ইসলামিক সলিডারিটি গেমস আরো গুরুত্ব পাওয়া উচিৎ

ইন্দোনেশিয়া থেকে আলবেনিয়া, কাজাখস্তান থেকে সুরিনাম, তুরস্ক থেকে মোজাম্বিক- সব দেশের খেলোয়াড়রাই অংশ নিচ্ছেন এই সলিডারিটি গেমসে। ‘এর মাধ্যমে বিশ্বের নানা প্রান্তের খেলোয়াড়দের সাথে লড়াই করার সুযোগ হচ্ছে আমাদের।’ জানান বাংলাদেশের কুস্তিগীর হালিমা আক্তার।

বিশ্বের অন্যতম সেরা গেমসগুলোর একটি ইসলামিক সলিডারিটি গেমস
বিশ্বের অন্যতম সেরা গেমসগুলোর একটি ইসলামিক সলিডারিটি গেমস |সংগৃহীত

রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রিয়াদ থেকে
ষষ্ঠ ইসলামিক সলিডারিটি গেমস এখন অতীত। ২১ নভেম্বর গেমসের সমাপনী শেষে একে একে রিয়াদ ছেড়েছেন খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা। তাদের এখন প্রস্তুতি ২০২৯ সালে মালয়েশিয়ার সেলাঙরে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী আসরের জন্য।

যদিও এর আগে আগামী বছর এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথ গেমস আছে। ২০২৮-এ লস এঞ্জেলেসে হবে অলিম্পিক গেমস। এবারের সলিডারিটি গেমসে অংশ নেয়া অনেক খেলোয়াড়েরই প্রতিনিধিত্ব থাকবে পরবর্তী কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে।

অন্য গেমসগুলোর তুলনায় বয়সে ছোট এই সলিডারিটি গেমস। ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে এবার মাত্র ষষ্ঠ আসর শেষ করল। বিশ্বের অন্যতম সেরা গেমসগুলোর একটি ইসলামিক সলিডারিটি গেমস। অলিম্পিক গেমস ও এশিয়ান গেমসের পরেই ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের অবস্থান।

এই গেমসে মুসলিম দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি এবং মাঠে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের একটি বিষয় থাকে। এর সদস্য দেশগুলো তাদের সেরা ক্রীড়াবিদ না পাঠানোয় আকর্ষণ কমিয়ে দিচ্ছে এবং বিশ্বের কাছ থেকে গুরুত্ব আদায় করতে পারছে না এই গেমস।

বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর পাশাপাশি খ্রিষ্টান প্রধান যেসব দেশে ন্যূনতম ১৭ শতাংশ মুসলমানের বসবাস তাদেরকে সুযোগ দেয়া হয় এই ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে।

প্রথমে এই গেমসে শুধুমাত্র মুসলিম খেলোয়ারদেরই অংশগ্রহণের অনুমতি ছিল। পরবর্তীকালে গেমসটির মাধ্যমে ইসলামের প্রচারণার জন্যই অন্য ধর্মের খেলোয়াড়দেরও অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। তবে বেশকিছু ইভেন্টে বেশকিছু ডিসিপ্লিনে বিভিন্ন দেশের তারকা খেলোয়াড়দের না পাঠানোয় গেমসটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেনি, তেমনি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ক্রীড়া ফেডারেশনও মূল্যায়ন করছে না এই ইসলামিক সলিডারিটি গেমসকে।

এতে আকর্ষণ, জনপ্রিয়তা ও মার্কেট ভ্যালু কমেছ। তবে কিছু ইভেন্টে তারকাদের অনুপস্থিতিতে অবশ্য কিছু নতুন খেলোয়াড়ের সুযোগ হচ্ছে বড় আসরে প্রতিনিধিত্ব করার, পদক জিতে উঠে আসছেন লাইমলাইটে।

যদিও পাকিস্তানের অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী নাঈম আশরাফের উপস্থিতি এবং স্বর্ণ জয় গেমসটিকে আরো বেশি আলোকিত করেছে। তবে সব দেশ তাদের সব খেলোয়াড়কে এখানে পাঠায়নি, এমন জানিয়েছেন ইরানের সাবেক ভলিবল খেলোয়াড় এবং বর্তমান ভলিবল ভাষ্যকার পাজেশ কিয়ান। তার মতে, অন্য মুসলিম দেশগুলোর তারকা খেলোয়াড়রা রিয়াদে এলে গেমসটির প্রচারণা আরো ব্যাপকভাবে হতো বিশ্ব মিডিয়ায়।

ইরানের ভলিবল বিশেষজ্ঞ এবং ভলিবল ভাষ্যকার পাজেশ কিয়ানের মতে, কুস্তি ও ভলিবলের মতো কয়েকটি ইভেন্টে তারকা খেলোয়াড়রা অংশ নিচ্ছেন। তবে অন্য ডিসিপ্লিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট তারকা খেলোয়াড়রা অংশ নেননি। ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে সংশ্লিষ্ট তারকারা যদি নিয়মিত অংশ নেন, তাহলে গেমসটি আরো বেশি জনপ্রিয়তা পাবে।

গেমসটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে এই ইরানি ভলিবল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, ‘সদস্য দেশগুলো যেন তাদের সেরা খেলোয়াড়দের পাঠায় এই গেমসে। দায়িত্বটা সংশ্লিষ্ট দেশের ফেডারেশনগুলোর।’

ইন্দোনেশিয়া থেকে আলবেনিয়া, কাজাখস্তান থেকে সুরিনাম, তুরস্ক থেকে মোজাম্বিক- সব দেশের খেলোয়াড়রাই অংশ নিচ্ছেন এই সলিডারিটি গেমসে। ‘এর মাধ্যমে বিশ্বের নানা প্রান্তের খেলোয়াড়দের সাথে লড়াই করার সুযোগ হচ্ছে আমাদের।’ জানান বাংলাদেশের কুস্তিগীর হালিমা আক্তার।

সৌদি আরবে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ইসলামিক সলিডারিটি গেমস। তবে সে অর্থে কিন্তু সৌদি জনগণ জানতেন না গেমসটি সম্পর্কে। সাধারণ মানুষের মতো সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও সেভাবে অবগত ছিলেন না। মিডিয়া অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখেও বুঝতে পারেননি এটি আসলে কিসের।

আর মিডিয়া কর্মীদের উপস্থিতি বলতে ইরানি সাংবাদিকদেরই সংখ্যা বেশি। সেই সাথে মধ্য এশিয়ান দেশ উজবেকিস্তান ও আজারবাইজানের মিডিয়াকর্মী। অথচ আফ্রিকা মহাদেশের মরক্কো, মিসর, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, নাইজেরিয়ার মতো খেলাধুলায় শক্তিশালী দেশগুলো অংশ নিয়েছে এই গেমসে। ছোট্ট পরিসরের মিডিয়া সেন্টারই বলে দিচ্ছিল গেমসটি জনপ্রিতায় বেশ পিছিয়ে।