একটা সময় ভারত-পাকিস্তান লড়াই ছিল ক্রিকেটেরই বিজ্ঞাপন। তবে সেই উতুঙ্গ উত্তেজনা এখন আর নেই। মাঠের বাহিরে আলোচনা হয় যদিও, তবে ‘এশিয়ান ডার্বির’ যে উত্তাপ, মাঠে তার আঁচ থাকে না একটুও।
ছিল না গতরাতেও। ভারতের কাছে পাত্তাই পায়নি পাকিস্তান। একতরফা ম্যাচে সূর্য কুমার যাদবরা জয় তুলে নেয় ৭ উইকেটে। পাকিস্তানের দেয়া ১২৮ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে যায় ১৫.৫ ওভারে।
মাঠের খেলা আলোচনার জন্ম দিতে না পারলেও, আলোচনা হচ্ছে খেলার আগে-পরে ভারতের অসৌজন্যমূলক আচরণ নিয়ে। ক্রিকেটের মাঝে রাজনীতি টেনে এনেছেন সূর্য কুমাররা।
তারা যা করেছেন, তা ক্রিকেটীয় চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মতোই। ম্যাচের আগে ও পরে প্রতিপক্ষের সাথে করমর্দন দূরে থাক, তাদের দিকে ফিরেও তাকাননি তারা; যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
দুই দলের টসের সময় প্রথম দেখা মেলে অস্বস্তিকর এই দৃশ্যের। সাধারণত টসের সময় দুই দলের অধিনায়ক একে অপরের সাথে কথা বলেন, এমনকি টসের পর হাত মেলানোও রীতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দুবাইয়ে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আগা টসের পর সৌজন্যসূচক হাত মেলাননি। এমনকি দু’জনের মাঝে চোখাচোখিও হয়নি।
দেখে মনে হয়েছে, যেন অনেকটা বাধ্য করেই টস করতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে দু’জনকে! আসলে দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধ তাদের সম্পর্ক যে তলানিতে নিয়ে ঠেকিয়েছে, তাই দেখা গেলো ক্রিকেট মাঠেও।
আগে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা দেখা হলে মাঠের মাঝেই কথা বলতেন, জড়িয়ে ধরতেন। অনেক সময় মেতে উঠতেন খুনসুটিতে। এবার তার কিছুই হয়নি। কেউ কারো সাথে কথাও বলেনি।
আর ম্যাচ শেষে যা হলো, তা বিস্মিত করেছে সবাইকেই।
ম্যাচ শেষে পাকিস্তানিদের সাথে করমর্দন দূরে থাক, তাদের দিকে সূর্য কুমার ও শিভাম দুবে ফিরেও তাকাননি। সোজা হাঁটা দেন ড্রেসিংরুমের দিকে।
আর তারা ড্রেসিংরুমে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, যেন পাকিস্তানের কেউ ভারতীয়দের সাথে দেখা করতে না পারেন!
রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও ভারতীয় ক্রিকেটারদের এমন আচরণে হতভম্ব পাকিস্তান। খেলা শেষে ভারতের এমন কাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধান কোচ মাইক হেসন।
তিনি বলেন, ‘ম্যাচ শেষে হাত মেলানোর জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু হতাশ হয়েছি। হাত মেলানোর জন্য আমরা তাদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছিল। এভাবে খেলা শেষ হওয়া হতাশাজনক ছিল।’
ভারতের করর্মদন বর্জনের আচরণকে ‘খেলোয়াড়সুলভের বিরুদ্ধে’ বলে বিবৃতি দিয়েছে পিসিবি। জানা গেছে, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট না কি টসের সময় দুই অধিনায়ককে করমর্দন না করতে বলেছিলেন।
এ কারণে ম্যাচ রেফরির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করছে পিসিবি। বিবৃতিতে তারা জানায়, পাকিস্তান দলের ম্যানেজার নাভিদ আকরাম চিমা ম্যাচ রেফারির আচরণের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এদিকে ভারতীয়দের এমন আচরণের প্রতিবাদে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেছে পাকিস্তান। মঞ্চে আসেননি পাকিস্তানের কেউ।
তবে কথা বলেছেন ভারত অধিনায়ক। যেখানে তিনি হাত না মেলানোর ব্যাখ্যায় জানিয়েছেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসীদের হামলায় হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতেই এমনটা করেছে তারা।
তবে সিদ্ধান্তটা যে ভারত সরকার ও বিসিসিআই থেকে এসেছে, তাও স্পষ্ট করেন সূর্য। বলেন, ‘আমাদের সরকার ও বিসিসিআইয়ের সাথে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা এখানে ওদের বিপক্ষে শুধু খেলতে এসেছি এবং উচিত জবাব দিয়েছি।’
সূর্য কুমার আরো বলেন, ‘এই জয় আমরা উৎসর্গ করছি আমাদের সাহসী সেনাদের, যারা অপারেশন সিঁদুরে অংশ নিয়েছিলেন। তারা সব সময় আমাদের অনুপ্রেরণা জোগান। সুযোগ পেলে আমরাও চাই তাদের অনুপ্রেরণা দিতে।’