হার দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বুধবার আবু ধাবিতে টসে জিতে ব্যাট করে ৪৮.৫ ওভারে ২২১ রান করে বাংলাদেশ। যা ৪৭.১ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় আফগানিস্তান।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
আফগানিস্তানের কাছে হারল বাংলাদেশ
আফগানিস্তানের কাছে হারল বাংলাদেশ |সংগৃহীত

ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারছে না বাংলাদেশ, কাটছে না এক দিনের ক্রিকেটের দৈন্যদশা। আবারো হেরে গেছে আফগানিস্তানের কাছে। যদিও লড়াই করেছে শেষ পর্যন্ত, তবে আফগানদের কাছে হার সহজে হজম হবার কথা না!

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বুধবার আবু ধাবিতে টসে জিতে ব্যাট করে ৪৮.৫ ওভারে ২২১ রান করে বাংলাদেশ। যা ৪৭.১ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় আফগানিস্তান।

এই হারে কঠিন হয়ে গেল বাংলাদেশের সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সমীকরণ। যদিও এখনো সুযোগ আছে, তবে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। একউ সাথে ধারাবাহিকভাবে ব্যাটারদের ব্যর্থতা বাড়াচ্ছে চিন্তা।

অনেকদিন পর ওয়ানডে খেলতে নেমে যেন সুরটা ধরতে পারছিল না বাংলাদেশ। ফলে পুরো ইনিংসটাই ছিল নড়বড়ে। তবে তাওহীদ হৃদয় আর মেহেদী মিরাজের শতরানের জুটি মান বাঁচিয়েছে দলের।

অবশ্য দেখেশুনেই শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও সাইফ হাসান। তবে অভিষিক্ত সাইফকে রেখে দ্রুতই ফেরেন তানজিদ তামিম। ৩.২ ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে বেঁচে গেলেও ইনিংস বড় হয়নি, ১ বল পরই থামতে হয় তাকে।

আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে তামিম এবার ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে, ফিরেছেন ১০ বলে ১০ রান করে। এক ওভার পর এসে ফের উইকেট তুলে নেন ওমরজাই, এবার ফেরান নাজমুল হোসেন শান্তকে।

হাশমতুল্লাহ শাহিদিকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে ৫ বলে ২ রান নিয়ে ফেরেন সাবেক এই অধিনায়ক। ৬ ওভারে ২৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ। এরপর সাইফ ও তাওহীদ হৃদয় মিলে হাল ধরার চেষ্টা করেন।

তবে ভালো খেলতে খেলতে ফিরে যান সাইফ হাসানও। ওয়ানডে অভিষেকটা মনে রাখার মতো হয়নি এই ওপেনারের। নাঙ্গোলিয়া খারোতের শিকার হয়ে আউট হন ৩৭ বলে ২৬ রান নিয়ে।

সাইফ ফিরলে ১১.৫ ওভারে ৫৩ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপরই হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয় ও মেহেদী মিরাজ। দুজনে গড়েন শতরানের জুটি। তাতে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠলেও কমে আসে রানের গতি।

২৫.১ ওভারে তিন অঙ্কে পৌঁছায় বাংলাদেশ। দেখেশুনে খেলতে খেলতে মিরাজ-হৃদয় দুজনেই পেয়ে যান ফিফটি। ৭৫ বলে দশম ওয়ানডে শতক তুলে নেন হৃদয় আর মিরাজ পঞ্চাশ করেন আরো এক বল কমে।

ফিফটি পূরণ করার পরপরই শতরানের জুটিও পূর্ণ করেন হৃদয়-মিরাজ। তবে এরপর জুটিটা আর বড় হয়নি, রান আউট হয়ে ফিরেছেন হৃদয়। ৮৫ বলে ৫৬ রান করে শেষ হয় তার ইনিংস।

তবে এরপর আরো কিছুক্ষণ লড়াই করেন মিরাজ। তবে বেশিদূর যেত্র পারেননি, ৩৮.৫ ওভারে ৮৭ বলে ৬০ করে রশিদ খানের শিকার হন বাংলাদেশ দলপতি। এরপর রশিদ দ্রুত আরো কিছু উইকেট তুলে নেন।

৪০.৪ ওভারে জাকের আলিকে (১০) ও ৪৪.২ ওভারে নুরুল হাসান সোহানকেও ফেরান রশিদ খান। সোহান আউট হন ১৪ বলে মাত্র ৭ রানে। ১৯৫ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর তানজিম সাকিবের ২৩ বলে ১৭ ও তানভীর ইসলামের ৮ বলে ১১ রানে ৪৮.৫ ওভারে ২২১ পর্যন্ত পৌঁছায় টাইগারদের ইনিংস। রশিদ খান ও আজমতুল্লাহ ওমরজাই নেন তিনটি করে উইকেট।

২২১ রানের ছোট পুঁজি। লড়াই করতে হলে তাই শুরু থেকে চেপে ধরতে হতো আফগানদের। তবে সেই কাজটা করতে পারেননি তাসকিন-হাসান মাহমুদরা। বাড়তে থাকে একটা উইকেটের জন্য অপেক্ষা।

অবশেষে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। অপেক্ষার ইতি টানেন তানভীর ইসলাম। ইবরাহীম জাদরানকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। ইবরাহীম ফেরেন ২৫ বলে ২৩ রান করে।

তবে ততক্ষণে ৫২ রান তুলে ফেলছে আফগানিস্তান। তবে দ্বিতীয় উইকেট আসতে অবশ্য দেরি হয়নি, ১২.১ ওভারে সেদিকুল্লাহ আতালকে (৫) উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান তানজিম সাকিব।

১৩ ওভার শেষে আফগানদের স্কোর দাঁড়ায় ৫৮/২। তবে সেখান থেকে রহমত শাহ ও রাহমানুল্লাহ গুরবাজ মিলে ধরেন হাল। রানে গতি না থাকলেও ভিত গড়ে দেন দু'জনে। জুটিতে ১১১ বলে যোগ করেন ৭৮ রান।

দু'জনেই তুলে নেন ফিফটি। তবে এরপর আর একটা রানও তাদের যোগ করতে দেননি তানজিম সাকিব ও মেহেদী মিরাজ মিলে। পরপর দুই ওভারে তাদের ফিরিয়ে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন বাংলাদেশকে।

৩০.৪ ওভারে এসে সাকিব ফেরান ৭০ বলে ৫০ করে ফেলা রহমত শাহকে। পরের উইকেট আসত দেরি হয়নি, গুরবাজকে পরের ওভারেই ফিরিয়েছেন মেহেদী মিরাজ। ৭৬ বলে ৫০ করে আউট হন তিনি।

৩১.২ ওভারে ১৩৬ রানে ৪ উইকেট হারায় আফগানরা। তবে সেই চাপ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রথমে আজমতুল্লাহ ওমরজাই ও পরে হাশমাতুল্লাহ শাহিদি হাল ধরেন দলের।

আসল কাজটা করে দেন ওমরজাই। যখন বল আর রান প্রায় সমান, তখন ৪৪ বলে ৪০ রান করে দিয়ে যান তিনি। তাতে ব্যবধান কমে আসে। তবে হাশমাতুল্লাহ জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন।

হাশমাতুল্লাহ ৪৬ বলে ৩৩ ও ৮ বলে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ নাবি৷ তাতে ১৭ বল বাকি থাকতেই জিতে যায় আফগানরা।