্বংসী রূপ ধারণ করলে বলার মতো পুঁজি পায় বাংলাদেশ। রিশাদ ৩ চার ও সমান ছক্কায় ১৪ বলে ৩৯* রানে অপরাজিত থাকেন। বাকিরা কেউ সুবিধা করতে পারেননি।
২১৩ রানের মোটামুটি মানের সংগ্রহ নিয়েও আত্মবিশ্বাসী ছিল বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে এরচেয়ে কম রান ডিফেন্স করায় সাহসী ছিল টাইগাররা। শুধু বোলারদের ভালো করতে হতো। সেই চেষ্টার কমতি রাখলেন না রিশাদরা।
প্রথম ওভারেই ঝলক দেখান নাসুম আহমেদ। মাত্র ১ রানে ভেঙে দেন ক্যারিবীয়দের উদ্বোধনী জুটি। ব্রেন্ডন কিং ফেরেন গোল্ডেন ডাক মেরে। তবে সেই ধাক্কা সহজেই কাটিয়ে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
অ্যালিক আথানেজ ও কেসি কার্থি মিলে গড়েন পঞ্চাশ রানের জুটি। যা হয়ে উঠেছিল গলা কাঁটা। সেই কাঁটা সরান রিশাদ হোসেন। ৪২ বলে ২৮ রান করা আথানেজকে ফেরান তিনি। ১৩.৩ ওভারে ভাঙে জুটি।
তবে আকিম অগাস্টেকে নিয়ে লড়াই জারি রাখেন কার্থি। কিন্তু জুটি বড় হতে দেননি রিশাদ, ভয়ের কারণ হয়ে ওঠার আগেই কার্থিকে থামান তিনি। ৫৯ বলে ৩৫ করে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন কার্থি।
এরপর জোড়া আঘাত আনেন তানভীর ইসলাম। আকিম অগাস্টকে ১৭ ও শেরফানে রাদারফোর্ডকে ৭ রানে থামান তিনি। ২৬.৩ ওভারে ১০৩ রানে ৫ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় স্বাগতিকেরা।
পরের উইকেট যায় রিশাদের ঝুলিতে। গোদাকেশ মোতিকে থিতু হবার আগেই (১৫) বোল্ড করেন তিনি। আর ৩৪ ওভার শেষে রোস্টন চেজকে (৫) ফেরান নাসুম আহমেদ। সপ্তম উইকেটের পতন হয় ক্যারিবীয়দের।
৩৪ ওভারে ১৩৩ রানে ৭ উইকেট তুলে নিয়ে যখন সহজ জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে স্বাগতিকেরা, সেখান থেকে ভয় ধরিয়ে দেয় শাইহোপ-জাস্টিন গ্রিভসের জুটি। পরের ৬৫ বলে ৪৪ রান যোগ করেন দুজনে মিলে।
অবশেষে ৪৪.৫ ওভারে ১৭৭ রানে গ্রিভস রান আউট হলে ভাঙে জুটি। ৩৯ বলে ২৬ করে আউট হন তিনি। এরপর শেষ ৩০ বলে জয়ের জন্য ক্যারিবীয়দের প্রয়োজন দেখা দেয় ৩৭ রানের।
তবে আকিলকে সাথে নিয়ে জয়ের পথে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫ রান। মোস্তাফিজকে রেখে অধিনায়ক মিরাজ ভরসা করেন সাইফকে। বল তুলে দেন তার হাতে।
বল হাত চেষ্টার কমতি রাখেননি সাইফ হাসান। হাতে মাত্র ৫ রান নিয়েই প্রায় জয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে। তবে নুরুল হাসান সোহান ক্যাচ মিস করায় বাড়ছে অপেক্ষা। ম্যাচ গড়িয়েছে সুপার ওভারে।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য মাত্র ৫ রান প্রয়োজন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেখান থেকে প্রথম ২ বলে কোনো রান দেননি সাইফ। পরের দুই বলে ২ রান হলেও ৫ম বলে আকিল হোসেইনের (১৬) স্ট্যাম্প ভেঙে দেন সাইফ।
ফলে শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রানের। খ্যারি পিয়েরে সেই বলে ক্যাচ উঠিয়ে দিলেও, তা তালুবন্দি করতে পারেননি সোহান। ক্যাচ ফসকে যাওয়ার আগে দুই রান নিয়ে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে রানে ফেরে সমতা।
রানে সমতা ফেরায় খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। আর যেখানে গিয়ে পেরে উঠেনি বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ম্যাচ মাঠে গড়াবে আগামী বৃহস্পতিবার।



