ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের হার, ফাইনালে ভারত

আজ ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৯.৩ ওভারে ১২৭ রানে গুটিয়ে গেছে জাকের আলির দল।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
ফাইনালে ভারত
ফাইনালে ভারত |সংগৃহীত

সমীকরণ সহজ করা গেল না, ফাইনালে উঠতে পাকিস্তান ম্যাচের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ভারতের কাছে হেরে গেছে টাইগাররা। শেষ ম্যাচটা রূপ নিয়েছে তাই বাঁচা-মরার লড়াইয়ে।

সুপার ফোরে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ের আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জমিয়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪১ রানে হেরে গেছে টাইগাররা। টানা দুই জয়ে সবার আগে ফাইনালে পৌঁছে গেল ভারত।

সাইফ হাসান অবশ্য একাই চেষ্টা করেছিলেন, ৫১ বলে ৬৯ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। তবে আজ কাউকে পাননি, পারভেজ ইমন (২১) ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কেই যেতে পারেনি!

অথচ ভারতকে ৬ উইকেটে ১৬৮ রানে আটকে দিয়ে দারুণ কিছুর স্বপ্নই দেখছিল বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়েছিল একই রান তাড়া করে। তবে আজ ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৯.৩ ওভারে ১২৭ রানে গুটিয়ে গেছে জাকের আলির দল।

১৬৯ রানের লক্ষ্য। বেশ চ্যালেঞ্জিং তবে অসম্ভব নয়। তবে শুরুটা করে দিয়ে আসতো ওপেনারদের। তবে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি তানজিদ তামিম, দ্বিতীয় ওভারেই বুমরাহর শিকার তিনি।

ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন তানজিদ, তবে ব্যাটে-বলে মেলেনি। সহজ ক্যাচ নিয়েছেন শিবম দুবে (৩ বলে ১ রান)। ৪ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। এরপর ইমনকে নিয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন সাইফ হাসান।

শুরুটা নড়বড়ে হলেও একটা সময় থিতু হয়ে যান ইমন। দু’জনে মিলে পাওয়ার প্লেতে যোগ করেন ৪৪। তবে এরপরই কুলদীপ যাদবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরেন ইমন, আউট হন ১৯ বলে ২১ করে।

আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ এক ইনিংস খেলা তাওহীদ হৃদয় আজ হাল ধরতে পারেননি, ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ১০ বলে ৭ রানে ফেরেন তিনি। ৯.৪ ওভারে ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

পাঁচে নেমে রানের খাতা খুলতে পারেননি শামিম পাটোয়ারী। আর ছয়ে নেমে অধিনায়ক জাকের আলি ৫ বলে ৪ রান করে রান আউট হন। ১২.৩ ওভারে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

পরের ওভারেই ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৬ বলে ফিফটি পূরন করেন সাইফ হাসান। আগের ম্যাচেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফটি পেয়েছিলেন তিনি। তবে সাইফের ব্যাট চলতে থাকলেও সাথে কাউকে পাননি।

সাতে নামা সাইফুদ্দিন ৭ বল খেলে মাত্র ৪ রান করে আউট হন। আটে নামা রিশাদ ৩ বলে ২ রানের বেশি করতে পারেননি। আর মাঠে নামা মাত্রই তানজিম সাকিবকে (০) ফেরান কুলদীপ।

আর ১৭.২ ওভারে সব আশা শেষ করে ফেরেন সাইফ। বুমরাহকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি সীমানার কাছে ধরা পড়েন তিনি। শেষ হয় তার ৩ চার ৫ ছক্কার ৫১ বলে ৬৯ রানের ইনিংস। ১১৬ রানে ৯ উইকেট হারায় দল।

এরপর নাসুম ও মোস্তাফিজ মিলে আরো ১১ রান যোগ করলেও তা কেবল হারের ব্যবধান কমায়। ৩ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় টাইগাররা। আর ৪১ রানের জয় নিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত।

এর আগে, নিয়মিত অধিনায়ক লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দিতে আসেন জাকের আলি। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের জার্সিতে টস করেন তিনি। টসে জিতে নেন আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত।

দুবাইয়ে বল হাতে শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ২ ওভারে দেয় মাত্র ১০ রান। উদযাপনের সুযোগ আসে পরের ওভারেই। তানজিমের করা তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন অভিষেক শর্মা।

তবে ক্যাচ নিতে পারেননি অধিনায়ক জাকের। তখন ৫ বলে মাত্র ৭ রানে ব্যাট করছিলেন অভিষেক। আর জীবন পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন তিনি। পরের ওভারেই শুভমান গিলকে নিয়ে নাসুমের থেকে রান নিয়েছেন ২১!

পরের ওভারে মোস্তাফিজের থেকে আদায় করেন ১৭। ৫ ওভারেই আসে ৫৫ রান। পরের ওভারে এসে সাইফুদ্দিনও দিয়েছেন সমান ১৭ রান। সব মিলিয়ে পাওয়ার প্লেতে এসেছে বিনা উইকেটে ৭২ রান।

বাংলাদেশ প্রথম উইকেটের দেখা পায় পাওয়ার প্লে শেষ হতেই। ৬.২ ওভারে দলীয় ৭৭ রানে প্রথম উইকেটের পতন হয়। ১৯ বলে ২৯ করে তানজিম সাকিবকে ক্যাচ দেন শুভমান গিল।

দ্বিতীয় উইকেট পেতেও দেরি হয়নি রিশাদের, পরের ওভারে বল হাতে এসেই ফেরান শিভাম দুবেকে (২)। ৮৩ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত। এর মাঝেই অবশ্য ২৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অভিষেক শর্মা।

অভিষেক ছিলেন শতকের পথেই, তবে ১১.১ ওভারে দলীয় ১১২ রানে রান আউট হলে শেষ হয় সেই শঙ্কা। তবে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ফেরার আগে করেন ৬ চার ৫ ছক্কায় ৩৭ বলে ৭৫ রান।

একই ওভারে সূর্য কুমার যাদবকে ফেরান মোস্তাফিজ। ভারতীয় দলপতি ফেরেন ১১ বলে ৫ করে। পরের উইকেট এনে দেন তানজিম সাকিব। শুরু থেকেই দারুণ বল করা এই পেসার ফেরান তিলক ভার্মাকে (৫)।

১৪.৩ ওভারে ১৩৪ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত। হরপ্পার কমে আসে ভারতের রানের গতি। প্রথম ১১ ওভারে ২ উইকেটে ১১২ রান করা ভারত শেষ ৯ ওভারে কর‍তে পারে ৫৬ রান।

এই রান পর্যন্ত পৌঁছাতে বড় অবদান হার্দিক পান্ডিয়ার। ২৯ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। আউট হয়েছেন সাইফুদ্দিনের করা ইনিংসের শেষ বলে। ১৫ বলে ১০* রান করেন অক্ষর প্যাটেল।

বল হাতে রিশাদ ২৭ রানে ২, সাকিব, মোস্তাফিজ ও সাইফুদ্দিন নেন একটি করে উইকেট। একমাত্র উইকেট নেয়ার পথে মোস্তাফিজ পেয়েছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৫০ উইকেটের দেখা।