দর্শকদের টিভি দেখার সময় নিয়ে নেটফ্লিক্স ও ইউটিউবের মধ্যে প্রতিযোগিতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, স্ট্রিমিং দুনিয়ায় এই দুই জায়ান্ট এখন একে অপরের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে, যা নেটফ্লিক্স নির্বাহীরাও এখন স্বীকার করছেন। যদিও আগে তারা ইউটিউবকে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করতেন না।
নিলসেনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট টিভি দেখার সময়ের ২০ শতাংশ দখলে ছিল ইউটিউব ও নেটফ্লিক্সের। এর মধ্যে ইউটিউব ছিল ১২.৫ শতাংশ নিয়ে এগিয়ে, যেখানে নেটফ্লিক্সের অংশ ৭.৫ শতাংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে, দুই বছর আগে ইউটিউব মাত্র অর্ধ শতাংশ এগিয়ে থাকলেও এখন ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশে।
দুটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে পদ্ধতির পার্থক্যও স্পষ্ট। নেটফ্লিক্স ঐতিহ্যবাহী টেলিভিশন প্রোগ্রাম, সিনেমা, তথ্যচিত্র, বিনোদন এবং রিয়েলিটি শো তৈরি ও লাইসেন্স দেয়। এই প্রক্রিয়ায় তারা প্রতিভা বাছাই করে আগেভাগেই অর্থ প্রদান করে এবং উৎপাদন ব্যয় বহন করে। প্রায়ই তারা নিজস্ব মূল প্রোগ্রামের মালিকানাও ধরে রাখে।
অন্যদিকে, ইউটিউব যেকোনো ব্যক্তিকে প্রায় যেকোনো কিছু পোস্ট করার সুযোগ দেয়। নির্মাতারা নিজেরা প্রাথমিক খরচ বহন করলেও ভিডিওর মাধ্যমে উপার্জনের অংশ পেয়ে থাকেন। কনটেন্টের অধিকারও তাদের হাতেই থাকে।
রাজস্বের দিক থেকে ২০২৪ সালে ইউটিউব আনুমানিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যেখানে নেটফ্লিক্সের আয় ছিল ৩৯ বিলিয়ন ডলার। তবে অপারেটিং আয়ের দিক থেকে নেটফ্লিক্স এগিয়ে। তারা গত বছর ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অপারেটিং আয় করেছে, যেখানে ইউটিউবের আনুমানিক আয় ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার (মোফাতনাথানসন-এর হিসাব অনুযায়ী)।
দর্শক সংখ্যার দিক থেকেও ইউটিউব এগিয়ে। দিনে গড়ে ৭০ লক্ষ মানুষ ইউটিউব দেখেন, যেখানে নেটফ্লিক্সের গড় দৈনিক দর্শক ৪.৭ মিলিয়ন। তবে সন্ধ্যাবেলা পিক আওয়ারে এই ব্যবধান কমে আসে। এ সময় গড়ে ১১.১ মিলিয়ন আমেরিকান ইউটিউব দেখেন, আর ১০.৭ মিলিয়ন নেটফ্লিক্স।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক জন কোবলিন বলেন, প্রতিযোগিতা এখন গ্রাহকদের সময় দখল ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে তাদের উপস্থিতি ধরে রাখার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। নিলসেন শুধুমাত্র টিভি দেখার সময় হিসেব করলেও বাস্তবে দুটি প্ল্যাটফর্মেরই বিশাল সংখ্যক দর্শক স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও ল্যাপটপে কনটেন্ট দেখেন।
যদিও ইউটিউব কয়েক বছর আগে অরিজিনাল টিভি শো তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করে। তবু তারা তাদের প্রাথমিক পথেই সফল হয়েছে। বিড়ালের ভিডিও থেকে শুরু করে ভিডিও পডকাস্ট পর্যন্ত মানুষ এখন প্রায় সবকিছুর জন্য ইউটিউবের উপর নির্ভর করে।
এদিকে নেটফ্লিক্স ইউটিউব নির্মাতাদের কনটেন্টের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। সম্প্রতি তারা শিশুতোষ অনুষ্ঠান ‘মিস র্যাচেল’ ইউটিউব থেকে লাইসেন্স নিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রচার শুরু করেছে, যা ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। এছাড়া তারা ইউটিউবের জনপ্রিয় কিছু অনুষ্ঠান অধিগ্রহণ করেছে এবং আরো কিছু চ্যানেলের সাথে চুক্তির চেষ্টা করছে।
প্রতিযোগিতায় দু’টি প্ল্যাটফর্ম আলাদা কৌশল নিলেও লক্ষ্য একটাই- বিশ্বব্যাপী দর্শকদের সময় ও মনোযোগ দখল করা।
সূত্র : আল জাজিরা