দ্রুতই বিকশিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। কর্পোরেট বিশ্বে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসছে প্রযুক্তিটি। এতে কর্মসংস্থানে ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপ্লব। ইতোমধ্যে অনেকেই এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি সিলিকন ভ্যালির প্রখ্যাত প্রযুক্তি বিনিয়োগকারী ও ভারতীয়-মার্কিন বিলিয়নেয়ার বিনোদ খোসলার একটি মন্তব্য কর্পোরেট জগতে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী উচ্চ-বেতনের চাকরির ৮০ শতাংশই প্রতিস্থাপিত হতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্বারা। জ্যাক অল্টম্যানের সাথে এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে ওই মন্তব্য করেন তিনি।
খোসলা সান মাইক্রোসিস্টেমসসহ একাধিক সফল প্রযুক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি ৯.১ বিলিয়ন ডলারের মালিক। তার মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিকাশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কর্পোরেট বিশ্বে আমূল পরিবর্তন আনবে এবং ফরচুন ৫০০ তালিকাভুক্ত অনেক বড় বড় কোম্পানির উপরও এর সরাসরি প্রভাব পড়বে।
অতীতের ডিজিটাল রূপান্তরের প্রসঙ্গ টেনে আনেন খোসলা। যেখানে টয়স, ইউএস ও নোকিয়ার মতো বড় কোম্পানিগুলো প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে না পেরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। খোসলার মতে, এবার সেই একই পরিস্থিতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ঘটবে। তিনি বলেন, এআই ভবিষ্যতে মানুষের দ্বারা সম্পাদিত অধিকাংশ উচ্চ-মূল্যের কাজ যেমন প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, আইনি পরামর্শ, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ইত্যাদিতে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হবে।
খোসলা আরো বলেন, ‘২০৪০ সালের মধ্যে কাজের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে। কারণ মানুষ তখন কাজ করবে শুধুমাত্র তারা যদি সত্যিই কাজ করতে চায়।’ এর অর্থ কর্মসংস্থান তখন আর জীবনের অনিবার্য প্রয়োজন নয়, বরং এক ধরনের পছন্দে রূপ নেবে।
তিনি ২০৩০ সালের মধ্যেই প্রতিটি ঘরে একটি করে রোবট থাকার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন, যারা রান্না, পরিষ্কারসহ নানা বিরক্তিকর কাজ সম্পাদন করবে। প্রযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর করবে। তবে একইসাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতেও আমূল পরিবর্তন আনবে।
তবে খোসলা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তিনি সতর্ক করেন, দমনমূলক শাসকগোষ্ঠী তাদের নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারে। এটি যুদ্ধের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে।
যদিও তিনি বলেননি যে এআই প্রযুক্তি শুধুই নেতিবাচক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে। তবে এর অপব্যবহারের আশঙ্কাকেও তিনি উড়িয়ে দেননি।
খোসলার এই মন্তব্যগুলো প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিকাশমান পরিস্থিতিতে তার মতামত বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি সম্ভাব্য বিপ্লবের ইঙ্গিত দেয়।
সূত্র : আল জাজিরা