বাণিজ্যিক মহাকাশ সংস্থা টাইটানস স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ এই বসন্তে নতুন মহাকাশচারী প্রার্থী নির্বাচিত করেছে। সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ইতালির তরুণ বিজ্ঞানী বেনেদেত্তা ফাচিনি।
তিনি এক বা দু'টি নয়, বরং বহু নাসা সিটিজেন সায়েন্স প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছেন। যেমন- ক্লাউডস্পটিং অন মার্স, অ্যাক্টিভ অ্যাস্টেরয়েডস, ডেইলি মাইনর প্ল্যানেট, গ্লোব, এক্সোঅ্যাস্টেরয়েডস ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল কলাবোরেশন (আইএএসসি)।
সম্প্রতি তিনি মহাকাশচারী হওয়ার প্রথম ধাপে নির্বাচিত হয়েছেন। তার পথচলা, অনুপ্রেরণা ও স্বপ্ন নিয়ে তার সাথে কথা বলেছে নাসা সায়েন্স এডিটরিয়াল টিম। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের অনুবাদ উপস্থাপন করা হলো।
প্রশ্ন : আপনি নাসা সিটিজেন সায়েন্স সম্পর্কে কিভাবে জানলেন?
বেনেদেত্তা : আমি আমার সহকর্মী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিটিজেন সায়েন্স নিয়ে অনেক মানুষের আলোচনা দেখতাম। বিষয়টা আমাকে কৌতূহলী করে তোলে। আমি বিষয়টি নিয়ে কিছু অনলাইন গবেষণা করি। এছাড়াও ইতোমধ্যেই এ প্রকল্পে যুক্ত কয়েকজন সহকর্মীর কাছ থেকেও তথ্য নিই। অবশেষে নাসার সিটিজেন সায়েন্স প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই। এর বৈচিত্র্য আমাকে গভীরভাবে মুগ্ধ করে।
প্রশ্ন : এই নাসা প্রকল্পগুলোতে কাজ করে আপনি কী অর্জন করেছেন বলে মনে করেন?
বেনেদেত্তা : সবচেয়ে বড় জিনিস হলো নতুন কিছু আবিষ্কারের কৌতূহল আর ধৈর্য। এ প্রকল্পে প্রচুর মনোযোগ ও ধৈর্যের প্রয়োজন। আমি আনন্দিত হয়েছিলাম এটা জেনে যে, নাসা গবেষণা পরিচালনার জন্য সাধারণ মানুষের ওপর নির্ভর করে। এছাড়াও তাদেরকে সহজ সরঞ্জাম ব্যবহার করে নতুন কিছু শেখার সুযোগ দেয়।
আমি আরো বাস্তব ডেটা বিশ্লেষণ ও মহাজাগতিক বস্তু শনাক্তকরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এটি প্রকৃত গবেষণার প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে সাহায্য করবে। আমার প্রিয় অংশ ছিল মঙ্গল রিকনেসান্স অরবিটারের মার্স ক্লাইমেট সাউন্ডার দ্বারা সংগৃহীত ডেটায় মেঘের প্যাটার্ন চেনা শেখা।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব শিখেছি। এখন আমি অনেক সিটিজেন সায়েন্টিস্টকে চিনি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আমাকে প্রতিদিন অনেক কিছু শেখায়।

প্রশ্ন : সিটিজেন সায়েন্সের বাইরে আপনি কী করেন?
বেনেদেত্তা : আমি একজন শিক্ষার্থী ও সাইন্স কমিউনিকেটর। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্কুল, ওয়েবিনারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। এছাড়াও ইতালির বিভিন্ন মহাকাশ উৎসবে তরুণ শিক্ষার্থী থেকে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত বিস্তৃত দর্শকদের সাথে আমার যোগাযোগের সুযোগ হয়।
সম্প্রতি আমি একটি বড় মাইলফলক অর্জন করেছি। আমি বাণিজ্যিক মহাকাশ সংস্থা টাইটানস স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক একজন মহাকাশচারী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। শিগগিরই মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু করতে যাচ্ছি। এটা আমার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ। একজন মহাকাশচারী হওয়া এবং সরাসরি মানব মহাকাশযাত্রা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অবদান রাখতে পারবো।
প্রশ্ন : মহাকাশচারী হতে হলে কী কী গুণাবলি থাকা প্রয়োজন?
বেনেদেত্তা : যতটা সম্ভব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। কেবল একাডেমিক সাফল্য নয়, পেশাগত ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিটি দক্ষতাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কাজে আসতে পারে। যেমন: দলগত কাজের দক্ষতা, বেঁচে থাকার কৌশল, ডুবুরি বা পাইলট হিসেবে অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন ভাষার জ্ঞান ও ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা।
আর একটা মিথ ভাঙতে চাই : মহাকাশচারী হতে আইনস্টাইন বা অলিম্পিক ক্রীড়াবিদের মতো ফিট হতে হবে না। আপনাকে আপনার কাজে ভালো ও সুস্থ থাকতে হবে।
প্রশ্ন : সিটিজেন সায়েন্স আপনার ক্যারিয়ারে কীভাবে সাহায্য করেছে?
বেনেদেত্তা : সিটিজেন সায়েন্স আমার সাইন্স কমিউনিকেটর হিসেবে ক্যারিয়ারে খুব সহায়ক ছিল। কারণ এটি আমাকে মানুষকে দেখানোর সুযোগ দিয়েছে যে, যে কেউ মহাকাশ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। একই সময়ে, এর (আইএএসসি প্রকল্প) মাধ্যমে আমি অনেক শিক্ষার্থীর পরামর্শদাতা ও রেফারেন্স পয়েন্ট হয়ে উঠতে পেরেছি।
বাস্তব ডেটা বিশ্লেষণে আমি হাতে-কলমে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তা আমার একাডেমিক ক্যারিয়ারেও খুব সহায়ক ছিল। আমি আগে কখনো বাস্তব ডেটা নিয়ে কাজ করিনি। এ অভিজ্ঞতা আমার পদার্থবিজ্ঞানের ডিগ্রি প্রোগ্রামের ব্যবহারিক কোর্সগুলোতে অত্যন্ত মূল্যবান প্রমাণিত হয়েছে।
প্রশ্ন : যারা মহাকাশচারী বা সিটিজেন সায়েন্টিস্ট হতে চায়, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
বেনেদেত্তা : অন্য সিটিজেন সায়েন্টিস্টদের জন্য আমার পরামর্শ হলো কৌতূহলী ও অবিচল থাকা। অন্যদের কাছে সাহায্য চাওয়া। অন্য সহকর্মীদের সথে যোগাযোগ করতে ভয় না পাওয়া। কারণ নাসা সিটিজেন সায়েন্স প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। প্রতিটি ছোট অবদানই পরিবর্তন আনতে পারে।
মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন থাকলে যতটা সম্ভব অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করুন। একাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি হাতে-কলমে দক্ষতা, দলগত কাজের মানসিকতা, অভিযোজন ক্ষমতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা সমান গুরুত্বপূর্ণ।
আবেগ ধরে রাখতে হবে। কখনো কৌতূহল হারাবেন না। মহাকাশচারীর পথ চ্যালেঞ্জিং। প্রথমবার প্রত্যাখ্যানের পর হাল ছেড়ে দেবেন না। এমন অনেক মানুষ থাকবে যারা আপনার মন পরিবর্তন করতে ও স্বপ্ন ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করবে। এমনকি এটা আপনার পরিবার থেকেও হতে পারে। কিন্তু বাধার সামনে থেমে যাবেন না। সবচেয়ে বড় অনুশোচনা হলো যে, আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা না করা।
আমার অনুপ্রেরণা ইতালীয় মহাকাশচারী পাওলো নেসপোলির উদ্ধৃতি- 'আপনাকে অসম্ভব জিনিস স্বপ্ন দেখার সামর্থ্য ও সাহস থাকতে হবে। সবাই সম্ভব জিনিস স্বপ্ন দেখতে পারে। অসম্ভব কিছু স্বপ্ন দেখুন। এমন একটি জিনিস যা আপনি জোরে বললে, মানুষ আপনাকে দেখে বলে- অবশ্যই কঠোর অধ্যয়ন করলে তুমি সেটা করতে পারবে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে কেউ তা বিশ্বাস করে না। সেই অসম্ভব স্বপ্নগুলোই চেষ্টা করার মতো ।'
প্রশ্ন : আমাদের সঙ্গে আপনার গল্প ভাগ করার জন্য ধন্যবাদ! আর কিছু বলতে চান কি?
বেনেদেত্তা : নাসা সিটিজেন সায়েন্স টিমকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই প্রকল্পগুলো শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ জীবন্ত রাখতে ও তাদেরকে এই ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ক্যারিয়ারের পথে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আমি যে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করতে অবদান রেখেছি, তা জানা অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক। এছাড়াও এটি বিশ্বের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যেতে, কৌতূহলী থাকতে ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের পথ অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে।
শেখার পাশাপাশি এই প্রকল্পগুলোতে অংশ নেওয়ার সুযোগ অনুপ্রেরণামূলক। সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—আপনার পটভূমি যাই হোক না কেন, আপনি বিজ্ঞানে বাস্তব প্রভাব রাখতে পারেন।