গ্রাহক সেবায় নবদিগন্তের সূচনা করল রবির জেনারেটিভ এআই

২০১৮ সালে রবি প্রথমবারের মতো ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাটবট-ভিত্তিক গ্রাহক সেবা শুরু করে। তারপর ২০২০ সালে কোভিড লকডাউনের সময় রবি দেশের প্রথম টেলিকম অপারেটর হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ -এ চ্যাটবট সেবা চালু করে।

সংগৃহীত

বর্তমানে মানবজীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা করছে জেনারেটিভ এআই। কাজের গতি ও স্বাচ্ছন্দ্য বাড়িয়ে জীবনযাত্রার মান করছে উন্নত। গ্রাহক সেবায় জেনারেটিভ এআই-কে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে কাজে লাগিয়ে প্রায় ৫ কোটি ৬৫ লাখ গ্রাহককে সন্তোষজনক সেবা প্রদান করছে রবি।

গ্রাহককে কাস্টমাইজড সেবা দেয়া আগে বেশ কঠিন ছিল। বিশেষ করে অপেক্ষার সময় বিবেচনা করলে, গ্রাহক সেবার গুণগত মান ধরে রাখা ছিল চ্যালেঞ্জিং। যদিও রবির কল সেন্টারে গড় অপেক্ষার সময় মাত্র ৪ সেকেন্ড, তবে পিক আওয়ারে তা বাড়তে পারে ৪-৫ মিনিট পর্যন্ত। রবির ওয়াক-ইন সেন্টারে গড় অপেক্ষার সময় ৩ মিনিট। তবে এখন জেনারেটিভ এআই-চালিত চ্যাটবট চালু করার মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত এবং অভাবনীয় কাস্টমাইজড সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

এই সাফল্যটি একদিনে অর্জিত হয়নি। এটি দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং উন্নয়নের ফসল। ২০১৮ সালে রবি প্রথমবারের মতো ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাটবট-ভিত্তিক গ্রাহক সেবা শুরু করে। তারপর ২০২০ সালে কোভিড লকডাউনের সময় রবি দেশের প্রথম টেলিকম অপারেটর হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ -এ চ্যাটবট সেবা চালু করে। এসব প্রথমিক চ্যাটবট ছিল দৈনন্দিন এবং সাধারণ কাজ, যেমন: রিচার্জ বা প্যাক অ্যাকটিভেশনের জন্য উপযুক্ত। তবে গ্রাহকদের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে তাদের প্রশ্নগুলোও হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক।

আরো উন্নত সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে রবি একটি জেনারেটিভ এআই চ্যাটবট চালু করে- আগে চ্যাটবট শুধু নির্ধারিত কিছু উত্তর দিত, এখন নতুন জেনারেটিভ এআই চ্যাটবট গ্রাহকের প্রশ্ন বুঝে নিজের মতো করে স্মার্ট ও প্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে পারে। এটি রবির গ্রাহক সেবাকে আরো উন্নত করার একটি বড় পদক্ষেপ। নতুন এই চ্যাটবট মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং রবির ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকরা পাচ্ছেন আরো সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় কথোপকথনের অভিজ্ঞতা।

আগের মতো নির্দিষ্ট নিয়মে জেনারেটিভ এআই শুধু যান্ত্রিক উত্তর দেয় না। বরং পরিস্থিতি বা কথার মানে বুঝে সাবলীল উত্তর তৈরি করার চেষ্টা করে। এটি কথোপকথনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সহানুভূতির সাথে উত্তর দেয় এবং যদি কোনো সমস্যা সমাধান না করতে পারে তবে তা গ্রাহক সেবায় নিয়োজিত নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দেয়।

রবির কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্সের ডিজিটাল চ্যানেল অপারেশনের ম্যানেজার রাহাতুল মাহমুদ জেনারেটিভ এআই চ্যাটবট তৈরি করার যাত্রা সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের জেনারেটিভ এআই চ্যাটবট তৈরি করা শুধুমাত্র প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয় ছিল না, বরং এটি ছিল আমরা কিভাবে গ্রাহকদের সেবা দেই, সেটি নতুন করে ভাবার একটি সুযোগ। আমরা গ্রাহকদের অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার চেষ্টা করছি। যার মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন নতুন কিছু শিখেছি। কৌতূহল, সহানুভূতি ও উদ্ভাবনের এক সুন্দর সমন্বয় ছিল এটি। যাতে প্রতিটি যোগাযোগ হয়ে উঠে মানবিক, সহায়ক ও অর্থপূর্ণ।’

রবির জেনারেটিভ এআই চ্যাটবটের বিশেষত্ব হলো এর সক্রিয় সহায়তা। যেমন যদি কোনো গ্রাহক ডাটা প্যাক চায়, তাহলে চ্যাটবট শুধু বিভিন্ন অপশনই দেখায় না; বরং গ্রাহকের পছন্দ, দাম, ডাটার পরিমাণ ও মেয়াদ দেখে তার জন্য উপযুক্ত প্যাকগুলো সাজিয়ে দেয়। পাশাপাশি ভিন্ন বিকল্পও জানিয়ে দেয়।

হ্যাঁ বা না এর মত সীমিত রেসপন্স না করে, রবির নতুন জেনারেটিভ এআই চ্যাটবট গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে প্রাসঙ্গিক তথ্য নির্ভর রেসপন্স করে থাকে। যেমন ধরুন, যদি একজন গ্রাহক চ্যাটবটকে জিজ্ঞেস করে মালয়েশিয়াতে কি রোমিং সার্ভিস পাওয়া যাবে? তাহলে শুধু হ্যাঁ বা না- না বলে চ্যাটবটটি গ্রাহককে রোমিং সার্ভিসটি উপভোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়ার পাশাপাশি প্রযোজ্য চার্জসহ গ্রাহকের জন্য উপযোগী রোমিং বান্ডিল অফারগুলো তুলে ধরবে।

এ বছরের জানুয়ারিতে চালুর পর থেকে, প্রতি মাসে গড়ে ১২ লাখ কথোপকথন করছে চ্যাটবট। প্রতি মাসে ১ লাখের বেশি গ্রাহককে পরামর্শ দিয়ে সেবা প্রদান করছে এটি। প্রতিটি ইন্টারঅ্যাকশন এর সাথে চ্যাটবটের পারফরম্যান্স আরো উন্নত হচ্ছে।

রবির চ্যাটবটের সফলতার জন্য স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়ানোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে, বাংলা ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট অনুসারে চ্যাটবটকে সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম করতে হয়েছে। এর মাধ্যমে, চ্যাটবট গ্রাহকদের সাথে আরো প্রাসঙ্গিক ও কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারছে।

রবির এআই ও ডেটা সায়েন্স টিমের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট এস এম তৌহিদুল ইসলাম তন্ময় তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘বাংলা ভাষা শেখানোর প্রক্রিয়ায় আমি বুঝতে পেরেছি আমাদের ভাষা কতটা সমৃদ্ধ এবং গভীর ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা করার জন্য কতটা উপযোগী। এআই-এর সাথে কাজ করতে গিয়ে আমি আমার নিজস্ব সাংস্কৃতিক মূলের কাছাকাছি চলে এসেছি।’

রবি তাদের চ্যাটবটের উন্নতি অব্যাহত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ভয়েসবটের উন্নয়নের কাজ চলছে এবং রবির এজেন্টদের আরো ভালোভাবে সহায়তা করতে একটি জেনারেটিভ এআই-চালিত অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরি করা হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি খুব শিগগিরই আসবে। রবি তাদের চ্যাটবটটিকে মাই রবি এবং মাই এয়ারটেল অ্যাপসে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এর ফলে, ২ কোটির বেশি সক্রিয় অ্যাপ ব্যবহারকারী সহজেই এআই-চালিত গ্রাহক সেবার সুবিধা পাবে, যা গ্রাহকদের ক্ষমতায়িত করবে। ডিজিটাল সমাজের উন্নতির সাথে শিগগিরই টেলিকম গ্রাহক সেবার প্রধান চ্যানেল হয়ে উঠবে সেলফ-কেয়ার অ্যাপস।

রবির চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব আহমাদ বলেন, ‘এটি শুধু একটি চ্যাটবট আপগ্রেড করা নয়। এটি রবির গ্রাহক সেবা প্রদানের ধরনে একটি মৌলিক পরিবর্তন। আমরা শুধু এমন বট তৈরি করছি না যা মানুষের মতো কথা বলে- আমরা এমন সিস্টেম তৈরি করছি যা মানুষের মতো শোনে। কারণ প্রকৃত সেবা তখনই শুরু হয় যখন সহানুভূতির সাথে শোনা হয়।’ বিজ্ঞপ্তি