রমজানের শেষ দশক

মসজিদে ইতেকাফ করলে যে লাভ

আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন।

নয়া দিগন্ত অনলাইন

Location :

Bangladesh
সংগৃহীত

রমজানের শেষ দশকে প্রায় সব মসজিদে ইতেকাফ করা হয়ে থাকে। ইসলামে ইতেকাফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল।

ইতেকাফের পরিচয়

ইতেকাফ আরবী শব্দ। যার অর্থ হলো অবস্থান করা, অভিমুখী হওয়া, নিবেদিত হওয়া, নিরবচ্ছিন্ন হওয়া ইত্যাদি।

পরিভাষায় ইতেকাফ বলা হয় আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততাকে গুটিয়ে, এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়।

ইতেকাফের বিধান বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতেকাফের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর ঘরে গিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। যেখানে দুনিয়াবি ব্যস্ততা নেই। নেই দুনিয়াবি অন্য চিন্তা-ফিকির। নিজেকে আল্লাহর প্রতি সমর্পিত করে কেবলই পরম করুণাময়ের প্রতি মগ্ন হওয়ার উত্তম আমল ইতেকাফের চেয়ে আর কী আছে।

ইতেকাফের আমল কিন্তু নতুন নয়। হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামও ইতেকাফ করেছেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে সেইসব লোকের জন্য পবিত্র করো, যারা (এখানে) তাওয়াফ করবে, ইতেকাফ করবে এবং রুকু ও সিজদা করবে।’ -সূরা বাকারা (২) : ১২৫

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইতেকাফের বিধান হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের যুগেও ছিল।

আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। এক বছর ইতেকাফ করতে না পারায় পরের বছর রমজানে ২০ দিন ইতেকাফ করেন।

ইতেকাফ তিন প্রকার

১. সুন্নত ইতেকাফ

রমজানের শেষ দশকে ২১ তারিখের রাত অর্থাৎ ২০ তারিখ সূর্যাস্তের আগ থেকে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতেকাফ করা।

যেহেতু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর এ দিনগুলোতে ইতেকাফ করতেন, তাই একে সুন্নত ইতেকাফ বলা হয়।

২. নফল ইতেকাফ

রমজানের শেষ দশকে পূর্ণ দশ দিনের কম ইতেকাফ করা। অথবা বছরের অন্য যেকোনো সময় যতক্ষণ ইচ্ছা, ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা।

৩. ওয়াজিব ইতিকাফ

মান্নতকৃত ইতেকাফ এবং সুন্নত ইতেকাফ ফাসেদ হয়ে গেলে তার কাজা আদায় করাকে ওয়াজিব ইতেকাফ বলে।

ইতেকাফের স্থান

সওয়াবের দিক থেকে ইতেকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হল মসজিদে হারাম। এরপর মসজিদে নববী। তারপর মসজিদে আকসা। এরপর যেকোনো জামে মসজিদ। তারপর যেকোনো পাঞ্জেগানা মসজিদ।

তবে নারীদের জন্য ইতেকাফের স্থান হলো ঘরের নির্দিষ্ট কোনো স্থান। ( সূত্র : শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪৭০, মাবসূত, সারাখসী ৩/১১৫, বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮০-২৮১, রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৯)

ইতেকাফের ফজিলত

ইতেকাফের মাধ্যমে নবীজির নিয়মিত একটি আমল অনুসরণ করা হয়। যেহেতু তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ইতেকাফ করতেন। আরেকটি বড় লাভ হলো মসজিদে ইতেকাফের সময় আপনি যদি কোনো আমল নাও করেন, মসজিদে অবস্থান করার সওয়াব আপনার আমলনামায় লেখা হতেই থাকবে।

তাছাড়া ইতেকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর লাভ করার সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর লাভের আশায় একবার রমজানের প্রথম দশ দিন ইতেকাফ করেন। এরপর কয়েকবার ইতেকাফ করেন মাঝের দশ দিন। এরপর একসময় শেষ দশ দিন ইতেকাফ করতে শুরু করেন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করো।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২০

ইতেকাফে করণীয় ও বর্জনীয়

ইতেকাফ অবস্থায় যথাসম্ভব আমলের মধ্যে থাকতে হবে। বেশি বেশি নফল নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। অন্যান্য জিকির করতে পারেন। ইস্তেগফার করতে পারেন। তওবা করবেন। রোনাজারি করে নিজের করা গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন যেন গুনাহমুক্ত হয়ে বাঁচতে পারেন আল্লাহর কাছে সেই তাওফিক চাইবেন।

মনে রাখতে হবে মসজিদ আল্লাহর ঘর, এখানে এমন কোনো কাজ করা যাবে না যা বেয়াদবির শামিল হয়। মসজিদে অহেতুক কোনো কথাবার্তা বলা যাবে না। দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার মসজিদে খাওয়া যাবে না। ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদে বায়ুত্যাগ করা যাবে না। মসজিদে ঘুমানোর সময় কাপড় বা বিছানা ছাড়া ঘুমানো যাবে না।