দুঃসময়টা লম্বা হচ্ছে বাংলাদেশের। আবুধাবিতে আবারো বিধ্বস্ত টাইগাররা। এমনভাবে হেরেছে মিরাজরা, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ছোট করে বললে, বলতে হয় অসহায় আত্নসমর্পণ করেছেন শান্ত-তামিমরা।
বিপরীতে রেকর্ড গড়েই জিতল আফগানিস্তান। ১৯০ রান নিয়ে এর আগে এই মাঠে জেতেনি কেউ। তবে অসম্ভব কাজটাই করে দেখিয়েছেন আজমতুল্লাহ ওমরজাইরা। বাংলাদেশকে হারিয়েছেন ৮১ রানে।
আফগানিস্তানকে এদিন বাংলাদেশ আটকে দেয় দুই শ’ পেরোনোর আগেই৷ মিরাজ-রিশাদের ঘূর্ণিতে ৪৪.৫ ওভারে ১৯০ রানেই শেষ আফগানদের ইনিংস। যা আবুধাবিতে তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
তবে সহজ এই লক্ষ্যটাই কঠিন হয়ে উঠে বাংলাদেশের জন্য, তিন অঙ্কে যেতেই হারিয়ে ফেলে ৯ উইকেট। শেষ পর্যন্ত আরো ৯ রান যোগ করে ২৮.৩ ওভারে গুটিয়ে যায় মিরাজের দল। যা এই মাঠের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
এই হারে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হাতছাড়া করল বাংলাদেশ। এই নিয়ে টানা ৩ ওয়ানডে সিরিজ হারলো তারা। সব মিলিয়ে শেষ ১০ সিরিজের নয়টিই হারলো টাইগাররা। আফগানিস্তানের সাথেই হারল পরপর ৩ সিরিজ!
রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফেরেন তানজিদ তামিম। কোনো রান যোগ করার আগেই উইকেট দিয়ে আসেন আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে। ৪.৫ ওভারে রান আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত।
ওভারের প্রথম ৪ বলে কোনো রান আসেনি। পঞ্চম বলে স্ট্রাইক রোটেড করতে গিয়ে ২ রানের চেষ্টায় ছিলেন শান্ত ও সাইফ হাসান। সেই চেষ্টা করতে গিয়েই উইকেট দিয়ে ফিরেন সাবেক এই অধিনায়ক।
পরের ওভারে এসে দারুণ খেলতে থাকা সাইফকে ফেরান ওমরজাই। টানা দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন তিনি, তবে এরপর আবার চড়াও হতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
৪০ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায় দলের রান পঞ্চাশে পৌঁছুতেই। দলের দুঃসময়ে এদিন আর হাল ধরতে পারেননি অধিনায়ক মেহেদী মিরাজ (৪)। তিনিও ওমরজাইয়ের শিকার।
এই মুহূর্তে ১২ ওভার শেষে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৮/৪। সেখান থেকে তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলি মিলে ইনিংস সর্বোচ্চ ২৯ রানের জুটি গড়েন। জুটি ভাঙেন রশিদ খান, হৃদয় আউট হন ৩৪ বলে ২৪ করে।
সেখান থেকে নুরুল হাসান সোহান ও জাকের আলি মিলে ৫ উইকেটে ৯৯ রানে পৌঁছে দেব বাংলাদেশকে। তবে ৯৯ রানেই পরপর ৩ উইকেট হারিয়ে বসে দল। যার দুটো নেন রশিদ খান, অন্যটা খারোতের।
এই ধসের মাঝে বিদায় নেন সোহান (১৫), জাকের আলি (১৮) ও তানজিম সাকিব (০)। এরপর ১ রান যোগ হতেই ফেরেন তানভীর ইসলাম, তিনিও রশিদ খানের শিকার। ১০০ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শেষ উইকেটটাও নেন রশিদ, ২৮.৩ ওভারে রিশাদ হোসেনকে ফেরান ৫ রানে। তাতে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। রশিদ খান ১৭ রানে ৫ উইকেট নেন। যা তার ক্যারিয়ার সেরা। ৩ উইকেট নেন ওমরজাই।
এর আগে তবে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিলেন রাহমানুল্লাহ গুরবাজ। চার-ছক্কা হাঁকিয়ে দিয়েছিলেন আভাস। তবে তাকে বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে দেননি তানজিম সাকিব, ১১ বলে ১১ রানেই থানান।
গুরবাজের বিদায়ে ৪.৫ ওভারে ১৮ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি সেদিকুল্লাহ আতাল (১৩)। ৮.৪ ওভারে দলীয় ৩৮ রানে তাকে আউট করেন তানভীর ইসলাম।
আগের ম্যাচে ফিফটি করেন রহমত শাহ। তবে এদিন মাঠ ছাড়েন দ্রুত (৯)। তবে আউট হয়ে নয় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে। মাঠে নেমে থিতু হতে পারেননি হাশমতুল্লাহ শাহিদিও, মেহেদী মিরাজের শিকার হন মাত্র ৪ রান নিয়ে।
মাত্র ১ রান যোগ হতেই ফেরেন আগের ম্যাচে আফগানদের জয়ের নায়ক আজমতুল্লাহ ওমরজাই। আজ রানের খাতা খোলার আগেই রিশাদের ফাঁদে পড়েন। ১৮.৪ ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ৭৯/৫ (রিটায়ার্ড হার্টসহ)।
এরপর মোহাম্মদ নাবিকে নিয়ে ইনিংস টানতে থাকেন ইবরাহীম জাদরান। দু'জনে মিলে ৬৩ বলে গড়েন ৩৯ রানের জুটি। তবে নাবি ইনিংস বড় করতে পারেননি, ৩০ বলে ২২ করে তানজিম সাকিবকে উইকেট দিয়ে আসেন।
এরপর নানগেলিয়া খারোতেকে নিয়ে ইনিংস টানতে থাকেন ইবরাহীম। দলকে দেড় শ' রানে পৌঁছে দিয়ে খারোতে ফেরেন রান আউট হয়ে ১৩ রান নিয়ে। নয়ে নানা রশিদ খানকে (১) টিকতে দেননি মিরাজ।
এরপর মোহাম্মদ গাজাফারকে নিয়ে সেঞ্চুরির পথে ছুটতে থাকেন ইবরাহীম। তবে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি, ১৪০ বলে ৯৫ করে মিরাজের শিকার হন তিনি। পরের ওভারেই গাজাফারকে (২২) ফেরান রিশাদ।
১৯০ রানে ৯ উইকেট হারায় আফগানরা। এরপর রহমত শাহ ফের মাঠে নেমে এলেও ১ বল পর ফের চোটে পড়লে শেষ হয় আফগানিস্তানের ইনিংস। মিরাজ ৩, তানজিম সাকিব ও রিশাদ দেন দু’টি করে উইকেট।