সফল কাবাডি বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রশংসিত বাংলাদেশ

‘আমরা এত বড় আয়োজন আশা করিনি। কাবাডি আমাদের জাতীয় খেলা হলেও জনপ্রিয়তা কম। তবুও আমরা এই বিশ্বকাপের কথা জানতে পেরেছি। আমরা চাই সরকার ও ক্রীড়া সংস্থা জাতীয় খেলাটির দিকে আরো নজর দিক।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন

তারুণ্যের উৎসবকে প্রতিপাদ্য করে ১০ দিনব্যাপী দ্বিতীয় নারী কাবাডি বিশ্বকাপ সোমবার ঢাকায় শেষ হয়েছে। তবে বিশ্ব কাবাডি অঙ্গন এই আয়োজন অনেক দিন মনে রাখবে। এই আয়োজনের কৃতিত্বের দাবিদার সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন (বিকেএফ) এবং তাদের সহযোগীরা।

২০১২ সালে ভারতের পাটনায় প্রথম নারী কাবাডি বিশ্বকাপ হয়েছিল। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় পর বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন নতুন উদ্দীপনা ও সাহস নিয়ে আবারো নারী কাবাডিকে বিশ্বমঞ্চে ফিরিয়ে এনেছে।

বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী ইরানের খেলোয়াড় আসমা ফাখরি বলেন, ‘সবকিছুই অসাধারণ ছিল। বাংলাদেশ খুব ভালোভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে। আমরা অবাক হয়েছি এমন ব্যবস্থাপনা দেখে। এখানকার মানুষ খুব ভালো ও আন্তরিক। আমরা এখানে সবাই মিলে সময়টা খুব উপভোগ করেছি। আশা করি ভবিষ্যতে সব দেশ বাংলাদেশকে অনুসরণ করে এমন আয়োজন করবে। আয়োজকদের ধন্যবাদ। আমাদের জন্য এটি খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা।’

ভারতের অভিজ্ঞ কোচ তেজস্বিনী বাইয়ের কণ্ঠেও ঝরেছে বাংলাদেশের প্রশংসা, ‘চমৎকার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ। এখানে আসার পর আলাদা কিছু মনে হচ্ছে না। সবাই জানে, আমাদের দেশে নিয়মিতই কাবাডির বড় বড় আসর আয়োজিত হয়। এখানে এসে আমার মনে হয়েছে আয়োজন ছিল শীর্ষমানের। এখানকার জল-হাওয়া, আবাসন, খাবার ভীষণ উপভোগ্য। আমি মনে করি বাংলাদেশ প্রমাণ দিয়েছে, তারাও বড় টুর্নামেন্ট আয়োজনের সামর্থ্য রাখে।’

আসরের ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল চাইনিজ তাইপে। গত আসরের মতো এবারো শিরোপা গেছে ভারতের ঘরে। তবে আগের আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া চাইনিজ তাইপের ফাইনালে আসাটা ছিল বড় চমক। চাইনিজ তাইপের কোচ ডেভিড সাই তাইপের প্রথম জাতীয় দলের খেলোয়াড়। ২০০৯ সালে কাবাডিতে হাতেখড়ির পর ডেভিড ভারতের প্রো-কাবাডি লিগে টানা দুই মৌসুম খেলেছেন। দীর্ঘ সময়ে ভারতে থেকে কাবাডি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজ দেশে তাইপেকে পরাশক্তিতে রূপ দিতে বড় ভূমিকা রাখছেন তিনি।

বাংলাদেশের আয়োজন নিয়ে ডেভিড বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা সত্যিই চমৎকার। একদম বিশ্বমানের আয়োজন। তাইপেতে কাবাডি জনপ্রিয় নয়, সেখানে কোনো সমর্থনও নেই। বাংলাদেশ অসাধারণ কাজ করেছে। আমি বিশ্বাস করি এর ফলে অন্য দেশও এমন আয়োজন করতে উৎসাহ পাবে।’

চাইনিজ তাইপের আই মিন লিন টুর্নামেন্টের সেরা রেইডারের খেতাব জিতেছেন। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের আতিথেয়তায় আমি অবাক হয়েছি, কারণ সংবাদে যা শুনেছিলাম তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে অনেক মানুষ এবং সবাই বাংলাদেশকে উৎসাহ দিচ্ছে। এটা দেখে মনে হয়েছে আমাদের দেশের মানুষও যদি আমাদের এভাবেই সমর্থন দেয়, আমরাও বহুদূর এগিয়ে যাব।’

প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে এসে কেনিয়ার অধিনায়ক মার্সি আকিনিয়ি ওবিয়েরো বলেন, ‘এখানকার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। আবহাওয়া কেনিয়ার মতোই। মনে হচ্ছে যেন নিজের দেশে আছি। এটি আমাদের প্রথম বিশ্বকাপ, সবচেয়ে বড় মঞ্চ। আমাদের লক্ষ্য ছিল এখানে আনন্দ করা এবং প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করা।’

জার্মানিও প্রথমবার অংশ নেয় বিশ্বকাপে। তাদের অধিনায়ক এমা অ্যাটলে বলেন,‘অসাধারণ লাগছে। প্রথমে কোর্টে ঢোকার সময় আমরা নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু এখন খুব উপভোগ করছি। এখানে থাকতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমাদের জন্য এটি আলাদা অভিজ্ঞতা। আমরা এখানে এসে অনেক কিছু শিখেছি। কাবাডিতে আমরা নতুন। বাংলাদেশ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগবে।’

সবচেয়ে জোরালো প্রশংসা এসেছে একেএফ (এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন)-এর মহাসচিব মোহাম্মদ সারওয়ার রানার কাছ থেকে, ‘ব্যবস্থাপনা একেবারে বিশ্বকাপের মানের বরং তার চেয়েও বেশি। বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে যে ভবিষ্যতে তারা বড় বড় কাবাডি আসর আয়োজন করতে সক্ষম। আমি বিকেএফকে অভিনন্দন জানাই। অসাধারণ কাজ করেছে। আমি ভাবিনি বাংলাদেশ এমন আয়োজন করতে পারবে, তবে তারা প্রমাণ করেছে। সংগঠন এবং দল দুই দিক থেকেই তারা সফল হয়েছে। এই আয়োজনই বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন এখন নিরাপদ হাতে আছে। আগে ভাবতাম আয়োজনটা খুব সাধারণ মানের হবে, তবে এখন সবকিছু আধুনিক নিয়মে হচ্ছে। আগের চেয়ে অনেক ভালো, অন্য বিশ্বকাপের চেয়েও ভালো। সত্যিই অসাধারণ। আমি বাংলাদেশের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও ধন্যবাদ জানাই এমন একটি আয়োজক দল গঠনের জন্য।’

কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও গুরুত্বের দিক থেকে ফুটবল-ক্রিকেটের সমান মনোযোগ পায় না। তবে এবার বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন প্রতি ম্যাচেই প্রচুর দর্শক আনতে সক্ষম হয়েছে। নিরাপত্তার কড়াকড়ির মাঝেও তারা বিনামূল্যে দর্শকদের গ্যালারিতে জায়গা করে দিয়েছে।

ইডেন কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রায়ই স্টেডিয়ামে ম্যাচ দেখতে এসেছে। তাদেরই একজন তিষা বোস বলেন, ‘আমরা এত বড় আয়োজন আশা করিনি। কাবাডি আমাদের জাতীয় খেলা হলেও জনপ্রিয়তা কম। তবুও আমরা এই বিশ্বকাপের কথা জানতে পেরেছি। আমরা চাই সরকার ও ক্রীড়া সংস্থা জাতীয় খেলাটির দিকে আরো নজর দিক।’