প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু, আঠারোয় স্বপ্নপূরণ কোহলির

এবার যে আইপিএল নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে চলেছে তা রোববারই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন ছিল কে জিতবে? শ্রেয়সের পাঞ্জাব? নাকি কোহলি, রজত পাটীদারের বেঙ্গালুরু?

নয়া দিগন্ত অনলাইন
জয়ের পর বিরাট কোহলিকে উপরে উঠিয়ে উল্লাস সতীর্থদের
জয়ের পর বিরাট কোহলিকে উপরে উঠিয়ে উল্লাস সতীর্থদের |সংগৃহীত

চার বল বাকি থাকতেই মুখে হাত বিরাট কোহলির। চোখ ঢেকে ফেললেন তিনি। বোঝা যাচ্ছিল, চোখের কোনা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। খেলা শেষ না হলেও ততক্ষণে খেলার ভাগ্য নির্দিষ্ট। জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে বেঙ্গালুরুর। তাই নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না কোহলি। ক্যারিয়ারে সব ট্রফি পেয়েছেন। আইপিএল বাকি ছিল। অবশেষে সেটাও এল। ১৮তম বছরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) জিতলেন কোহলি। স্বপ্নপূরণ হলো তার।

দেখে বোঝা যাচ্ছিল না খেলা কোথায় হচ্ছে? অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম? না বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী? গোটা স্টেডিয়াম লাল। দুই ফাইনালিস্ট বেঙ্গালুরু ও পাঞ্জাবের জার্সিতে লালের আধিক্য বেশি থাকলেও গ্যালারিতে টেক্কা দিলেন বেঙ্গালুরুর সমর্থকেরা। ১৯১ রান তাড়া করতে নেমে পাঞ্জাবের প্রতিটা উইকেট পড়ার সাথে ডেসিবেল আরো বাড়ল। ৯০ হাজারের বেশি দর্শক ছিল মাঠে। শেষ দিকে আরসিবি, আরসিবি, কোহলি, কোহলি চিৎকারে কান পাতা যাচ্ছিল না। সেই সমর্থন কাজে লাগল বেঙ্গালুরুর। নইলে এই মাঠে ১৯০ রান করে জেতা সহজ নয়। মঙ্গলবার সেটাই করে দেখাল বেঙ্গালুরু।

এবার যে আইপিএল নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে চলেছে তা রোববারই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন ছিল কে জিতবে? শ্রেয়সের পাঞ্জাব? নাকি কোহলি, রজত পাটীদারের বেঙ্গালুরু? শ্রেয়সের আইপিএল জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। গতবারই কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ট্রফি দিয়েছিলেন তিনি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে অভিজ্ঞতা বেশি ছিল তার। কিন্তু একা অধিনায়ক কী করবেন? চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে সকলকে ভালো খেলতে হয়। যেটা করে দেখাল বেঙ্গালুরু। একটা দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হলো তারা।

খেলা শুরুর আগে পিচ পরীক্ষা করে ম্যাথু হেডেন বলেছিলেন, ২২০ রানের উইকেট। কিন্তু বেঙ্গালুরু খেলা শুরু করার পর কোহলিদের ব্যাটিং দেখে সেটা মনে হচ্ছিল না। বিশেষ করে কোহলি এবারের আইপিএলে যেভাবে ব্যাট করেছেন, ফাইনালে তা করলেন না। ৩৫ বল খেলে মাত্র ৩টি চার মেরেছেন তিনি। পাঞ্জাবের বোলারের কোহলির বিরুদ্ধে শর্ট বলের পরিকল্পনা করেছিলেন। তাকে গুড লেংথে বল করছিলেন না। ফলে সামনের পায়ে শট মারার সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। স্কোয়্যারে খেলতে বাধ্য হচ্ছিলেন। বলের গতিরও হেরফের করছিলেন অর্শদীপ সিংহ, কাইল জেমিসেনরা।

বাধ্য হয়ে দৌড়ে রানের ওপর ভরসা রাখতে হচ্ছিল কোহলিকে। মনে হচ্ছিল, ২০ ওভার খেলার পরিকল্পনা করে নেমেছেন তিনি। বাকিরা তার সাথে খেলবেন। তারা ঝুঁকি নেবেন। কোহলি শেষ দিকে হাত খোলার চেষ্টা করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেলতে পারলেন না কোহলি। আজমাতুল্লা ওমরজাইয়ের শর্ট বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না। নিজের বলে ভাল ক্যাচ ধরলেন ওমরজাই। ৩৫ বলে ৪৩ রান করে আউট হলেন তিনি।

তারপরেও কোহলিই বেঙ্গালুরুর সর্বোচ্চ স্কোরার। বাকি কেউ ৩০ রানও পার করেননি। তারপরেও ১৯০ রান করেছে বেঙ্গালুরু। সেটা তাদের দলগত খেলার ফল। প্রত্যেকে কিছু কিছু করে রান করেছেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল, ১৭৫ রানের বেশি হবে না। ১৫ রান বেশি হওয়ার অবদান জিতেশ শর্মার। একার ব্যাটে বেঙ্গালুরুকে প্লে-অফের প্রথম দুই দলের মধ্যে রেখেছিলেন জিতেশ। এই ম্যাচেও জেমিসনের এক ওভারে দলের রান বাড়িয়ে দিলেন তিনি।

বেঙ্গালুরুর কাছে চ্যালেঞ্জ কঠিন ছিল। পাঞ্জাব যেভাবে শুরু করেছিল তাতে তা আরো কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু নিজেদের উপর অহেতুক চাপ নেয়নি বেঙ্গালুরু। তারা জানত, উইকেট পড়লে পাঞ্জাব চাপে পড়ে যাবে। সেটাই হলো। বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলা ঘোরালেন ক্রুণাল পাণ্ড্য। মুম্বাইয়ের হয়ে তিনবার আইপিএল জিতেছেন তিনি। জানেন, চাপের মুখে কিভাবে খেলা ঘোরাতে হয়। সেটাই করলেন। চার ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন তিনি। সেই চাপ সামলে উঠতে পারল না পাঞ্জাব।

জরুরি রানরেট যত বাড়ল তত চাপে পড়ল পাঞ্জাব। তাদের ভরসা ছিল শ্রেয়সের উপর। কিন্তু এই ম্যাচে ব্যর্থ তিনি। অধিনায়ক ব্যর্থ হতেই ব্যর্থ হলো দলও। একটার পর একটা উইকেট পড়ল। শশাঙ্ক সিংহ একাই লড়লেন। ৩০ বলে ৬১ রান করলেন। কিন্তু পাশে কাউকে পেলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৮৪ রানে শেষ হলো পাঞ্জাবের ইনিংস। ৬ রানে চ্যাম্পিয়ন হলো বেঙ্গালুরু।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা