প্রতিবন্ধী ইউনিট বন্ধে হতবাক প্যারালিম্পিয়ান

এই ইউনিটের লক্ষ্য ছিল প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার স্কুলে পড়ার সুযোগ দেওয়া।

রাজিয়া খাতুন
প্যারালিম্পিক রৌপ্যপদকজয়ী বেন ফক্স
প্যারালিম্পিক রৌপ্যপদকজয়ী বেন ফক্স |বিবিসি

প্যারালিম্পিক রৌপ্যপদকজয়ী বেন ফক্সের প্রাক্তন স্কুলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ছিলো একটি বিশেষ ইউনিট। সম্প্রতি যা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনা হতবাক করেছে ফক্সকে।

সুইন্ডনের বেন ফক্স ছিলেন হুইলচেয়ার বাস্কেটবল দলের সদস্য, যারা প্যারিস ২০২৪-এ রানার্স-আপ হয়েছিলো। তিনি ওয়েস্টলি প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন, যেখানে টানা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি স্পেশাল রিসোর্স প্রভিশন (এসআরপি) চালু ছিল। এই ইউনিটের লক্ষ্য ছিল প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার স্কুলে পড়ার সুযোগ দেওয়া।

কিন্তু সুইন্ডন বোরো কাউন্সিল বলছে, এখন স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলগুলোতেই শিশুদের সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তাই এসআরপি আর প্রয়োজন নেই।

ফক্স জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত তাঁকে দুঃখ দিয়েছে। এই ইউনিট তাঁকে ছোটবেলা থেকেই তাঁর অক্ষমতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে সাহায্য করেছে।

তিনি আজ যা তা হয়ে ওঠার পেছনে এ ইউনিটের বড় ভূমিকা আছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

২৯ বছর বয়সী ফক্স ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ওয়েস্টলি স্কুলে পড়েছেন। তিনি গ্রেট ব্রিটেনের হয়ে টোকিও ২০২০ এবং প্যারিস ২০২৪ প্যারালিম্পিকে হুইলচেয়ার বাস্কেটবল খেলেছেন। ১৬ বছর বয়সে, ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকেও তিনি অলিম্পিক মশাল বহন করেছিলেন।

ফক্স জন্মেছিলেন ভ্যাটার সিনড্রোম নিয়ে। তিনি জানান, এসআরপি তাঁর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে বলেছিলো তুমি প্রতিবন্ধী এতে কোনো সমস্যা নেই। এটা একেবারেই স্বাভাবিক।’

ফক্স জানান, এর মানে তিনি শুধু এমন একজন শিক্ষার্থী ছিলেন যে কিছু বিষয়ে বাড়তি সাহায্য চাইতেন। তিনি কোনো বিশেষ বা আলাদা শিশু ছিলেন না।

এসআরপি-র উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার শিক্ষার্থীদের মতো অভিজ্ঞতা দেয়া। প্রশিক্ষিত কর্মীরা খাওয়া ও টয়লেট ব্যবহারের মতো কাজে সহায়তা করতেন। শিক্ষার্থীরা স্পোর্টস ডে ও আবাসিক কার্যক্রমেও অংশ নিতো।

ফক্স বলেন, ‘একটি স্পোর্টস ডে-ই আমার জীবন বদলে দেয়। কিছুটা সৌভাগ্য আর কিছুটা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি আজ খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে নিতে পেরেছি।‘

তিনি মনে করেন, এসআরপি বন্ধ করা মানে একধাপ পিছিয়ে যাওয়া।

ফক্স মন্তব্য করেন, ‘এটা সম্ভবত এমন কারও সিদ্ধান্ত, যিনি কখনো এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাননি। যিনি বোঝেন না এসআরপি কতটা জরুরি।‘

ওয়েস্টলি প্রাইমারি স্কুলের সহ-প্রধান শিক্ষক রিয়া চিত্রোদা ও অ্যালেক্স মুর বলেছেন, বাস্তবে কিছুই বদলাবে না। তাঁরা এখনো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেবেন।

অ্যালেক্স মুর বলেন, ‘একটা ভুল ধারণা আছে যে, এসআরপি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মানেই আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেব। তা একেবারেই হবে না।‘

চিত্রোদা যোগ করেন, ‘আমাদের কাছে এখনো জায়গা আছে। হুইলচেয়ারের জন্য হোইস্ট আছে। সহজপ্রাপ্য টয়লেট আছে। তাই যদি কোনো শিক্ষার্থী হুইলচেয়ারে (প্রতিবন্ধী ইউনিট) আসে, আমরা তাঁর চাহিদা পূরণ করতে পারব।‘

এদিকে, ওল্ড টাউনের রবার্ট লে কাইং প্রাইমারি স্কুলও তাদের এসআরপি বন্ধ করছে। এ সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়েছেন অ্যালেক্স মোল্ডিং ও তাঁর ছেলে অস্কার (১৭)।

মোল্ডিং বলেন, ‘এই ইউনিট থাকার কারণে আমরা কখনো একা বা আলাদা মনে করিনি। আমরা একটা দলে ছিলাম। আর এটা ভীষণ জরুরি ছি্লো, বিশেষ করে প্রথম দিকে, যখন অভিভাবকরা ভীত হয়ে পড়েন।‘

তিনি বলেন, ‘এসআরপি যেন ছিলো পরিবারের মতো। তারা আমাকে এমনভাবে সহায়তা করেছে, যেভাবে হয়তো আর কেউ কখনো পারত না।‘

তিনি বিশ্বাস করেন, রবার্ট লে কাইং স্কুলে এসআরপি ছিল নিখুঁত মডেল। কারণ এতে প্রতিবন্ধিতার প্রতিটি দিক বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে ছিলো।

অস্কারও তার অভিজ্ঞতা নিয়ে খুশি। তিনি জানান, এসআরপি সহ মূলধারার স্কুলে যাওয়া তাঁকে স্বাভাবিক জীবন দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যদি আমি বিশেষ কোনো স্কুলে যেতাম, আমার মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কারণ আমি তখন আমার সহপাঠীদের সাথে থাকতে পারতাম না। আর এসআরপি থাকার কারণে আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে একই স্কুলে পড়েছি। এটা আমাদের দুজনের জন্যই অসাধারণ ছিলো।‘

কাউন্সিলের বক্তব্য

কাউন্সিল জানিয়েছে, এসআরপি-তে ভর্তির চাহিদা কমে গেছে। আরও বেশি শিশু এখন মূলধারার স্কুলে জায়গা চাইছে, যেখানে তাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র জানান, এ বিষয়ে ওয়েস্টলি ও রবার্ট লে কাইং স্কুল পরিচালনাকারী ট্রাস্টগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এরপর তাঁরা শিক্ষা দপ্তরের নিয়ম মেনে এসআরপি বন্ধের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছের। এতে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। পরবর্তীতে শিক্ষা দপ্তর (ডিএফই) এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সুইন্ডনের শিশু ও তরুণদের শিক্ষাগত চাহিদায় সহায়তা করে যাব। এছাড়া, আমরা তাদের জন্য যথোপযুক্ত বিকল্প ব্যবস্থাও গড়ে তুলব।’

বিবিসি নিউজ অবলম্বনে।