জাতিসঙ্ঘের শীর্ষ প্রযুক্তি কর্মকর্তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত একটি আন্তর্জাতিক কাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, অপরিকল্পিত উদ্যোগ ঝুঁকি ও বৈষম্য আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
জেনেভা থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার (আইটিইউ) প্রধান ডোরিন বোগডান-মার্টিন বলেন, ‘আমি আশা করি, এআই মানবকল্যাণের কাজে আসবে।’
তবে একইসাথে তিনি বলেন, দ্রুত এগিয়ে যাওয়া এই প্রযুক্তির ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপকহারে চাকরি হারানোর ভয়, ডিপফেক, ভুয়া কনটেন্ট ছড়ানো এবং সমাজের ভারসাম্য ভেঙে পড়ার আশঙ্কা।
এমন পরিস্থিতিতে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবি।
আইটিইউ’র প্রধান আরো বলেন, ‘একটা সঠিক কাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টি এখন অত্যন্ত জরুরি। এজন্য বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।’
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চীনের চেয়ে এগিয়ে থাকতে দেশজুড়ে কম নিয়ন্ত্রণভিত্তিক একটি আগ্রাসী কৌশল ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্পের ঘোষণায় ৯০টির বেশি প্রস্তাব থাকলেও মূলত বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হবে।
সরকার বলেছে, বেসরকারি খাতে এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য ঝামেলা ও কঠোর নিয়মনীতি দূর করবে তারা। এতে প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি ঘটবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনায় উদ্বেগ আছে কিনা, এমন প্রশ্নে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি বোগডান-মার্টিন।
তিনি বলেন, ‘আমি এখনো পরিকল্পনাটি পুরোপুরি বোঝার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এআই বিষয়ে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান দেখতে পাচ্ছি। এই ভিন্ন অবস্থানের বিষয়ে সংলাপ প্রয়োজন।’
তার তথ্য অনুযায়ী, এখনো বিশ্বের ৮৫ শতাংশ দেশের কোনো জাতীয় এআই নীতিমালা নেই।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব কৌশল নেয়া হয়েছে, সেগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো উদ্ভাবন, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত বিনিয়োগের ওপর জোর দেয়া।
আইটিইউ’র প্রধান আরো বলেন, ‘তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে এখন যে বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন, তা হলো এআই-এর নিয়ন্ত্রণ কতটা দরকার আর কতটা দরকার নয়, সেটি ঠিক করা।’
আইটিইউ নতুন প্রযুক্তির মান নির্ধারণে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানটি এআই বিষয়ে বৈশ্বিক সংলাপে নেতৃত্ব দিতে পারে বলেও মনে করেন বোগডান-মার্টিন। তিনি বলেন, ‘এখন একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ খণ্ড খণ্ড উদ্যোগ সবার উপকারে আসবে না।’
তবে তিনি এআই-এর ‘মন্ত্রমুগ্ধকর অগ্রগতি’কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই প্রযুক্তি শিক্ষা, কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতসহ নানা ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। তবে এ সুবিধা যেন সবার কাছে পৌঁছায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
বোগডান-মার্টিন বলেন, ‘বিশ্বে এখনো ২৬০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে তারা এআই থেকেও বঞ্চিত।’ তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে যদি সবার উপকার করতে হয়, তাহলে এই বিভাজন দূর করতেই হবে। সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।
আইটিইউর ১৬০ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বোগডান-মার্টিন। আইটিইউ’র প্রধান বলেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোও জরুরি। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনো নারীদের সংখ্যা খুব কম, বিশেষ করে এআই খাতে নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম।’
নিউ জার্সিতে বেড়ে ওঠা এবং আইটিইউতে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা এই নারী বলেন, প্রথম নারী মহাসচিব হওয়াটা গর্বের। ‘আমি কাচের দেয়াল ভাঙছি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথ তৈরি করছি।’
তবে তিনি স্বীকার করেন, এই ভূমিকায় প্রত্যাশার চাপ অনেক। ‘শুধু সফল হওয়া নয়, অনেক সময় অতিরিক্ত কিছুও প্রমাণ দিতে হয়।’
আগামী বছর তার চার বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ সময় ট্রাম্প প্রশাসন তাকে পুনরায় সমর্থন দিচ্ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন বোগডান-মার্টিন। তিনি বলেন, ‘এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে।’
সূত্র : এএফপি/বাসস