স্ট্রেচারে ট্র্যাক ছেড়ে হাসপাতালে ইমরানুর

‘যদি আমি ২০০ মিটারে স্বর্ণ জিততে পারি তাহলে জানুয়ারির এসএ গেমসে ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।’

ক্রীড়া প্রতিবেদক
স্ট্রেচারে ট্র্যাক ছেড়ে হাসপাতালে ইমরানুর
স্ট্রেচারে ট্র্যাক ছেড়ে হাসপাতালে ইমরানুর |নয়া দিগন্ত

ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরানুর রহমান ২০০ মিটারে দৌড়ান না। তার পছন্দের ইভেন্ট ১০০ মিটার। সাথে ১০০ মিটার রিলে। কিন্তু বাংলাদেশের এই তারকা স্প্রিন্টারকে গতকাল নামানো হলে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে। এই ইভেন্টে স্বর্ণ জিতলে নিজের ভান্ডারে প্রথম ২০০ মিটারে সাফল্য যোগ হতো। সে সাথে তার দল বাংলাদেশ নৌবাহিনী পেত আরেকটি স্বর্ণ।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে যখন তিনি ওয়ার্মআপ করছিলেন তখন জানান, ‘যদি আমি ২০০ মিটারে স্বর্ণ জিততে পারি তাহলে জানুয়ারির এসএ গেমসে ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।’ অথচ এশিয়ান ইনডোরে স্বর্ণ জেতা ইমরানুর ২০০ মিটারে স্বর্ণ তো দূরের কথা দৌড়ই শেষ করতে পারেননি। কিছুদূর যাওয়ার পরই টার্নিংয়ের সময় পড়ে যান। এরপর তাকে দ্রুতই স্ট্রেচারে করে ট্র্যাক থেকে সরিয়ে নিয়ে জাতীয় স্টেডিয়ামের গেটে অপেক্ষমান অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য ওয়ার্ম আপের সময়ই তাকে বেশ ক্লান্ত লাগছিল। প্রচন্ড গরমও ছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ইনজুরি কাটিয়ে ইমরানুরের পক্ষে কি নভেম্বরের ইসলামী সলিডারিটি গেমস এবং এরপর জানুয়ারির এস এ গেমসে ভালো করা সম্ভব হবে।

সেই গত আগস্টে অনুষ্ঠিত প্যারিস অলিম্পিকের পর আর দৌড়াননি তিনি। ইনজুরির জন্য ট্র্যাকের বাইরে ছিলেন। অপারেশন হয়েছে পায়ে। এবারের সামার মিটে ১০০ মিটারে সময়ই বলেছিলেন তিন সপ্তাহ হলো রানিং শ্যু পরে দৌড়াচ্ছি। এই অবস্থায় তাকে ২০০ মিটারে কেন খেলানো হলো সেটাই প্রশ্ন। আর ইমরানুর রহমানও কেন রাজী হলেন ২০০ মিটারে লড়তে। যেখানে তাকে ঘিরেই এস এ গেমসে বাংলাদেশের ১০০ মিটারে স্বর্ণ পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন। সাথে ১০০ মিটার রিলেতেও।

নৌবাহিনীর অ্যাথলেটদের সূত্রে জানা গেছে, হ্যামেস্ট্রিংয়ে চোট লেগেছে ইমরানুরের। যদি মাসল ছিঁড়ে না যায় তাহলে বেশি দিন সময় লাগবে না সুস্থ হতে। তবে মাসল ছিঁড়ে গেলে লম্বা সময় লাগতে পারে। ইমরানুরের ইনজুরি নিয়ে টেনশনে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমেরও। যার হাত ধরে সাফ গেমস ও এসএ গেমসে একের পর এক ১০০ ও ২০০ মিটারে স্বর্ণ জিতেছেন শাহ আলম, বিমল চন্দ্র তরফদার এবং মাহাবুব। তাই সেক্রেটারি শাহ আলমের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ, ‘অবশ্যই চিন্তার কারণ ইমরানের এই ইনজুরি। আশা করবো যেন সে দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠে। তা না হলে এস এ গেমসে স্বর্ণ জয়ের আশা থাকবে না ১০০ মিটারে।’

ইমরানুরের এই ইনজুরির দিনে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতেছেন সেনাবাহিনীর স্প্রিন্টার তারেক রহমান। তিনি সময় নিয়েছেন ২২.০৪। নারীদের ২০০ মিটারে স্বর্ণ জিতেছেন সেনাবাহিনীর শারীফা খাতুন। তার টাইমিং ২৫.২৭ সেকেন্ড। তিনি হারিয়েছেন নৌবাহিনীর তারকা স্প্রিন্টার শিরিন আক্তারকে। শিরিন ২৫.২৭ সেকেন্ডে দ্বিতীয় হন।

এদিকে গতকাল তৃতীয় জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রিংকী বিশ্বাস। ৩ হাজার ও ৫ হাজার মিটারে রেকর্ড গড়ার পর কাল তিনি ১০ হাজার মিটারেও নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন। নড়াইলের মাছ ব্যবসায়ী বাবার মেয়ে জুনিয়র মিটে ভালো করার পর ২০১৮ সালে চুক্তিতে যোগ দেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে।

তিনি জানান, আমার আত্মবিশ্বাস ছিল এবারে তিনটি ইভেন্টেই রেকর্ড করার। যদিও গরমের কারণে সমস্যা হচ্ছিল। এখন আমার দাবি আমরা যারা দূর পাল্লার দৌড়বিদ আমাদের যেন সুযোগ দেয়া হয় এসএ গেমস ও অন্য আন্তর্জাতিক মিটে। আমি চাই দূর পাল্লার দৌড়ে এসএ গেমসে দেশকে পদক দিতে।’

রিংকি বিশ্বাসের এক ভাই আছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। তিনিও অ্যাথলেট। তবে কোনো পদক পাননি। রিংকী জানান, যদি আমি অ্যাথলেটিক্সে না আসতাম, তাহলে ফুটবলার হতাম।

রিংকী আগে ১৫০০ মিটার ও ৩ হাজার মিটারে অংশ নিতেন। সেখানেও তার রেকর্ড আছে। সব মিলে ১২টির মতো রেকর্ড। গত বছর তিনি ৫ হাজার মিটারে হারেন শামসুন্নাহার রত্নার কাছে। রত্না সেই মিটে রেকর্ড গড়েন। এবার তিনি তা ভাঙ্গেন। জানান, ‘আমার জেদ ছিল হারানো সাফল্য পুনরুদ্ধারের।’

কাল এই ১০ হাজার মিটারে দৌড় শেষ করার পুরস্কার পেয়েছেন ম্যাথু চিং মারমা। ৫ প্রতিযোগীর মধ্যে দুইজন আর দৌড় শেষ করতে পারেননি। অন্য দিকে আস্তে আস্তে দৌড়াতে থাকেন ম্যাথু চিং। ফলে তিনি যখন অনেক পরে দৌড় শেষ করেন তখন তার কপালেই জোটে ব্রোঞ্জ পদক। শক্তপোক্ত গড়নের ম্যাথু চিং একই সাথে ফুটবলারও।

তিনি জানান, এই প্রথম আমি ১০ হাজার মিটারে অংশ নেই। ৫ হাজার মিটারেও অংশ নিয়েছিলাম। তখন আমি পারবো না বলে দৌড় শেষ করিনি। এখন আফসোস হচ্ছে কেন ৫ হাজার মিটারে দৌড় শেষ করলাম না।’

এরপর তার ঘোষণা, আমি এখন থেকে একই সাথে ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্স দুটোই খেলবো।