হিজরী নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের হুকুম

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন হচ্ছে— হিজরী নববর্ষ পালনের বর্তমান প্রচলিত যে পদ্ধতি, তা কতটুকু শরীয়তসম্মত।

বেলায়েত হুসাইন

ইদানিং বিশেষত, তরুণ মুসলিমদের মধ্যে হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ব্যাপক প্রচলন দেখা যাচ্ছে। মহানবী সা:-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ করে তারা এ শুভেচ্ছা আদান-প্রদান করেন।

সারাবিশ্বে খ্রিস্ট্রীয় নতুন বছর যেভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়, তার বিপরীতে হিজরী নববর্ষ পালন ও এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের মাত্রাও প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন হচ্ছে— হিজরী নববর্ষ পালনের বর্তমান প্রচলিত যে পদ্ধতি, তা কতটুকু শরীয়তসম্মত। মানে এটি পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ সমর্থিত কি না এবং আলেমরা এ বিষয়ে কী বলছেন?

প্রথমত, হিজরী নববর্ষ পালন ও এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। একদল আলেমের অভিমত হলো— নতুন মাস কিংবা বছর অথবা বরকতপূর্ণ সময়ের (যেমন- রমজান মাস ইত্যাদি) আগমনে শুভেচ্ছা বিনিময় জায়েজ, এটি বিদআত নয়।

এর বিপরীতে আরেকদল আলেম বলছেন, নতুন বছরে এভাবে শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের বিষয়টি শরিয়ত সমর্থন করে না। কারণ, এটি পূর্ববর্তী সালাফদের থেকে প্রামাণিত নয়। আর এটি জায়েজ হওয়ার শরঈ কোনো দলীলও নেই; উল্টো এরূপ উদযাপন ও শুভেচ্ছা জানানো কখনো কখনো অমুসলিমদের সাথে মিলে যায়।

আরব বিশ্বের বরেণ্য আলেম শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহ:-এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন বছরে শুভেচ্ছা জানানোর রীতি পূর্ববর্তী সালাফদের থেকে আসেনি এবং একইসাথে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহতেও এর সমর্থনে কিছু পাইনি। তবে কেউ যদি তোমাকে ‘কুল্লু আ-মিন, ওয়াআনতুম বিখাইর’ (সারাবছর তুমি ভালো থেকো) ইত্যাদি বাক্য দ্বারা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানায়, তাহলে এর প্রতিউত্তরেও তুমি এরকম বাক্য বলতে পারো। আর এটির (শুভেচ্ছা জানানোর এই রীতি) শুরু কবে থেকে, সেটি সম্পর্কে আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে সংক্ষেপে কিন্তু বেশ চমৎকার উত্তর দিয়েছে জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া আল্লামা ইউসুফ বানুরী টাউন করাচি (পাকিস্তানের প্রখ্যাত দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান)। এ সম্পর্কিত তাদের একটি ফতোয়ায় বলা হয়েছে, নতুন বছরের সূচনাতে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি ইসলামে সাব্যস্ত নেই। তবে, ইবাদত ও জরুরি মনে না করে কেউ যদি শুভেচ্ছা বিনিময় এবং কল্যাণের দোয়া করে, তাহলে তাতে সমস্যা নেই।

ফতোয়াটিতে আরো বলা হয়েছে, তবে নতুন চাঁদ দেখে বিশেষ একটি দোয়া পড়ার বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেহেতু হিজরী নতুন বছরের শুরুতেও নতুন চাঁদ উদিত হয়, তাই এ সময়ও দোয়াটি পড়া যায়। দোয়াটি হলো— (উচ্চারণ) ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহূ আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বী ওয়া রাব্বুকাল্লাহু।’ অর্থ: হে আল্লাহ, এ নতুন চাঁদ নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে উদয় করো। (হে চাঁদ,) আমার রব ও তোমার রব এক আল্লাহ। বাংলাদেশী আলেমদের কাছেও এই মতটি বেশি গ্রহণযোগ্য।