রমজানের মাসআলা

তারাবির নামাজে দ্রুত তেলাওয়াতের বিষয়ে ইসলাম কী বলে

আমরা ইসলামের যেকোনো বিধান যাচাই করব মূলত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দেখে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
সংগৃহীত

রমজান মাসে তারাবির নামাজে বিভিন্ন মসজিদে কোরআন খতম করা হয়, যাকে আমরা খতম তারাবি বলি। অনেক মসজিদেই তারাবিতে তেলাওয়াত ধীরে ধীরে করলেও অনেক মসজিদে আবার খুব দ্রুতও করা হয়। অনেকে বলেন, তারাবির নামাজে এত দ্রুত তেলাওয়াত করলে নামাজ হয় না। অনেকে বলেন, মাকরূহ। অনেকে বলেন জায়েজ। তারাবির নামাজে দ্রুত তেলাওয়াত নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের মতামত দেন। আসলে কোন মতটি সঠিক।

আমরা ইসলামের যেকোনো বিধান সঠিক-বেঠিক যাচাই করব মূলত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দেখে। এই যে তারাবিতে দ্রুত কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে বিতর্ক, এটাও আমরা যাচাই করব নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দেখে। তারাও তো তারাবিতে কোরআন খতম করেছেন। তারা কিভাবে তেলাওয়াত করতেন। দ্রুত নাকি ধীরে ধীরে?

হজরত আবু উসমান নাহদী রহ. বলেন, হজরত উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু তারাবির ইমামতির জন্য তিনজন কারীকে নামাজ পড়াতে নির্দেশ দিলেন। তাদের মধ্যে দ্রুতগতিতে (হদরে) তেলাওয়াতকারীকে (প্রত্যেক রাকআতে) ৩০ আয়াত করে পড়ার, মাঝারি গতিতে (তাদবীরে) তেলাওয়াতকারীকে ২৫ আয়াত করে পড়ার এবং ধীরগতিতে (তারতীলে) তেলাওয়াতকারীকে ২০ আয়াত করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৪/২৬১ হা. নম্বর ৭৭৩)

ইমাম বুখারীর ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, তারতীল বা ধীরগতিতে তেলাওয়াত যদিও মুস্তাহাব, কিন্তু দ্রুত তেলাওয়াতও অপছন্দনীয় নয়।

হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হজরত দাঊদ আ.-এর জন্য তেলাওয়াতকে সহজ করে দেয়া হয়েছিল (অর্থাৎ খুব দ্রুত পড়তে পারতেন)। তিনি তার বাহনগুলোতে গদি বসাতে নির্দেশ দিয়ে খাদেমরা গদি বসানোর আগেই এক খতম করে ফেলতেন। তবে অক্ষর বা অর্থের বিকৃতি ঘটে এমন তেলাওয়াত সবসময়ই পরিত্যাজ্য। ইবনে মাসউদ রাজিয়াল্লাহু আনহু এমন তেলাওয়াতের ওপর প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। (ফাতহুল বারী ২/৮৯, দারুল মারিফা বৈরুত)

ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দে এসেছে, তারাবির নামাজে এত দ্রুত তেলাওয়াত করা যে কিছুই বোঝা যায় না, এমন তেলাওয়াতে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। (ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ৪/২৫৭)

সার কথা হলো, তারাবির নামাজে সবচেয়ে উত্তম ধীরেসুস্থে মনের মাধুরী মিশিয়ে আল্লাহ তায়ালার কালাম তেলাওয়াত করা। প্রতিটি অক্ষর, মাখরাজ, মাদ, গুন্নাহ ও সিফাত আদায় করে প্রতিটি আয়াত তেলাওয়াত করা।

তবে, খুব ধীরে তেলাওয়াত করলে অনেক মুসল্লীরই ধৈর্য হয় না। অনেক বয়স্ক বা রোগী মুসল্লী থাকেন, যাদের খুব আগ্রহ থাকে রমজানে খতম তারাবি পড়বেন। এত ধীরে তেলাওয়াত করলে তারা আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও খতম তারাবি পড়া থেকে বঞ্চিত হবেন। এ কারণে খুব ধীরেও নয়, আবার খুব দ্রুতও নয়, বরং মধ্যম গতিতে তারাবির নামাজে তেলাওয়াত করা যেতে পারে।