দেশের ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দিলেন ক্রিকেটার জাহানারা আলম। জাতীয় দলের সাবেক এই পেসার সামনে আনলেন নারী ক্রিকেটের লুকানো এক সত্যকে। তুললেন বিসিবি কর্মকর্তা কর্তৃক যৌন হয়রানির মতো ভয়ঙ্কর অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার ক্রীড়া সাংবাদিক রিয়াসাদ আজিমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নারী দলের সাবেক নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম ও নারী বিভাগের সাবেক ইনচার্জ প্রয়াত তৌহিদ মাহমুদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন জাহানারা।
পাশাপাশি তার উড়ন্ত ক্যারিয়ার হঠাৎ ধ্বংস করে দেয়ার পেছনে জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কোচিং স্টাফ আর খেলোয়াড়ের ভূমিকা ছিল বলেও দাবি করেছেন এই পেসার।
যা নিয়ে বিসিবির কাছে চিঠি লিখেও প্রতিকার পাননি বলে জানিয়েছেন জাহানারা। তার এসব বিস্ফোরক অভিযোগ দেশের ক্রিকেটকে দিয়েছে বড় ধাক্কা। ক্রিকেট বিশ্বে শুরু হয়েছে তোলপাড়, ইমেজ সঙ্কটে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)।
জাহানারা আলম অভিযোগ করেন যে, ২০২২ বিশ্বকাপের সময় তাকে অশালীন প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল দলের ম্যানেজারের তরফ থেকে। এই প্রসঙ্গে টেনে জাহানারা বলেন- ‘মঞ্জু ভাই আমাকে বলেন- তোর পিরিয়ডের আজ কয়দিন চলতেছে?’
‘এতদিন পিরিয়ড থাকে নাকি? মানুষের তো তিন-চার দিনে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। আমার দিকটাও তো দেখতে হবে তোর। পিরিয়ড শেষ হলে আমার কাছে চলে আসিস,’- যোগ করেন জাহানারা।
অন্যদিকে শুধু মঞ্জুরুল নয়, জাহানারা আঙুল তুলেছেন মৃত তৌহিদ মাহমুদের দিকেও। তৌহিদ নাকি বোর্ডের একজন কর্মচারী সরফরাজ বাবুর মাধ্যমে তাকে কুপ্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন।
জাহানারা আরো বলেন, তিনি এই সব অভিযোগ এর আগেও বিসিবিকে জানিয়েছেন। নারী ক্রিকেট কমিটির সাবেক প্রধান নাদেল চৌধুরী অবশ্য মঞ্জুরুলকে এই সব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত করেননি বলেই অভিযোগ তার।
এমনকি জাহানারা বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীকেও বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে তিনিও তাতে কর্ণপাত করেননি বলে জানিয়েছেন জাহানারা। এদিকে তাদের এসব চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তাকে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় এবং দল থেকেও বাদ পড়েন তিনি।
শুধু তাই নয়, তার ক্যারিয়ার থমকে দেয়ার পেছনে দলের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কোচিং স্টাফ এবং খেলোয়াড়ের ভূমিকা ছিল বলেও দাবি করেছেন জাহানারা। আছে বর্তমান অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির নামও।
যেখানে আছে ম্যানেজার ফাইয়াজ, কর্মকর্তা বাবু, কোচ ইমন, ক্রিকেটার ফারজানা হক পিংকি, নাহিদা আক্তার ও রিতুমনির নাম। তাদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার, দলীয় রাজনীতি ও হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন জাহানারা।
নারীদের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো এত উচ্চ পর্যায়ের অভিযোগ সামনে আসায় দেশের পুরো কাঠামোকে যেন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন জাহানারা। এমতাবস্থায় তড়িঘড়ি করে মাঠে নেমেছে বিসিবি, গঠন করেছে তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, ‘জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের এক সাবেক সদস্যের করা অভিযোগে দলের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির অসদাচরণের উল্লেখ রয়েছে।’
বিসিবি জানিয়েছে, ‘অভিযোগগুলোর সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন ও সুপারিশ জমা দেবে। সব খেলোয়াড় ও কর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ, সম্মানজনক ও পেশাদার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বোর্ড বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’



