ফুটবলের ইতিহাসে যার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে আনন্দ, গৌরব আর যাদুকরি পায়ের খেলা। তিনি আর কেউ নন, এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। আমাদের সবার চেনা নাম ফুটবলের কিংবদন্তি ‘পেলে’। আজ তার ৮৩তম জন্মদিন। ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ছোট্ট শহর ত্রেস কোরাসোয়েসে জন্ম নেয়া সেই হাস্যোজ্জ্বল ছেলেটিই একদিন হয়ে ওঠেন ‘দুনিয়া দেখা ফুটবলের রাজা’।
লম্বা সময় ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ শেষে ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর পৃথিবীর মায়া ছাড়েন পেলে। তবে চলে গেলেও তিনি আজও জীবন্ত হয়ে আছেন কোটি মানুষের ভালোবাসায়, ফুটবলের ইতিহাসে, প্রতিটি গোলের আনন্দে।

দুনিয়া দেখা ফুটবলের ইতিহাসে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র খেলোয়াড় পেলে। ১৬ বছর বয়সে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক মাঠে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। অংশ নেন চারবারের বিশ্বকাপ আসরে। ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ সালে। এর মধ্যে ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০ তিনবার বিশ্বকাপের ট্রফি জিতে ফুটবলকে রাজকীয় আসনে বসান ব্রাজিলিয়ান এই মহাতারকা।
বিশ্বকাপের ১৪ ম্যাচে ১২ গোল তার মধ্যে ১৯৫৮ সালের সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক এবং ফাইনালে জোড়া গোল যা আজো কিংবদন্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বিশ্বকাপে গোল ও বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি যা আজো কেউ ছুঁতে পারেনি।
এরপর ১৯৭০ সালের নিজের শেষ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন পেলে। ফাইনালে গোল করে ইতালিকে হারিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। সেইসাথে জুলেরিমে ট্রফি নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল।
নিজের ক্লাব ক্যারিয়ারে লম্বা সময় কাটিয়েছেন ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব সাস্তোসে। ক্লাবের হয়ে প্রায় ১৮ বছর খেলেছেন তিনি। সাস্তোসের হয়ে ৬৩৬ ম্যাচে ৬১৮ গোল করেন এই কিংবদন্তি। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে দুই বছর খেলেন ফুটবলের এই মহাতারকা। ফুটবলকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বের নতুন প্রান্তে।

ফিফার স্বীকৃতি অনুযায়ী পেলের অফিসিয়াল গোল সংখ্যা ৭৫৭, আর তার নিজের হিসেবে সেই সংখ্যা ১,২৮৩! জাতীয় দলের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করে এখনো তিনি ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
ক্যারিয়ারে হাজারের বেশি গোল করা পেলের ফিফা স্বীকৃত অফিশিয়াল গোলের সংখ্যা ৭৫৭টি। পেলের হিসেবে ক্যারিয়ারে তার করা গোলের সংখ্যা ১২৮৩টি। ব্রাজিলের জার্সিতে ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল নিয়ে এখনো তিনিই দেশটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ১৯৯৯ সালে পেলেকে 'অ্যাথলিট অব দ্য সেঞ্চুরি' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর ২০০০ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস (আইএফএফএইচএস) পেলেকে বিংশ শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি দেয়। এছাড়াও তিনি ফিফার 'প্লেয়ার অফ দ্য সেঞ্চুরি' খেতাব অর্জন করেন। পেলেকে ব্রাজিলের জাতীয় সম্পদ হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছিল।

যারা ফুটবলকে ভালোবাসেন তাদের হৃদয়ে এক স্মরণীয় নাম হয়ে থাকবেন ফুটবলের রাজা খ্যাত এই কিংবদন্তি খেলোয়াড়। ফুটবলের এই কিংবদন্তি শুধু মাঠে গোল করেননি, গোলের অর্থ বদলে দিয়েছিলেন। তাঁর পায়ের ছোঁয়ায় ফুটবল হয়ে উঠেছিল শিল্প, এক নিখাদ সৌন্দর্যের ভাষা। স্টেডিয়ামের উৎসব পেরিয়ে তিনি ছুঁয়েছিলেন মানুষের হৃদয়। তার পায়ের যাদুতে শৈল্পিক খেলা আর নিখাদ ভালোবাসা ফুটবলকে দিয়েছে এক অনন্য মর্যাদা।
ব্রাজিলের সেই হাস্যোজ্জ্বল ছেলেটি হয়ে উঠেছিলেন সারা বিশ্বের আনন্দ, অনুপ্রেরণা আর গর্বের প্রতীক। ফুটবল দুনিয়ায় ভক্তদের মন জয় করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন মাঠের এই শিল্পী।



