বাংলাদেশ সময় রোববার রাতটা নিজের মতো রাঙালেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যাটে-বলে আরো একবার জ্বলে উঠলেন তিনি। জেতালেন দলকে, জিতলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। মাঝে ছুঁয়েছেন ৫০০ উইকেটের মাইলফলকও!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থেমে যাওয়ায় অনেক কীর্তিই থমকে আছে সাকিব আল হাসানের। তবে এর মাঝে সিপিএল খেলতে গিয়ে গড়েছেন দারুণ এক কীর্তি, পেয়েছেন স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ৫০০তম উইকেট।
৪৯৮ উইকেট নিয়ে এবারের সিপিএল খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। তবে অজানা কারণে প্রথম চার ম্যাচে বল হাতে পান মাত্র ৫ ওভার! শিকার করেন একটি উইকেট। তাতে অপেক্ষা বাড়ে ৫০০ উইকেটের।
অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা ফ্যালকনসের হয়ে খেলা সাকিব নেভিস প্যাট্রিয়টসের সাথেও বোলিং কোটা পূরণ করতে পারেননি। স্যার ভিভ রিচার্ড স্টেডিয়ামে বল হাতে পেয়েছেন ২ ওভার। তাতেই করেন বাজিমাত।
সাকিব বল হাতেই আসেন ১৫তম ওভারে। ওভারের শেষ বলে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ৫০০ উইকেটের কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছান সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ফেরান পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানকে (৩০)।
ক্রিকেটের প্রথম বাঁহাতি বোলার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন সাকিব। তার আগে ৫০০ উইকেট পাওয়া সবাই ছিলেন ডানহাতি; রশিদ খান (৬৬০), ডোয়াইন ব্রাভো (৬৩১), সুনিল নারাইন (৫৯০), ইমরান তাহির (৫৫৪)।
ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটে হিসেবে এই সংস্করণে ৭ হাজার রান ও ৫০০ উইকেটে ‘ডাবল’ পেলেন সাকিব। যা নেই আর কারো। তবে ৬৯৭০ রান ও ৬৩১ উইকেট আছে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভোর।
৫০০ উইকেট নেয়ার পথে বাংলাদেশ জাতীয় দল ও বিপিএলে সমান ১৪৯টি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব। এছাড়া আইপিএলে ৬৩, সিপিএলে ৪০ ও ইংল্যান্ডের ভাইটালিটি ব্লাস্টে তার আছে ২৮টি উইকেট।
৪৫৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ম্যাচে পাঁচ বার ৫ উইকেট ও ১২ বার ৪ উইকেট পেয়েছেন সাকিব। এই ফরম্যাটে তার চেয়ে বেশি ৫ উইকেট আছে শুধু সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা ও বর্তমান নামিবিয়ান অলরাউন্ডার ডেভিড ভিসার (৭ বার)।
৫০১ ও ৫০২ নম্বর উইকেটটা সাকিব পেয়ে যান পরের ওভারেই। ওভারের দ্বিতীয় বলে কাইল মায়ার্সকে (১৮) কাভারে উসমান মিরের ক্যাচ বানান। তিন বল পরে ফেরান নাভিন বিদাইস (১)।
১১ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসানে। তাতে নেভিস প্যাট্রিয়টসের ইনিংস থামে ৯ উইকেটে ১৩৩ রানে৷ বাকি ছয় উইকেটের ৩টিই ছিল রান আউট।
এদিকে বল হাতে এমন কীর্তির পর ব্যাট হাতেও জ্বলে উঠেন সাকিব। যদিও দলকে জিতিয়ে আসতে পারেননি, তবে চারে নেমে খেলেন প্রায় ১৪০ স্ট্রাইকরেটে ১৮ বলে ২৫ রানের ইনিংস। ছিল এক চার ও দুটি ছক্কার মার।
এছাড়া জুয়েল এন্ড্রু ২৮ বলে ২৮ রান করে আউট হন। তবে ফিফটি তুলে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন কারিমা গোর। ৪৭ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি, যা আসরের ৫ ম্যাচে তার তৃতীয় ফিফটি।
ব্যাটে-বলে এমন দারুণ পারফরম্যান্সের পর ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জুটে সাকিবের। চলতি আসরে প্রথমবার ম্যাচ সেরা হলেন তিনি। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যা সাকিব আল হাসানের ৪৪তম ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
তারচেয়ে বেশিবার ম্যাচ সেরা হয়েছেন কেবল অ্যালেক্স হেলস (৪৫), কাইরন পোলার্ড (৪৭), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৪৮) আর ক্রিস গেইল (৬০)।
এদিকে এমন সব অর্জনের পর ইনিংস বিরতিতে ব্রডকাস্টারে দেয়া সাক্ষাৎকারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান সাকিব। বলেন, ‘অনেক কঠোর পরিশ্রমের ফসল। মাইলফলক ছুঁতে পেরে আমি খুব খুশি। অনেক লম্বা ক্যারিয়ার... যা অর্জন করতে পেরেছি, আমি খুশি।’
সাকিবের এমন কীর্তির দিনে মাঠেই ছিল তার পরিবার। তিন সন্তান নিয়ে স্ত্রী শিশির ছিলেন গ্যালারিতে। তাদের নিয়ে সাকিবের ভাবনাটা এমন- ‘যখন বয়স বাড়তে থাকে, তখন পরিবার পাশে থাকলে অনেক স্বস্তি কাজ করে।’